ধর্ম

ভয় ও মৃত্যু সম্পর্কে কোরআনের নির্দেশ কী?

কোরআনুল কারিমে মহান আল্লাহ ঈমানদারদের উদ্দেশ্য করে দুটি নির্দেশ দিয়েছেন। প্রথমটি হলো আল্লাহকে ভয় করার নির্দেশ আর দ্বিতীয়টি হলো- মুসলিম হওয়া ছাড়া মৃত্যুবরণ না করার নির্দেশ। কী আশ্চর্যজনক ব্যাপার! আল্লাহ তাআলা এ দুটি নির্দেশ ঈমানদারদের লক্ষ্য করে দিয়েছেন। তাহলে কি ঈমানদাররা আল্লাহকে ভয় করে না? আবার তারা কি মুসলিম নয়?

Advertisement

আগের কয়েকটি আয়াতে আল্লাহ তাআলা ঈমানদারদের এ মর্মে সতর্ক করেছিলেন যে, আহলে কিতাব তথা ইয়াহুদি-খ্রিস্টান ও অন্যান্য লোক মুসলমানদের পথভ্রষ্ট করতে চায়। মুসলমানরা যেন সজ্ঞানে তাদের এ পথভ্রষ্টতা থেকে আত্মরক্ষা করতে পারে সে কারণে মহান আল্লাহ এ আয়াতে একটি বিশেষ মূলনীতি ঘোষণা করেছেন। আর তাহলো- তাকওয়া তথা আল্লাহকে ভয় করা। আল্লাহ তাআলা ঈমানদারদের উদ্দেশ্যে ঘোষণা করেন-یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰهَ حَقَّ تُقٰتِهٖ وَ لَا تَمُوۡتُنَّ اِلَّا وَ اَنۡتُمۡ مُّسۡلِمُوۡنَ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহকে যথাযথভাবে ভয় করো এবং তোমরা (মুসলিম) আত্মসমর্পণকারী না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১০২)

আল্লাহকে যথাযথভাবে ভয় করার মর্মার্থ কী?আল্লাহকে ভয় করার মতো ভয় করার অর্থ হলো- ইসলামের যাবতীয় বিধান কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা অনুযায়ী যথাযথভাবে মেনে চলা। ইসলামের আবশ্যক কাজগুলো সম্পূর্ণভাবে পালন করা। আর যত নিষিদ্ধ বস্তু আছে, তা থেকে বিরত থাকা। এমনকি ইসলামে নিষিদ্ধ কাজগুলোর ধারে-কাছেও না যাওয়া।’

আল্লাহ তাআলা যখন এ আয়াত নাজিল করেন, তখন সাহাবায়ে কেরাম সবচেয়ে বেশি বিচলিত হয়ে পড়েন। তখন মহান আল্লাহ আয়াত নাজিল করেন এভাবে আশ্বস্ত করেন যে-فَاتَّقُوا اللهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ‘তোমরা তোমাদের সাধ্যমত আল্লাহকে ভয় কর।’তবে এই আয়াত কোনোভাবই আগের আয়াতের হুকুমকে রহিতকারী নয়; বরং আল্লাহকে তাঁর বিধান পালনে যথাযথভাবেই ভয় করতে হবে। এ আয়াতটি নাজিল করে পেরেশানি হালকা করা হয়েছে। সুতরাং ফাতহুল কাদিরে এ আয়াতের অর্থ এভাবে করার কথা এসেছে-اتَّقُوا اللهَ حَقَّ تُقَاتِهِ مَاسْتَطَعْتُمْ ‘আল্লাহকে সে ভাবেই ভয় কর, যেভাবে স্বীয় সাধ্যমত তাঁকে ভয় করা উচিত।’ (আহসানুল বয়ান)

Advertisement

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, আল্লাহর ভয় অর্জনের হক যথাযথ আদায় করা। আল্লাহকে সেভাবে ভয় করা; যেভাবে ভয় করা আল্লাহর হক। আল্লাহকে ভয় করার হক হলো-‘প্রত্যেক কাজে আল্লাহর আনুগত্য করা, আনুগত্যের বিপরীতে কোনো কাজ না করা, আল্লাহকে সর্বদা স্মরণে রাখা। কখনো ভুলে না হওয়া এবং সব সময় আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। কোনো কাজে অকৃতজ্ঞ না হওয়া।’ (ইবনে কাছির)

মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ না করাআয়াতের দ্বিতীয়াংশে আল্লাহর নির্দেশ হলো- ‘আর তোমরা মুসলিম (পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণকারী) না হয়ে কোনো অবস্থায় মৃত্যুবরণ করো না।’এ নির্দেশ থেকে তাকওয়ার বিষয়টি সুস্পষ্ট যে-‘পূর্ণ ইসলামই প্রকৃতপক্ষে তাকওয়া। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা ও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পূর্ণ আনুগত্য করা এবং তাঁর অবাধ্যতা থেকে বেঁচে থাকার নামই হচ্ছে তাকওয়া অবলম্বন।তাই আয়াতের শেষে মুসলিম না হয়ে যেন কারও মৃত্যু না হয়; তার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। আয়াতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, তোমাদের মৃত্যু ইসলামের উপরই হতে হবে। ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো অবস্থায় মৃত্যু আসা উচিত নয়। তাহলে প্রশ্ন আসতে পারে যে- মৃত্যু কি কারো ইচ্ছাধীন?

না মৃত্যু কারোরই ইচ্ছাধীন নয়। যে কোনো সময়, যে কোনো অবস্থায় মৃত্যু আসতে পারে। তাই আয়াতের নির্দেশ সম্পর্কে হাদিসে এসেছে-

‘তোমরা যে অবস্থায় জীবন অতিবাহিত করবে, সে অবস্থায়ই মৃত্যু আসবে এবং যে অবস্থায় মৃত্যু হবে সে অবস্থায়ই হাশরের ময়দানে সমবেত হবে।’

Advertisement

সুতরাং যে ব্যক্তি ইসলামের উপর জীবন অতিবাহিত করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ এবং সাধ্যমতো ইসলামের আদেশ-নিষেধ অনুসারে কাজ করে; আল্লাহর ইচ্ছায় তার মৃত্যু ইসলামের ওপরই হবে।

মনে রাখতে হবেদুনিয়াতে প্রত্যেক ঈমানদারের অবস্থান হবে আশা-নিরাশার মধ্যে। সে একদিকে যেমন আল্লাহর রহমতের কথা স্মরণ করে নাজাতের আশা করবে; অপরদিকে আল্লাহর শাস্তির কথা স্মরণ করে জাহান্নামে যাওয়ার ভয় করবে। কিন্তু মৃত্যুর সময় আল্লাহ তাআলা সম্পর্কে তাকে সুধারণা নিয়েই মরতে হবে। তাইতো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-‘তোমাদের কেউ যেন আল্লাহ সম্পর্কে সুধারণা করা ছাড়া মারা না যায়।’ (মুসলিম) অর্থাৎ মৃত্যুর সময় তার আশা থাকবে যে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করবেন।’

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কোরআনের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী আল্লাহকে ভয় করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহকে ভয় করার মাধ্যমে মুসলিম হয়ে মৃত্যুবরণ করার তাওফিক দান করুন। পরকালের মুক্তি ও সফলতা দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এমএস