দেশজুড়ে

বিপদ হলেই হাজির গরিবের বন্ধু সুমন রাফি

পুরো নাম মো. হেদায়েতুর রাফি সুমন। সবার কাছে পরিচিত সুমন রাফি নামে। বয়স ৩৩ বছর। কারো কাছে তিনি একজন তরুণ সমাজসেবী, কারো কাছে অসহায় মানুষের বন্ধু। আবার অনেকেই তাকে বলেন গরিবের বন্ধু। সমাজের গরিব, অসহায়, দুস্থ, বিপদগ্রস্ত, পঙ্গু, প্রতিবন্ধী থেকে শুরু করে সকল শ্রেণি পেশার মানুষদের সাধ্যমতো সাহায্য-সহযোগিতা ও সেবা করাই যেন সুমন রাফির কাজ।

Advertisement

কোনো মানুষের বিপদের কথা শুনলে সবার আগে হাজির সুমন রাফি। এখন অনেক কিছুই যেন নির্ভর করে তার উপর। দীর্ঘদিন তিনি মানবতার সেবায় এসব কাজ করছেন একেবারেই বিনাস্বার্থে। সকল ভালো কাজে অংশ নেওয়াটা তার যেন একমাত্র ব্রত। আর এভাবেই তিনি অনেকটা নীরবে নিভৃতে হাজার হাজার ভালো কাজে অংশ নিয়েছেন।

ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার পৌর সদরের ছোলনা গ্রামের বাসিন্দা ও ঐতিহ্যবাহী জর্জ একাডেমির অবসরপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক মো. শওকত হোসেন মিয়ার (শওকত মাস্টার) ছেলে সুমন রাফি। মা রাবেয়া বেগম একজন গৃহিণী। বোন শারমিন সুলতানা রিতা সবার বড়। আমেরিকার সিটিজেন। বড় ভাই হায়াতুর রাফি নয়ন একজন স্বর্ণ ব্যাবসায়ী। রাজধানীর বায়তুল মোকাররমের দ্বিতীয় তলায় রোজা জুয়েলার্স নামে ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করেন তারা দুই ভাই। এখনও সুমন অবিবাহিত। এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আয়ের তার অর্থ থেকে নিজের মৌলিক চাহিদা পূরণ করে বাকি সবটুকু মানব কল্যাণে ব্যয় করেন সুমন।

এলাকাবাসী জানান, ছোটবেলা থেকেই সুমন সমাজ ও মানুষের কল্যাণে জড়িত। প্রায় দশ বছর ধরে পুরোপুরিভাবে মানুষের কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন। বোয়ালমারীতে সমাজসেবা মূলক এমন কোনো কাজ নেই যেখানে সুমনের অংশগ্রহণ নেই। অসহায় মানুষের বাড়িতে খাবার পৌঁছে দেওয়া, রোগীকে রক্ত দেওয়া, অসহায় মানুষের মাঝে ঈদ উপহার, মসজিদ নির্মাণে সহযোগিতা, বিভিন্ন স্থানে-প্রতিষ্ঠানে গাছ লাগানো, গরিবের মাঝে কম্বল ও মাংস বিতরণ, দুস্থ মানুষদের সঙ্গে নিয়ে চিকিৎসা করানো, ঘর নির্মাণ, যুবকদের ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ, প্রতিবন্ধী-মানসিক রোগীদের সঙ্গে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বই প্রদান, পাখিদের নীড়ের ব্যবস্থা, পশু-পাখিদের খাবার দেওয়া। হারানো শিশুদের উদ্ধারে সহায়তা, পঙ্গুদের মাঝে হুইল চেয়ার বিতরণসহ বিভিন্ন ধরনের কাজে তার অংশগ্রহণের দৃষ্টান্ত রয়েছে। আর এ সবকিছুই তার নিজ অর্থায়নে ও নিজ উদ্যোগে করা।

Advertisement

বোয়ালমারী ব্লাড ব্যাংক, ক্ষুদার্থদের আর্তচিৎকারসহ বেশ কয়েকটি সামাজিক সংগঠনে রয়েছে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

এ বিষয়ে সুমন রাফি জাগো নিউজকে বলেন, বোয়ালমারী ও আশপাশের এলাকায় অসহায় অবহেলিত মানুষের অনেক কিছুই যেন নির্ভর করে আমার ওপর। যেমন ওষুধ, চাল, শিক্ষা খরচ, কাপড় অর্থাৎ মৌলিক চাহিদাগুলো। যা প্রতিদিন সাধ্যমতো সাহায্য সহযোগিতা করে থাকি।

তিনি আরও বলেন, আমার লক্ষ্য মানবতার কল্যাণে কাজ করা। কোন দলমত, পদ-পদবীতে আমার লোভ নেই। রাজনীতি কিংবা জনপ্রতিনিধি হওয়ারও কোনো ইচ্ছা নেই। আমি মানুষকে দেখানোর জন্যও এসব করি না। ইচ্ছা শক্তি থাকলে আর মন মানসিকতা ভালো থাকলে যার যার স্থান থেকেই সমাজ ও অসহায় মানুষের জন্য অনেক কিছুই করা সম্ভব। আমি যা করে থাকি তা আমার নিজের উদ্যোগে ও নিজের অর্থায়নে। তবে আমার পরিবার আমাকে এ কাজে সাহায্য ও প্রেরণা দিয়ে থাকে।

