বছর যায় নতুন বছর আসে, অন্য সবকিছুর সঙ্গে পরিবর্তন আসে দ্রব্যমূল্যেও। কিন্তু সেই মূল্য কখনই সাধারণ ক্রেতার জন্য সুখকর হয় না। দ্রব্যমূল্য কমার পরিসংখ্যান বিরল বলা চলে। আর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এ খড়্গ সব সময় চাপে নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্তের ঘাড়ে। যার বোঝা টানতে খেতে হয় হিমশিম। জনগণকে স্বস্তি দিতেই এবার অভিন্ন মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতির মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য সহনশীল রাখার উদ্যোগ নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। দ্রুত এটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ক্রেতাদের স্বস্তি দিতে চান তারা।
Advertisement
মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেহেতু দেশে আমদানি-রপ্তানি নীতি আছে, সেটার আওতায় আইন প্রয়োগ করা হয়। তবে ২০১১ সালের যে ডিস্ট্রিবিউশন আইন আছে সেটির মাধ্যমে তেল ও চিনির মূল্য নির্ধারণ করা হয়। যেহেতু এগুলো আমদানিভিত্তিক পণ্য সেক্ষেত্রে একটি অভিন্ন পদ্ধতিতে মূল্য নির্ধারণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আমদানির মূল্য যাচাই-বাছাই করা হয়। এরপর রিফাইনারি প্রতিষ্ঠানের খরচ ও শুল্ক বাদ দিয়ে তাদের লাভের অংশ রেখে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে নির্ধারণ করা হয় একটি দাম।
এই অভিন্ন মূল্য নির্ধারণ নিয়ে কর্মশালার আয়োজনও করা হয়। সেখানে দায়িত্বে থাকেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য (আইআইটি) অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। তার নেতৃত্বে একটি দল মিলগুলো পরিদর্শন করবে, সেখানে অভিন্ন মূল্যের যে ফরম্যাট সেটি রিভিউ করা হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, তেলের মতো পণ্যে দু-একটি জায়গায় পরিবর্তনের সুযোগ আছে। যেহেতু প্যাকেজিং সিস্টেমটি আধুনিক হয়েছে, সেহেতু বোতলের দাম কিছুটা কমানো সম্ভব বলে মনে করছেন তারা। রিফাইনারি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ খরচ বা প্রসেস লস যেটা নিচ্ছে সেখানেও কাজ করার সুযোগ রয়েছে। যেসব যন্ত্রপাতি দিয়ে রিফাইন করে সেগুলো সবই অত্যাধুনিক, সেটি নিয়েও ভাবা হচ্ছে। এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও কিছু বিশেষজ্ঞ নিয়ে শিগগির অভিন্ন মূল্য পদ্ধতি নির্ধারণ করা হবে। এটি বাস্তবায়ন করা গেলে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে মত তাদের।
Advertisement
সরকার বলছে, টিসিবির পণ্য বিক্রি বাড়ানো ও মনিটরিং জোরদার করায় দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে/ফাইল ছবি
ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে রাখতে পেঁয়াজের শুল্ক ডিসেম্বর পর্যন্ত মওকুফ করা হয়। তবে দাম কিছুটা স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরায় জানুয়ারি থেকে পুনরায় ৫ শতাংশ শুল্ক যুক্ত হয়েছে। শুল্কমুক্ত করায় পেঁয়াজের স্বল্পতা মোকাবিলা করা সম্ভব হয়েছে। এরই মধ্যে নতুন পেঁয়াজ উঠেছে। বিগত সময়ে ভারতে পেঁয়াজের দাম বৃষ্টির কারণে বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের বাজারে পেঁয়াজের কেজি ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হয়। তবে এখন সেটি সহনশীল অবস্থায় ফিরেছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য (আইআইটি) অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, ডিস্ট্রিবিউশন আইন ২০১১ এর মাধ্যমে তেল ও চিনির মূল্য নির্ধারণ করা হয়। আমদানিনির্ভর পণ্য হওয়ায় একটি অভিন্ন পদ্ধতিতে মূল্য নির্ধারণের রিফাইনারি প্রতিষ্ঠানের খরচ ও শুল্ক বাদ দিয়ে তাদের লাভের অংশ রেখে পাইকারি এবং খুচরা পর্যায়ে একটি দাম নির্ধারণ করা হয়।
তিনি বলেন, আমাকে এ অভিন্ন মূল্য পদ্ধতি নিয়ে কাজ করার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমরা মিলগুলো পরিদর্শন করবো, সেখানে অভিন্ন মূল্যের যে ফরম্যাট সেটি রিভিউ করবো। তেলের মতো পণ্যে দু-একটি জায়গায় পরিবর্তনের সুযোগ আছে। এটি বাস্তবায়ন করা গেলে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসবে। আগামী বছর পেঁয়াজের ক্ষেত্রে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ চলছে। ২৫ লাখ টন পেঁয়াজের বাৎসরিক চাহিদা। কৃষি মন্ত্রণালয়ের উৎপাদন কীভাবে বাড়ানো যায় সেজন্য বেশকিছু পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। বিশেষ করে যে এলাকায় পেঁয়াজ হয়, বিশেষ করে বৃহত্তর ফরিদপুর, পাবনার কথা বললে সেখানে কৃষকদের বিশেষভাবে আর্থিক সাপোর্ট দিচ্ছে। এছাড়া বীজের স্বল্পতা নিয়ে কাজ করছে। পেঁয়াজ চাষ ও উৎপাদনশীলতা কীভাবে বাড়ানো যায় সেটি নিয়েও কাজ চলছে। পেঁয়াজের একটি সামার ভ্যারাইটি নিয়েও কাজ হচ্ছে।
Advertisement
সচিব বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সব সময় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। আমার বিভাগের নামই হচ্ছে আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য (আইআইটি) অনুবিভাগ। দ্রব্যমূল্য ও বাজার নিয়ন্ত্রণের মূল কাজই আমাদের এখানে। সে অনুযায়ী আমাদের যে পরিকল্পনা আছে তার সঙ্গে আরও কিছু মন্ত্রণালয় যুক্ত আছে। বিশেষ করে চালের ক্ষেত্রে খাদ্য মন্ত্রণালয় রেসপনসিবল, এছাড়া উৎপাদনকারী কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও কাজ করছি। সবজি অথবা কাঁচামরিচের কথা যদি বলি এটা উৎপাদন করে কৃষকরা, এর দেখভাল করে কৃষি মন্ত্রণালয়, আমরা তাদের সঙ্গেও কাজ করছি আমাদের সাপ্লাই চেইনের বিভিন্ন জায়গায় মাঝে মধ্যে সমস্যা হয়। যেমন- হঠাৎ করে অতিবর্ষণের ফলে দাম আপ-ডাউন হয়। পরিবহনের ক্ষেত্রে অনেক সময় ফেরিগুলো হয়তো প্রয়োজন অনুযায়ী পায় না বা কোনো কারণে সংকট দেখা দেয়। তাই পরিবহন সংকট নিয়েও আমরা কাজ করছি। এরপরও অনেক ক্ষেত্রে আমরা কনজারভেটিভ থাকি। দেশের কৃষকরা যাতে মূল্য পায়, তাদের উৎপাদন খরচ পায় সেজন্য বর্ডারে হয়তো নিষেধাজ্ঞা জারি করি না কিন্তু অন্যভাবে বিধিনিষেধ আরোপ করি।
