মধ্য এশিয়ার অন্য দেশগুলোর তুলনায় বহুদিন ধরেই অনেক বেশি স্থিতিশীল ছিল কাজাখস্তান। কিন্তু সেই পরিস্থিতি এখন আর নেই। দেশব্যাপী বিক্ষোভ-সহিংসতার আগুন জ্বলছে। মারা গেছে দেড়শ’র বেশি মানুষ। শান্তি ফেরাতে ডাকতে হয়েছে বিদেশি বাহিনীও। গত ৩০ বছরে দেশটি এমন সহিংসতা আর দেখেনি। কাজাখস্তানে হঠাৎ শুরু হওয়া এই অস্থিরতায় শুধু দেশটির অর্থনীতিই নয়, বড় ঝুঁকিতে পড়েছে আন্তর্জাতিক জ্বালানি বাজারও।
Advertisement
গত দুই দশকে খনিজসমৃদ্ধ কাজাখস্তানের অর্থনীতি কয়েকগুণ বড় হয়েছে। শেভরন, টোটাল এনার্জির মতো বিশ্বখ্যাত সংস্থাগুলো থেকে বিপুল বিনিয়োগ পেয়েছে তারা। বিশ্বের শীর্ষ ইউরেনিয়াম রপ্তানিকারকের পাশাপাশি জ্বালানি তেল ও গ্যাস উৎপাদনেও অন্যতম নাম কাজাখস্তান। কিন্তু সাম্প্রতিক বিক্ষোভ এবং পরবর্তী পরিস্থিতিতে দেশটিতে যে সামাজিক-রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, এতে তাদের ওপর বিনিয়োগকারীদের ভরসা কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে।
অবশ্য মধ্য এশিয়ার অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ টিমোথি অ্যাশ মনে করছেন, অশান্ত পরিস্থিতিতে ক্ষমতা যে প্রশাসনের হাতেই থাক না কেন, কাজাখস্তানের মতো ‘সোনার ডিম পাড়া হাঁসে’ প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ কেউই বন্ধ করতে চাইবে না। তার বিশ্বাস, কাজাখস্তানের অর্থনৈতিক গুরুত্ব মাথায় রেখে পশ্চিমা দেশগুলো চলমান সংকট সমাধানে আরও বাস্তবসম্মত পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারে।
বিশ্বের ৪০ শতাংশের বেশি ইউরেনিয়াম উৎপাদন হয় কাজাখস্তানে। পারমাণবিক চুল্লির প্রধান জ্বালানি হওয়ায় এই ধাতুটি শক্তিধর দেশগুলোর কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আবার অনেক দেশ কার্বনমুক্ত পরিবেশ গড়ার পরিকল্পনার অংশ হিসেবেও জীবাশ্ম জ্বালানির বদলে পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের দিকে ঝুঁকেছে। তাদের কাছেও ইউরেনিয়ামের চাহিদা রয়েছে।
Advertisement
বিশ্বের অন্যতম ইউরেনিয়াম উৎপাদক কাজাটমপ্রাম জানিয়েছে, কাজাখস্তানে অস্থিরতায় উৎপাদনে সমস্যা না হলেও ইউরেনিয়ামের দাম বেড়ে গেছে।
কাজাখস্তান তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর জোট ওপেকেরও অন্যতম সদস্য। এই খাতে ১৯৯১ সাল থেকে বিপুল বিদেশি বিনিয়োগ পাচ্ছে তারা। ২০১৮ সালে কয়লা ও অপরিশোধিত তেল উৎপাদনে বিশ্বের মধ্যে নয় নম্বরে ছিল দেশটি। প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনে ছিল ১২ নম্বরে। কাজাখস্তানের বার্ষিক তেল উৎপাদনের প্রায় ৮০ শতাংশই যায় ইউরোপীয় ইউনিয়নে।
অর্থনীতিবিদরা জানিয়েছেন, কাজাখস্তানের পরিস্থিতি কয়লা উৎপাদনে তেমন প্রভাব ফেলেনি। কিন্তু দাম বেড়ে যেতে পারে যেকোনো সময়। সবমিলিয়ে গোটা বিশ্বের নজর এখন সাবেক সোভিয়েত দেশটির ওপর।
সূত্র: ডয়েচে ভেলে
Advertisement
কেএএ/এমএস