তিনি বলেন, অনেক সময় এই কাজ করতে গিয়ে জীবনের ঝুঁকি এসেছে। তবু পিছু ফিরিনি। যেমন সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধ, পুলিশের চাঁদাবাজি বন্ধ, অসহায় মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল বন্ধ।

Advertisement

উপজেলার ময়না ইউনিয়নের চরবর্নী পশ্চিম পাড়া গ্রামের মো. নুরুল ইসলামের ছেলে মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় দীর্ঘ প্রায় একযুগের বেশি শিকলবন্দী জীবন যাপন করেন। প্রথমে তার সন্ধান পান সুমন রাফি। তিনি রবিউল ও তার পরিবারের পাশে দাঁড়ান। বিষয়টি ব্যাপক আলোচিত হয়। গণমাধ্যমে ফলাও করে খবর প্রকাশিত হয়। প্রশাসনের সহায়তায় তাকে পাবনা মানসিক হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার পর এখন সে অনেকটা সুস্থ। এরকম আরো প্রায় তিন চারটি আলোচিত মানবিক ঘটনারও আবিষ্কারক সমাজসেবী সুমন।

মানসিক ভারসাম্যহীন যুবকের বাবা মো. নুরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, এক পর্যায়ে আর্থিক সমস্যার কারণে আমার ছেলের চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যায়, সুমন রাফি খোঁজ পেয়ে আমাদের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করে আর্থিকসহ বিভিন্ন সহযোগিতা করেন। তার চেষ্টার কারণে প্রশাসনের উদ্যোগ ও সহযোগিতায় আমার ছেলেটি আজ অনেকটা সুস্থ। আমি সুমনের জন্য প্রাণ খুলে দোয়া করি। সত্যিই সে একজন ভালো ও মানবিক মানুষ।

বোয়ালমারী শিল্পকলা একাডেমির সদস্য ও সাংস্কৃতিক কর্মী আমীর চারু বাবলু জাগো নিউজকে বলেন, যতদূর জানি সুমন রাফি একজন ভালো ছেলে। একবাক্যে বলা যায় তার জায়গা থেকে ব্যক্তি উদ্যোগে সেবা করার বিষয়টি সমাজের একটি দৃষ্টান্ত।

এ বিষয়ে বোয়ালমারী পৌরসভার ছোলনা গ্রামের বাসিন্দা ও ফরিদপুর জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শেখ সেলিমুজ্জামান রুকু জাগো নিউজকে বলেন, অসহায়দের পাশে দাঁড়িয়ে আর্থিক সাহায্য সহযোগিতার পাশাপাশি সমাজের অনেক ভালো কাজের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন সুমন রাফি।

এ ব্যাপারে শেখর কাজী সিরাজুল ইসলাম উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও সংবাদকর্মী কাজী আমিনুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, প্রতিদিন প্রতিনিয়ত অসহায় মানুষের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছেন সুমন। অসংখ্য অবহেলিত মানুষদের বিভিন্নভাবে সাহায্য সহযোগিতা করার মধ্য দিয়ে তার ভালো কাজের দৃষ্টান্ত ফুটে উঠেছে। তার মতো সমাজের অন্য তরুণদেরও অসহায়দের পাশে থাকা উচিত।

সোসাইটি ডেভেলপমেন্ট কমিটির (এসডিসি) সহকারী পরিচালক, কবি ও সাহিত্যিক কাজী হাসান ফিরোজ জাগো নিউজকে বলেন, সুমন রাফি তরুণ সমাজ কর্মী হিসেবে সমাজের অসহায় মানুষের পাশে থেকে কাজ করছেন। দীর্ঘদিন সমাজের ভালো কাজের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। যা মানুষের জন্য সমাজ ও দেশের জন্য কল্যাণকর। তার ভালো কাজের প্রতি অনুপ্রাণিত হয়ে অনেক যুবক বিভিন্ন সেবামূলক কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন। তাকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাই। সুযোগ পেলে তার ভালো কাজের সহোযোগিতার চেষ্টা থাকবে।

এ প্রসঙ্গে বোয়ালমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এম মোশাররফ হোসেন মুশা মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, সুমন রাফি একজন তরুণ সমাজকর্মী। তার মতো করে যুবসমাজের অন্যরা যদি গরিব, অসহায়দের পাশে দাঁড়ায় তাহলে মানুষের দুঃখ-কষ্ট লাঘবের পাশাপাশি দেশ ও দশের অনেক উপকার হবে। তার সকল ভালো কাজের জন্য সাধুবাদ জানাই। তার সকল ভালো কাজের সহোযোগিতারও আশ্বাস দেন।

এফএ/এমএস