করোনায় টিসিবির ট্রাক সেল কার্যক্রম থেকে পণ্য কিনেছেন নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্তরা/ফাইল ছবি
‘অনেক সময় মরিচ বা পেঁয়াজের ক্ষেত্রে ফরমালি রেসট্রিকশন নেই, কিন্তু রেসট্রিকশন আরোপ করি এজন্য যে ভারতীয় পেঁয়াজ যখন বেশি হয় তাদের পেঁয়াজ যদি ঢুকে যায় তাহলে আমাদের কৃষকরা দাম পায় না। এগুলো অনেক ক্ষেত্রে আমরা অ্যাডজাস্ট করি। আমরা ভিন্ন সোর্সিং করছি। একসময় পেঁয়াজের জন্য শুধু ভারতের ওপর নির্ভরশীলতা ছিল, আমরা কিন্তু এখন বিকল্প সোর্স ঠিক করেছি। আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে কথা বলেছি, সেখানে বর্ডারে সমস্যা ছিল, সেটা নিয়ে আলোচনা করেছি। মিয়ানমারের পেঁয়াজটা ঢুকলে আমাদের ভারতের পেঁয়াজের ওপর যে নির্ভরশীলতা সেটি কিছুটা ডাইভার্ট হচ্ছে। টিসিবির জন্য যে পণ্য কিনছি সেটি কিন্তু টার্কি (তুরস্ক) থেকে। ৬০ হাজার টন পেঁয়াজ কেনার ফলে কিন্তু এখানকার পেঁয়াজের যে পরিমাণ সেটার সঙ্গে যোগ হয়েছে। আমরা কিন্তু লোকাল সোর্স থেকে এটি নিচ্ছি না। এভাবে অনেকগুলো পলিসি নিয়ে আমরা কাজ করছি। ওমিক্রনের সংক্রমণ আমরা লক্ষ্য করছি, আমার মনে হয় দ্রব্যমূল্যটা বিগত বছরের তুলনায় আরেকটু সাশ্রয়ের চেষ্টা করবো, সেটা নিয়েই কাজ করছি।’
মনিটরিং করা জোরদারবাজার মনিটরিংয়ের ক্ষেত্রে ভোক্তা অধিকার সারাদেশে বাজার পর্যবেক্ষণ করছে, আর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ঢাকা মহানগরীতে যৌথ টিম প্রতিদিন কাজ করছে। মনিটরিংয়ের মাধ্যমে বাজারে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে এসব টিম কাজ করছে, সামনে এই মনিটরিং আরও বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
বাজার মনিটরিংয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, পণ্যগুলো বিভিন্নভাবে হাত বদল হয়। যারা উৎপাদক তাদের কাছ থেকে আড়তে আসে কিংবা পাইকারি ও খুচরা মার্কেটে আসে। খুচরা মার্কেটের মধ্যেও ভিন্ন ক্যাটাগরি আছে। তৃণমূল পর্যায়ে যেসব দোকান তারা প্রতিটি ধাপে ধাপে পণ্যের দাম বাড়ায়। সেক্ষেত্রে মনিটরিং টিম তৃণমূল পর্যায়ে এটার দাম কত এবং প্রতিটি হাত বদল যৌক্তিক পর্যায়ে লাভ করেছে কি না সে বিষয়ে নজরদারি রাখে। যেটা স্থানীয় পণ্য সেটার ওপর এই নজরদারি রাখা যায় না। কিন্তু আমদানি করা পণ্যের ক্ষেত্রে সেই দামটি খুব সহজে পাওয়া যায়। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংক যখন এলসি করে আনে তখন প্রতি এক মাসের এলসির গড় মূল্য বিশ্লেষণ করে রিফাইন খরচ ও অন্যান্য খরচ বিশ্লেষণ করেই দামটা নির্ধারণ করা হয়। সবশেষ তেলের দাম ১৬০ টাকা লিটার করা হয়েছে খুচরা পর্যায়ে। কিন্তু এটি ১৫২ থেকে ১৫৮ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। একইভাবে চিনিটাও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।
করোনায় স্বল্প আয়ের মানুষের কাছে অন্যতম ভরসাস্থল হয়ে দাঁড়িয়েছে টিসিবি/ফাইল ছবি
