চরম আর্থিক সংকট কাটাতে এবার চীনের কাছে সহায়তা চাইলো শ্রীলঙ্কা। বেইজিংয়ের কাছে বিপুল অংকের ঋণের কিস্তি পুনর্বিবেচনা এবং আমদানি ব্যয় মেটাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আরও আর্থিক সহযোগিতা চেয়েছে কলম্বো। গত রোববার (৯ ডিসেম্বর) শ্রীলঙ্কা সফররত চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই’র কাছে এই অনুরোধ জানিয়েছেন লঙ্কান প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। খবর অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের।
Advertisement
চীনা অতিথিকে লঙ্কান প্রেসিডেন্ট বলেছেন, করোনাভাইরাস মহামারিতে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকটের সমাধান হিসেবে ঋণ পরিশোধ পুনর্বিবেচনা করলে তা শ্রীলঙ্কাকে বড় স্বস্তি দেবে।
রাজাপাকসের দপ্তর থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে আরও বলা হয়, লঙ্কান প্রেসিডেন্ট চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে পণ্য আমদানির জন্য রেয়াতি ঋণ সুবিধা চেয়েছেন, যেন দেশটির শিল্পগুলো নির্বিঘ্নে কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে। এছাড়া, নিরাপদ এয়ার বাবল চালুর মাধ্যমে চীনা পর্যটকদের শ্রীলঙ্কা ভ্রমণে সহায়তার জন্যেও অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
পরে ইয়াং ই এবং শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে কলম্বোর বন্দর শহর পরিদর্শন করেন। সেখানে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৬৫ বছরপূর্তি উপলক্ষে ৬৫টি নৌকা উদ্বোধন করেন তারা।
Advertisement
এসময় রাখা বক্তব্যে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অনিয়ন্ত্রিত করোনা মহামারি অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারকে কঠিন করে তুলেছে। এ অবস্থায় দুই দেশকে অবশ্যই আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে হবে। তবে চীন কীভাবে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে কাজ করবে বা লেনদেন বাড়াবে তা পরিষ্কার করেননি চীনের প্রভাবশালী এ মন্ত্রী।
শ্রীলঙ্কা সম্প্রতি তাদের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে পড়েছে। দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে মাত্র ১৬০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। আমদানি ব্যয় মেটাতে পর্যাপ্ত অর্থ নেই সরকারের হাতে। আবার ২০২২ সালেই ৭০০ কোটি ডলারের বেশি ঋণের কিস্তির বোঝা রয়েছে লঙ্কানদের ঘাড়ে, যার মধ্যে জানুয়ারিতে বন্ড পরিশোধ রয়েছে ৫০ কোটি ডলারের এবং জুলাইতে রয়েছে আরও ১০০ কোটি।
শ্রীলঙ্কার এমন অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের পেছনে আংশিক দায়ী করা হয় চীনা ঋণে তৈরি অলাভজনক বিশাল কিছু অবকাঠামো প্রকল্পকে। লঙ্কান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে, তাদের ঘাড়ে চীনা ঋণের পরিমাণ অন্তত ৩৩৮ কোটি ডলার। তবে এর মধ্যে রাষ্ট্রয়াত্ত ব্যবসাগুলো অন্তর্ভুক্ত নেই। ধারণা করা হয়, সেখানেও চীনের মোটা বিনিয়োগ রয়েছে।
পয়েন্ট পেদ্রো ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্টের প্রধান গবেষক মুতুকৃষ্ণ সর্বনান্থন বলেন, বলা যেতে পারে, আমরা এখন দেউলিয়া। নেট বৈদেশিক সম্পদ লাল হয়ে যাওয়ার মানে, আপনি কার্যত দেউলিয়াই।
Advertisement
এমন সংকটের মুখে শ্রীলঙ্কায় নিত্যপণ্যের চরম ঘাটতি দেখা দিয়েছে। দুধ, গ্যাস, কেরোসিন কিনতে দোকানগুলোর সামনে মানুষের লম্বা লাইন দেখা গেছে। পণ্যের দামও বাড়ছে অস্বাভাবিক গতিতে। লঙ্কান কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, দেশটিতে মাত্র এক মাসের ব্যবধানে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে গত ডিসেম্বরে ১২ দশমিক ১ শতাংশে পৌঁছেছে। একই সময়ে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে অন্তত ২২ শতাংশ।
কিন্তু বৈদেশিক মুদ্রা ঘাটতির কারণে আমদানিকারকরা বিদেশ থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আনতেও পারছেন না। ফলে দেশটি ঘুরেফিরে আবারও সেই ‘বিদেশি ঋণের ফাঁদে’ পড়তে যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
কেএএ/এএসএম