দেশজুড়ে

সন্ধ্যার বুকে বেদে পল্লীতে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ

প্রতিবন্ধকতার অভাব নেই চারপাশে। তবে এও সত্য, সঙ্কট, হতাশা ও দুঃসংবাদের মধ্যেও দেশে নানা প্রান্তের সাধারণ মানুষের আলোর পথের যাত্রা থেমে নেই।  মানুষ মানুষের জন্য, কথাগুলো কেবল গানে আর মুখরোচক শ্লোগানের মধ্যেই বেশিরভাগ সময় সীমাবদ্ধ থাকে। কখনো কখনো সমাজের কিছু কিছু মানুষ তাদের কর্মকাণ্ডে এর যথার্থ প্রতিফলন ঘটাতে পারেন। কেউ কেউ আর্থিক সঙ্গতি দিয়ে আবার অনেকে নিজ উদ্যোগে মানুষের জন্য কল্যাণকর অবদান রাখার চেষ্টা করেন। সততা, সাহস ও উদ্যোগ নিয়ে এমনই এক অনন্য দৃষ্টান্ত পিরোজপুর জেলার কাউখালী উপজেলার শিক্ষানুরাগী আ. লতিফ খসরু। পিরোজপুরের কাউখালীতে সন্ধ্যা নদীর বুকে উপজেলার চিরাপাড়া খালের মোহনায় জেগে ওঠা চরে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার করিয়া ও গোয়ালিমান্ধা গ্রাম থেকে ৩০টি বেদে পরিবার জীবন জীবিকার তাগিদে নৌকায় এসে ডাঙ্গায় ঝুপড়ি ঘর বেধে অবস্থান নেন। প্রায় এক সপ্তাহ পূর্বে আসা এই বেদে পল্লীতে হতদরিদ্র সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত শিশুদের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করলেন প্রতিবন্ধী স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষানুরাগী আ. লতিফ খসরু। মঙ্গলবার সকালে ওই বেদে পল্লীতে গিয়ে শিক্ষা উপকরণ (বই, খাতা ও পেন্সিল) বিতরণের মধ্য দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেন। বেদে পল্লীর বেদে নারীরা জীবিকা নির্বাহের জন্য সাত সকালে ঘর থেকে বের হয়ে সন্ধ্যায় ফিরে আসেন পল্লীতে। রেখে যাওয়া শিশুদের দেখভাল করেন শিশুদের বাবারা। এক স্থান থেকে অন্যস্থানে জীবিকা নির্বাহের জন্য ছুটে চলেন বেদেরা। ফলে বেদে শিশুদের লেখাপড়া করার সুযোগ হয় না। তাই তাদের মধ্যে শিক্ষার আলো জ্বালিয়ে দেয়ার জন্য উদ্যোগ নিলেন বরিশাল বিভাগের শ্রেষ্ঠ বিদ্যোৎসাহী শিক্ষানুরাগী আ. লতিফ খসরু। এলাকার মানুষের কাছে তিনি একজন শিক্ষা উদ্যোক্তা বা আলোকিত মানুষ হিসেবে পরিচিত। যেসব শিশুদের হাতে বই, খাতা, পেন্সিল তুলে দেয়া হয় ও শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নেয় তারা হলো জোনাইলের মেয়ে সাফিয়া (৮), তাহেরের ছেলে নেয়ামত (৭), বেদে পল্লীর সর্দার মনির হোসেনের মেয়ে রাকিবা (৭),  আসলামের তিন ছেলে থান ওয়ারী (৫), লাল্টু (৭), বাঘা (৮), কামরুলের ছেলে মো. রবি (৮), সাদ্দামের মেয়ে শিমু (৯), হিরনের ছেলে নিরব (৮), লেবু মিয়ার ছেলে হালিম (৮), তৌহিদের ছেল জান্নাতুল (৮), জিয়াদের ছেলে মোদাফ্ফের (৯), ইয়াখানের ছেলে সজীব (৮), আউয়ালের ছেলে সরু (১০), রিয়াজের ছেলে সোহান খান (৮), মাহবুবের ছেলে নাঈম খান (৮), সুজন খানের মেয়ে কোহিনুর (৯), আসলামের ছেলে শেখ রাসেল (৮), শিরাম খানের ছেলে ইয়াছিন (৮),  মাজহারের মেয়ে জোনাকী (৯), মিজানুরের মেয়ে রুপা (৮), ইসমাইলের মেয়ে সোনালী (১০), শহীদুলের ছেলে রাজীব (৯), তুহিন আহম্মেদের ছেলে আতিকুল (৭), রেজাউলের মেয়ে টুনি (৯), মোল্লা সরকারের ছেলে মিজানুর (৮) এইসব শিশুরা বই, খাতা, পেন্সিল পেয়ে আনন্দে উল্লাস করে। এ ব্যাপারে কাউখালী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুব্রত রায় জাগো নিউজকে বলেন, আ. লতিফ খসরুর উদ্যোগের কথা শুনেছি। তার এ মহৎ উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তার মতো এই ধরনের মহৎ কাজে সমাজের অন্যসব মানুষ এগিয়ে এলে হতদরিদ্র ছিন্নমূল শিশুরা কিছুটা হলেও শিক্ষার আলো দেখতে পাবে বলে আমি মনে করি।কাউখালী প্রতিবন্ধী স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষা উদ্যোক্তা আ. লতিফ খসরু জাগো নিউজকে বলেন, প্রতিবন্ধী স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি শিক্ষা থেকে বঞ্চিত ছিন্নমূল শিশু এবং ভাসমান বেদে পল্লীর শিশুদের শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেয়ার জন্য আমার এ উদ্যোগ। তিনি আরও বলেন, বেদেদের স্থায়ী কোনো ঠিকানা না থাকায় ও বেদেরা স্থায়ীভাবে কোথাও বসবাস করে না। তাই তাদের শিশু সন্তানদের নিয়মিত যাওয়া হয় না বিদ্যালয়ে। এসব চিন্তা করে আমার এ উদ্যোগ। কোনো কিছু চাওয়া ও পাওয়ার জন্য আমি এ কাজটি করিনি। নিজের এক গভীর দায়বদ্ধতা থেকে এই কাজটি করেছি। বেদে পল্লীর সর্দার মনির হোসেন উজ্জল জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের সন্তানদের যখন কেউ খোঁজ-খবর নিচ্ছিলেন না, ঠিক তখনই আমাদের খোঁজ-খবর নিলেন এবং শিক্ষা থেকে বঞ্চিত আমাদের শিশুদের হাতে তুলে দিলেন বই, খাতা, পেন্সিল। আমরা সকলে খুশি ও খসরু ভাইয়ের প্রতি কৃতজ্ঞ।এমজেড/পিআর

Advertisement