এদিকে তেল ও চিনির ৯৫ শতাংশ আমদানিনির্ভর। সেই পণ্যগুলো ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা থেকে বেশি আনা হয়। তেলের মধ্যে কিছু পামঅয়েল মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়া থেকে সোর্স করা হয়। এই দেশগুলো কোভিডের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেই প্রভাব পড়েছে তেলের দামে। যেহেতু আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়েছে, সঙ্গে চার্জও অনেক বেশি পড়েছে। ৭০০ ডলারের তেল এখন ১ হাজার ৪০০ ডলারে বিক্রি হচ্ছে। সেক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবে দেশের বাজারে দামে প্রভাব পড়ছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, টিসিবি মূলত বৃহৎ আকারে কিছু পণ্য সরবরাহ করে। বছরব্যাপী বিশেষ করে গত দুই রোজায় টিসিবি তাদের অপারেশন দ্বিগুণ করেছে, সেটি এখনো অব্যাহত আছে। যেহেতু আগামী এপ্রিলে রোজা শুরু হবে, সে কারণে সেটির প্রস্তুতি আছে। টিসিবি পণ্য কেনে, এরপর স্বল্পমূল্যে ট্রাক সেলের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়। মার্কেট ঠিক রাখতে এই উদ্যোগটি নেওয়া হয়। এছাড়া জানুয়ারি থেকে টিসিবির অপারেশন আরও বাড়ানো হবে। সবশেষ রোজায় ৫০০ ট্রাকে টিসিবির অপারেশন পরিচালনা করা হয়। এবার এটি বাড়িয়ে ৬০০ থেকে ৭০০ ট্রাক থাকবে। এর বাইরে মনিটরিং সিস্টেম আরও বাড়ানো হবে। প্রতি সাতদিন পর পর মন্ত্রণালয় অ্যানালাইসিস মিটিং করে এবং সেখানে দাম সমন্বয় করা হয়।
সংরক্ষণ পদ্ধতিদেশে পেঁয়াজের চাহিদা ২৫ লাখ মেট্রিক টন হলেও উৎপাদন হচ্ছে ২৮ লাখ মেট্রিক টন। এরপরও ছয়-সাত লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। যেহেতু কিছু পেঁয়াজ সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়। মার্চ মাসে যে মূল পেঁয়াজ ওঠে সেটা যাতে আরও সাত-আট মাস সংরক্ষণ করা হয়, সেজন্য কোল্ড স্টোরেজ হচ্ছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, পেঁয়াজসহ যেসব পণ্য সংরক্ষণ প্রয়োজন সেজন্য প্রস্তুতিগুলো মন্ত্রণালয়ের আছে। যতক্ষণে সরবরাহ ঠিক না রাখা যাবে ততক্ষণ দাম বেড়ে যাবে। কঠোর লকডাউনের সময় দ্রব্যমূল্যে আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়লেও দ্রব্যমূল্য অস্থিতিশীল অবস্থায় ছিল সেটি বলা যাবে না। আন্তর্জাতিক বাজার এখন কিছুটা অসঙ্গতিপূর্ণ, সেটিও বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দামের সঙ্গে স্থানীয় বাজারে দামের ব্যবধান থেকে যায়। কারণ স্থানীয় যে দামে মার্কেটে পাওয়া যাচ্ছে সেটা কেনাকাটা করতে হয় আরও দুই মাস আগে থেকে। সেক্ষেত্রে হঠাৎ করে দাম বেড়ে গেলে কিংবা কমে গেলে সেটার প্রভাব তাৎক্ষণিক বাজারে পড়ে না। এটা নিয়েও কাজ করা হচ্ছে। তবে সংরক্ষণ পদ্ধতিকেও সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এটি করা গেলে সংকট ও পরনির্ভরশীলতা কিছুটা কমবে।
