ধর্ম

জান্নাতে যারা সম্মানিত হবেন

আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমের সুরা মাআরিজে ঘোষণা করেন- ‘তারাই সম্মানিত হবে জান্নাতে’। এই ‘তারা’র বর্ণনা এসেছে আগে ৩টি আয়াতে। আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে জান্নাতিদের বিশেষ গুণগুলো তুলে ধরেছেন। জান্নাতে সম্মানিত হওয়ার বিশেষ গুণগুলো কী?

Advertisement

কোরআনুল কারিমের ৭০তম সুরা ‘সুরা মাআরিজ’। আল্লাহ তাআলা এ সুরার ৩২-৩৫ আয়াতে জান্নাতি ব্যক্তিদের বিশেষ গুণ ও প্রাপ্তির কথা সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। তাহলো-

১. আমানত ও ওয়াদা রক্ষাকারী

وَ الَّذِیۡنَ هُمۡ لِاَمٰنٰتِهِمۡ وَ عَهۡدِهِمۡ رٰعُوۡنَ

Advertisement

‘আর যারা তাদের (মানুষের) আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে।’ (সুরা মাআরিজ : আয়াত ৩২)

তারাই জান্নাতে সম্মানিত হবে; যাদের কাছে মানুষের যেসব আমানত থাকে, তাতে তারা খেয়ানত করে না। আর লোকদের সঙ্গে তারা যে অঙ্গীকার করে, তা ভঙ্গ করে না, বরং তা পালন ও পূরণ করে। (তাফসিরে আহসানুল বয়ান)

আমানত শুধু সে অর্থকেই বলে না যা কেউ কারো কাছে গচ্ছিত রাখে; বরং ইসলামে যেসব কাজ পালন করা আবশ্যক; সেসব ফরজ কাজের সবই আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার প্রতি আমানত। আর তা যথাযথভাবে পালন না করা বা ত্রুটি করা খিয়ানত। এতে নামাজ, রোজা, হজ, জাকাতসহ অন্যান্য অধিকারগুলোও আল্লাহর পক্ষ থেকে আমানত। আর তা যথাযথ আদায় না করা খিয়ানতের অন্তর্ভূক্ত।

অনুরূপভাবে عهدهم বা চুক্তি ও প্রতিশ্রুতি মানে বান্দা আল্লাহর সঙ্গে যে চুক্তি বা প্রতিশ্রুতিতে আবদ্ধ হয় এবং মানুষ পরস্পরের সঙ্গে যেসব চুক্তি ও প্রতিশ্রুতিতে আবদ্ধ হয় এ উভয় প্রকার চুক্তি ও প্রতিশ্রুতি পালন করা। এ উভয় প্রকার আমানত এবং উভয় প্রকার চুক্তি ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা একজন মুমিনের চরিত্রের অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য। এসব আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষাকারীরাই জান্নাতে সম্মানিত হবে।

Advertisement

২. সঠিক ও সত্য সাক্ষ্য দানকারী

وَ الَّذِیۡنَ هُمۡ بِشَهٰدٰتِهِمۡ قَآئِمُوۡنَ

‘আর যারা তাদের সাক্ষ্য দানে অটল।’ (সুরা মাআরিজ : আয়াত ৩৩)

যারা দুনিয়াতে যে কোনো বিষয়ে সত্য ও সঠিক সাক্ষ্য দানে অটল; তারা জান্নাতে সম্মানিত হবেন। যদিও এতে (সঠিক সাক্ষ্যদানে) তার কোনো নিকটাত্মীয় ক্ষতিগ্রস্ত হয় তবুও। এ ছাড়া তারা (কোনো স্বার্থে) সাক্ষ্য গোপনও করে না এবং তাতে কোনো পরিবর্তনও করে না।

সাক্ষ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে তারা তাই সাক্ষ্য দেবে; যা তারা জানে। কোনো প্রকার পরিবর্ধন-পরিমার্জন বা পরিবর্তন ব্যতীত সাক্ষ্য দেয়; আর এ সাক্ষ্য দানের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনই থাকে তার লক্ষ্য। এ ধরনের সাক্ষ্য দানকারীরাই জান্নাতে সম্মানিত হবেন।

৩. যারা নামাজে যত্নবান

وَ الَّذِیۡنَ هُمۡ عَلٰی صَلَاتِهِمۡ یُحَافِظُوۡنَ

‘আর যারা তাদের নিজেদের নামাজে যত্নবান।’ (সুরা মাআরিজ : আয়াত ৩৪)

এ নির্দেশনা থেকে নামাজের গুরুত্ব বুঝা যায়। যে ধরনের উন্নত চরিত্র ও মহৎ কৰ্মশীল লোক জান্নাতের উপযুক্ত তাদের গুণাবলী উল্লেখ করতে গিয়ে নামাজ দিয়ে শুরু করা হয়েছে এবং নামাজ দিয়েই শেষ করা হয়েছে। (ইবনে কাছির)

নামাজে যত্নবান হওয়ার বিষয়টি হলো এমন, তাদের-

প্রথম গুণ হলো : তারা হবে নামাজ আদায়কারী।

দ্বিতীয় গুণ হলো : তারা হবে নামাজের প্রতি নিষ্ঠাবান। আর

সর্বশেষ গুণ হলো : তারা নামাজের সংরক্ষণ করবে। নামাজের সংরক্ষণ মানে হলো, যথা সময়ে নামাজ পড়া, শরীর ও পোশাক-পরিচ্ছন্দ পাক-পবিত্ৰ আছে কিনা নামাজের আগে থেকেই সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া। অজু থাকা এবং অজু করার সময় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো ভালভাবে ধোয়া। নামাজের ফরজ, ওয়াজিব ও মুসতাহাবগুলো যথাযথভাবে আদায় করা। এসব বিষয়ও নামাজের সংরক্ষণের অন্তর্ভুক্ত।

যারা এভাবে নামাজ আদায় করবে কোরআনের ঘোষণা অনুযায়ী তারা জান্নাতে সম্মানিত হবে। এ গুণের অধিকারী ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন-

اُولٰٓئِکَ فِیۡ جَنّٰتٍ مُّکۡرَمُوۡنَ

‘তারাই সম্মানিত হবে জান্নাতসমূহে।’ (সুরা মাআরিজ : আয়াত ৩৫)

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, জান্নাতে সম্মানিত হতে হলে আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা। যখন কোনো বিষয়ে সাক্ষ্য দেওয়ার প্রয়োজন হয়; যথাযথ সাক্ষ্য দেওয়া। আর নামাজের প্রতি যেভাবে যত্নবান হওয়া জরুরি সেভাবে নামাজকে সংরক্ষণ করা। যার বিনিময়ে মহান আল্লাহ সবাইকে দান করবেন জান্নাতে বিশেষ সম্মান ও মর্যাদা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জান্নাতে সর্বোচ্চ মর্যাদা ও সম্মান পেতে কোরআনে ঘোষিত গুণগুলো নিজেদের মধ্যে বাস্তবায়ন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এএসএম