দেশজুড়ে

রাজশাহীতে নারীর প্রতি সহিংসতা ও আত্মহত্যার ঘটনা বাড়ছে

রাজশাহীতে নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়েছে। নাগরিক জটিলতার কারণে আত্মহত্যা ও আত্মহত্যার চেষ্টা অন্যান্য নির্যাতনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। ২০১৪ সালে রাজশাহী জেলায় ১৯৩ জন নারী বিভিন্ন সহিংসতার শিকার হলেও ২০১৫ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০১ জনে। এ বছর বিভিন্ন থানার তুলনায় শহরে বেশি নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। সর্বাধিক নারী আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে এ বছরে। আত্মহত্যা ও আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনা ঘটে ৫১টি। এরপরই রয়েছে যৌন হয়রানীর ২৫টি ঘটনা। অ্যাসোসিয়েশন ফর কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট-এসিডির ডকুমেন্টেশন সেল কর্তৃক গৃহীত জরিপে এ সকল তথ্য পাওয়া গেছে। ২০১৫ সালে রাজশাহী জেলার ৯টি উপজেলা ও শহরের চারটি থানায় বছরব্যাপী পরিচালিত জরিপের বরাত দিয়ে এসিডি জানায়, গত বছর ২১ জন নারী হত্যা ও ১৬ জন হত্যাচেষ্টার শিকার হয়েছেন। এছাড়া আরও সাতজন নারীর রহস্যজনক মৃত্যু ঘটেছে। গত বছর মহানগরীতে ৩টি আলোচিত ঘটনা ঘটেছে যা রহস্যজনক মৃত্যু বলে নথিবদ্ধ হলেও যথেষ্ট প্রমাণের অভাবে তাকে হত্যা বলে সনাক্ত করা যায়নি। মহানগরীর সাগরপাড়া বটতলা এলাকায় পশ্চিম রেলওয়ের প্রকৌশলীর স্ত্রী স্মৃতি লেখা দাসের আকস্মিক মৃত্যু যথেষ্ট রহস্যের জন্ম দেয়। তথ্যানুসন্ধানে পাওয়া যায়, স্মৃতি লেখার পরিবার এবং প্রতিবেশীরা অভিযোগ করেন যে, তার স্বামী তাপস দাস প্রায়শই স্ত্রীর উপর শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন চালাতেন। এমনকি মারা যাওয়ার পরে স্বাভাবিক মৃত্যু দেখিয়ে মরদেহ নিয়ে বাগেরহাটের পথে রওনা দেন। পরে পুলিশ মরদেহ ফিরিয়ে নিয়ে এনে ময়নাতদন্তের উদ্যোগ নেয়। এদিকে, মহানগরীর আমবাগান এলাকায় অষ্টাদশী গৃহবধূ মেহতাজ পারভীন মৌ এর মৃত্যু নিয়েও পরিবার হত্যার অভিযোগ আনে। তানোরে আদিবাসী বৃদ্ধাকে চিকিৎসার নামে হত্যার ঘটনাটি আধুনিকতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে। ষাটোর্ধ্ব আদিবাসী নারী ফুলমনির মাথা ব্যাথা ও জ্বর ভালো না হওয়ায় চিকিৎসার জন্য ফাদারের কাছে গেলে ফাদার তার উপর থেকে অশুভ শক্তি তাড়ানোর নামে শিষ্যদের দিয়ে ফুলমনির উপর চরম শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করেন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার নামে ডাক্তার কর্তৃক, সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর কর্তৃক নারীর শ্লীলতাহানীর ঘটনার অভিযোগ উঠেছে।  গত বছর ধর্ষণ ও ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনা ঘটে ২১টি। অপহরণের ঘটনা তিনটির তথ্য পাওয়া যায়। ২০১৫ সালে রাজশাহী মহানগরীতে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে ১৭টি আর আত্মহত্যা চেষ্টা হয় ২টি। এছাড়া বাগমারা ও দুর্গাপুরে ছয়টি করে, পুঠিয়ায় পাঁচটি, পবায় চারটি, বাঘায় তিনটি, চারঘাট, গোদাগাড়ী ও তানোরে দুটি করে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। ২০১৪ সালে মোট আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে ৩৪টি। পরের বছর তা বেড়ে হয়েছে ৪৭টি। তবে আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনা কমেছে। আত্মহত্যার কারণ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বাকবিতণ্ডা, পারিবারিক কলহ, স্বামী কর্তৃক নির্যাতন, খারাপ আচরণ প্রাপ্তি, নতুন জামা না পাওয়া, পছন্দমতো টিভি চ্যানেল দেখতে না পাওয়া, লটারিতে পুরস্কার না পাওয়ায় স্বামী কর্তৃক শারীরিক নির্যাতনসহ বিভিন্ন কারণে আত্মহত্যা করেছেন ১৩ জন নারী। অন্যদিকে, শুধুমাত্র পেটে ব্যাথার কারণে জেলায় এ বছর আটজন নারীর আত্মহত্যার খবর পাওয়া যায়। তাদের অধিকাংশই চিকিৎসা বঞ্চিত যৌনবাহিত অসুখের রোগী। এ ঘটনা নিম্নবিত্তদের মাঝে চিকিৎসার সহজ প্রাপ্তিতা না থাকার বিষয়ে ইঙ্গিত করে। পাঁচজন নারীকে আত্মহত্যার পর মানসিক ভারসাম্যহীন বলে দাবি করা হয়েছে। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, তাদের মধ্যে অধিকাংশই যৌতুকের জন্য শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। সমাজে এখনো যৌতুকের জন্য নির্যাতন বিদ্যমান রয়েছে। এ বছর অন্তত ৯ জন নারীকে যৌতুকের কারণে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হবার তথ্য পাওয়া গিয়েছে। গোদাগাড়ীতে যৌতুকের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় বিয়ের আসর থেকে বর ফিরে যাবার ঘটনা ঘটেছে। বছর জুড়ে গৃহ পরিচারিকা নির্যাতনের তথ্য পাওয়া গিয়েছে।শাহরিয়ার অনতু/এমজেড/এমএস

Advertisement