টিসিবির কার্যক্রম জোরদারকরোনা মহামারির মধ্যে সবচেয়ে সংকটময় সময় পার করেছে নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্তরা। এসময় তাদের ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্য। ফলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির মতো সমস্যা থেকে কিছুটা হলেও সমাধান পেয়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, চলতি বছর টিসিবির পণ্য বিক্রি বাড়ানো ও মনিটরিং জোরদার করায় দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়ায় দেশের দুর্যোগের এসময়ে নিত্যপণ্য সাধারণ মানুষের জন্য যৌক্তিক মূল্যে বিক্রি করা সম্ভব হয়। ভবিষ্যতে টিসিবির মাধ্যমে আরও পণ্য বিক্রি বাড়াতে নানা উদ্যোগ নিতে পরিকল্পনা করছে সরকার।
টিসিবির কর্মকর্তারা বলছেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে টিসিবি একটি বড় ভূমিকা রাখে। বাজার মনিটরিং, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য যেগুলো আছে সেগুলোর ডিমান্ড মেনটেইন করার বিষয়টি রয়েছে, এক্ষেত্রে সাপ্লাই চেইনে টিসিবি ভূমিকা রাখে। কোনোকিছুর সংকট হলে টিসিবি আমদানি করে বা লোকাল মার্কেট থেকে সংগ্রহ করে সরবরাহ করা হয়। তবে ক্যাপাসিটি বাড়ানোর মাধ্যমে আরও বৃহৎ আকারে কাজগুলো করতে চান তারা। এরই মধ্যে এই কার্যক্রমগুলো হাতে নিয়েছে টিসিবি। তারা যথেষ্ট পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি করায় পিছু হটতে বাধ্য হয় দাম বাড়ানোর সঙ্গে যুক্ত সিন্ডিকেট।
রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা স্বল্প আয়ের মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে টিসিবির পণ্য সংগ্রহ করে/ফাইল ছবি
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের স্টক বাড়ানো প্রয়োজন। সেজন্য নিজস্ব গোডাউন বাড়িয়ে মজুত বাড়াতে কাজ করছি। আমরা নতুন তিনটি গোডাউনের কাজ এ মাসেই শুরু করবো। আরও কিছু জায়গায় আমাদের জমি অধিগ্রহণের কাজ প্রক্রিয়াধীন। এগুলো অধিগ্রহণ হলে সব জায়গায় নিজস্ব গোডাউন করে ফেলব। আমরা একটি প্রস্তাব রেডি করছি। বিভিন্ন সংস্থা থেকে আমাদের এক্সিসটিং যে গোডাউনগুলো ভাড়া নেওয়া আছে, সেসব সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে আমাদের গোডাউনের সংখ্যা বাড়ালে মজুত ক্ষমতা বাড়ে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের ক্রয় গত বছরের তুলনায় দু-তিনগুণ বাড়ানো হয়েছে। ক্যাপাসিটি বাড়াতে হবে। চলতি বছর এর পরিমাণ বেড়ে যাবে। সাধারণ রমজানকেন্দ্রিক বাড়তি বিক্রি হলেও করোনার সময় মাসে ১২ দিন টিসিবির ট্রাকে বিক্রি হতো। এখন মাসে ২৪-২৫ দিন বিক্রি করছি। সেখানে বিক্রির পরিমাণ বেড়ে গেছে। আমরা নিয়মিত বিক্রির ক্ষেত্রে ৪০০ ট্রাক টার্গেট করে এগোচ্ছি, আমাদের ক্রয় প্রক্রিয়া ঠিক তাকলে এই ৪০০ ট্রাক করে বিক্রি করতে পারবো। দেখা যায় কেনাকাটা অনেক সময় কমপ্লিট হয় না, এবার রমজানেও আগের থেকে বেশি বাড়াবো। আগে রমজানে ৫০০ ট্রাকের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতো এবার আমরা ৬০০ থেকে ৭০০ ট্রাকে পণ্য বিক্রি করবো।
আইএইচআর/এমআরআর/এএ/জিকেএস