স্বাস্থ্য

এক সপ্তাহে করোনা শনাক্ত বেড়েছে ১২৫ শতাংশ

মহামারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা লাগামহীনভাবে বাড়ছে। এ বছরের প্রথম দিন (১ জানুয়ারি) ৩৭০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়। সেদিন সংক্রমণের হার ছিল ২ দশমিক ৪৩ শতাংশ। মাত্র ৯ দিনের ব্যবধানে নতুন রোগী শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৩১ জনে। শনাক্তের হার ৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ।

Advertisement

রোগীর হিসাবে ৬ গুণ এবং শনাক্তের হার হিসেবে সাড়ে তিনগুণ বেড়েছে। সংক্রমণের লাগাম টেনে ধরতে সরকার আগামী ১৩ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) থেকে সারাদেশে বিধিনিষেধ জারি করেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে করোনা শনাক্তে নমুনা পরীক্ষা, নতুন রোগী শনাক্ত ও মৃত্যু- সব সূচকই বেড়েছে। কমেছে করোনা থেকে সুস্থ হওয়া রোগীর সংখ্যা।

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২১ সালের এপিডেমিওলজিক্যাল ৫২তম সপ্তাহের (২৭ ডিসেম্বর থেকে ২ জানুয়ারি) তুলনায় নতুন বছরের এপিডেমিওলজিক্যাল প্রথম সপ্তাহে (৩-৯ জানুয়ারি) নমুনা পরীক্ষা ৯ দশমিক ৯ শতাংশ, নতুন রোগী শনাক্ত ১২৫ দশমিক ১ শতাংশ, মৃত্যু ৪৭ দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে সুস্থ হওয়া রোগীর সংখ্যা ৩৬ দশমিক ৭ শতাংশ কমেছে।

Advertisement

এপিডেমিওলজিক্যাল ৫২তম সপ্তাহে মোট ১ লাখ ৩২ হাজার ৮০৭টি নমুনা পরীক্ষা, ৩ হাজার ২১৩ জন নতুন রোগী শনাক্ত এবং ১৭ জনের মৃত্যু হয়। অন্যদিকে করোনা আক্রান্ত রোগী সুস্থ হন ২ হাজার ১৩০ জন। পরবর্তী সপ্তাহে অর্থাৎ ২০২২ সালের এপিডেমিওলজিক্যাল প্রথম সপ্তাহে (৩-৯ জানুয়ারি) মোট ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯৬৩টি নমুনা পরীক্ষা, ৭ হাজার ২৩৪ জন নতুন রোগী শনাক্ত এবং ২৫ জনের মৃত্যু হয়। অন্যদিকে করোনা থেকে সুস্থ হওয়া রোগীর সংখ্যা কমে ১ হাজার ৩৪৮ জনে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ৩ জন রোগীর মৃত্যু হয়। একই সময়ে ২৬ হাজার ১৪৩টি নমুনা পরীক্ষায় ২ হাজার ২৩১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ হিসাবে শনাক্তের হার ৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ।

সোমবার (১০ জানুয়ারি) স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

এদিকে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় বিধিনিষেধ জারি করেছে সরকার।

Advertisement

এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাব ও দেশে করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্ত, দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখা এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আগামী ১৩ জানুয়ারি হতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সার্বিক কার্যাবলি/চলাচলে নিম্নবর্ণিত বিধিনিষেধ আরোপ করা হলো:

বিধিনিষেধের আওতায় ১৩ জানুয়ারি থেকে যা করা যাবে, যা যাবে না

১. দোকান, শপিংমল ও বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা এবং হোটেল-রেস্তোরাঁসহ জনসমাগমস্থলে বাধ্যতামূলকভাবে সবাইকে মাস্ক পরিধান করতে হবে। অন্যথায় আইনানুগ শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।

২. অফিস-আদালতসহ ঘরের বাইরে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে ব্যত্যয় রোধে সারাদেশে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে হবে।

৩. রেস্তোরাঁয় বসে খাবার গ্রহণ এবং আবাসিক হোটেলে থাকার জন্য অবশ্যই করোনা টিকা সনদ প্রদর্শন করতে হবে।

৪. ১২ বছরের ঊর্ধ্বের সব ছাত্র-ছাত্রীকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্ধারিত তারিখের পরে টিকা সনদ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না।

৫. স্থলবন্দর, সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দরসমূহে স্ক্রিনিংয়ের সংখ্যা বাড়াতে হবে। পোর্টসমূহে ক্রুদের জাহাজের বাইরে আসার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে। স্থলবন্দরগুলোতেও আগত ট্রাকের সঙ্গে শুধু ড্রাইভার থাকতে পারবে। কোনো সহকারী আসতে পারবে না। বিদেশগামীদের সঙ্গে আসা দর্শার্থীদের বিমানবন্দরে প্রবেশ বন্ধ করতে হবে।

৬. ট্রেন, বাস এবং লঞ্চে সক্ষমতার অর্ধেক সংখ্যক যাত্রী নেওয়া যাবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কার্যকারিতার তারিখসহ সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা জারি করবে। সর্বপ্রকার যানের চালক ও সহকারীদের আবশ্যিকভাবে কোভিড-১৯ টিকা সনদধারী হতে হবে।

৭. বিদেশ থেকে আগত যাত্রীসহ সবাইকে বাধ্যতামূলক কোভিড-১৯ টিকা সনদ প্রদর্শন ও র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করতে হবে।

৮. স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন এবং মাস্ক পরিধানের বিষয়ে সব মসজিদে জুমার নামাজের খুতবায় ইমামরা সংশ্লিষ্টদের সচেতন করবেন। জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা এ বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।

৯. সর্বসাধারণের করোনার টিকা এবং বুস্টার ডোজ গ্রহণ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় প্রচার এবং উদ্যোগ নেবে। এক্ষেত্রে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সহায়তা নেবে।

১০. কোভিড আক্রান্তের হার ক্রমবর্ধমান হওয়ায় উন্মুক্ত স্থানে সর্বপ্রকার সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং সমাবেশসমূহ পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখতে হবে।

১১. কোনো এলাকায় ক্ষেত্রেবিশেষ কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে সেক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নিতে পারবে।

এই বিধিনিষেধ কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে।

এমইউ/এমএইচআর/এএসএম