স্বাস্থ্য

দুই বছরেও অভ্যাস বদলায়নি: থুতনি ও গলায় ঝুলছে মাস্ক!

করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওক্রিমনের মারাত্মক সংক্রমণ সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। ভয়াবহ সংক্রমণে ইউরোপ ও আমেরিকার মতো উন্নত দেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। হাসপাতালসহ স্বাস্থ্যসেবার সব উপকরণের ওপর চাপ বাড়ছে। ক্রমাগত চাপের মুখে অনেক দেশেই স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে।

Advertisement

বাংলাদেশেও ২১ জন ওমিক্রন আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। স্বাস্থ্য ও রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে করোনা আক্রান্তদের জিনোম সিকোয়েন্সিং করার মতো পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই।

নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনসহ মহামারি করোনাভাইরাস প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি (সঠিক নিয়মে সার্বক্ষণিক মাস্ক পরিধান, ঘন ঘন স্যানিটাইজার বা সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, নির্দিষ্ট সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলা, জনসমাগম বা ভিড় এড়িয়ে চলা ইত্যাদি) মেনে চলা অত্যাবশ্যক হলেও গত দুই বছরেও সঠিক নিয়মে মাস্ক পরার অভ্যাস সাধারণ মানুষের মধ্যে গড়ে ওঠেনি।

সর্বশেষ গত দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে করোনা শনাক্তে নমুনা পরীক্ষায় রোগী শনাক্তের হার ২ শতাংশ বা তার চেয়ে কম থাকলেও চলতি বছরের শুরু থেকে করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকে।

Advertisement

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ১ জানুয়ারি ৩৭০ জনের করোনা শনাক্ত হয়, সংক্রমণের হার ২ দশমিক ৪৩ শতাংশ। ২ জানুয়ারি ৫৫৭ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়, সংক্রমণের হার ২ দশমিক ৯১ শতাংশ। ৩ জানুয়ারি ৬৬৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়, সংক্রমণের হার ৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ। ৪ জানুয়ারি করোনা শনাক্ত হয় ৭৭৫ জনের, সংক্রমণের হার ৩ দশমিক ৯১ শতাংশ। ৫ জানুয়ারি ৮৯২ জনের করোনা শনাক্ত হয়, শনাক্তের হার বৃদ্ধি পেয়ে ৪ দশমিক ২০ শতাংশে পৌঁছায়। ৬ জানুয়ারি ১ হাজার ১৪০ রোগী শনাক্ত হয়, শনাক্তের হার ছিল ৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ। ৭ জানুয়ারি নতুন রোগী শনাক্ত হয় ১ হাজার ১৪৬ জন, এই সময়ে শনাক্তের হার ছিল ৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ। ৮ জানুয়ারি ১ হাজার ১১৬ রোগী শনাক্ত হয়, শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৭৯ শতাংশে দাঁড়ায়। আর সর্বশেষ রোববার (৯ জানুয়ারি) নতুন রোগী হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৪৯১ জন, শনাক্তের হার ৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

গত এক সপ্তাহে করোনা শনাক্ত ১১৫ শতাংশ ও মৃত্যু ১৫ শতাংশ বেড়েছে। করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে মোট কতজন ওমিক্রনে আক্রান্ত তা জানার জন্য নিয়মিত যে সংখ্যক শনাক্তকৃত রোগীর নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং করা প্রয়োজন সে সংখ্যক নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের সুবিধা দেশে নেই। সীমিত সংখ্যক জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ে এ পর্যন্ত ২১ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি এবং বর্তমানে দ্রুতগতিতে করোনা সংক্রমণ ওমিক্রনেই ঘটছে বলে অভিমত স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।

স্বাস্থ্য ও রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা বার বার প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি তথা ব্যক্তিগত শিষ্টাচার মেনে চলার ব্যাপারে গত দুই বছর বিভিন্ন গণমাধ্যমে লেখালেখি ও টকশোতে ঝড় তুলতেও বাস্তবে সবার মধ্যে মাস্ক পরার অভ্যাস গড়ে ওঠেনি।

রোববার (৯ জানুয়ারি) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, কয়েকদিন ধরে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পেলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে এখনও অধিকাংশ মানুষ উদাসীন ও অসচেতন। তবে আগের তুলনায় মাস্কের ব্যবহার বাড়লেও সঠিক নিয়মে অর্থাৎ নাক ও মুখ ঢেকে রাখছেন না। মুখে মাস্ক থাকলেও বেশির ভাগ মানুষের মাস্ক থুতনি ও গলায় ঝুলতে দেখা যায়।

Advertisement

রোববার দুপুর ১টার দিকে রাজধানীর ব্যস্ততম নিউমার্কেট, নীলক্ষেত, আজিমপুর, শাহবাগ এবং এলিফ্যান্ট রোড এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তাঘাটে বিপুল সংখ্যক যানবাহনে হাজার হাজার মানুষ চলাচল করছে। তাদের অধিকাংশের মুখে মাস্ক নেই। যারা মাস্ক পরেছেন তারা আবার সঠিক নিয়মে পরেননি। গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বালাই নেই। অধিকাংশ গণপরিবহনের চালক ও সহকারীর কারও মুখেই মাস্ক নেই। রাস্তাঘাটে যানবাহন নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালনরত ট্রাফিক কনস্টেবলদেরও মুখের নিচে মাস্ক নামিয়ে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়।

এলিফ্যান্ট রোড এলাকার একজন বাসের হেলপারের কাছে মাস্ক কেন পরেনি জানতে চাইলে বলেন, এখন তো করোনা নেই। বাসের যাত্রীরাও মাস্ক পরেন না।

করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন সম্পর্কে জানেন কি না জানতে চাইলে হা করে তাকিয়ে থেকে বলেন, কী জানি, এটা আবার কী!

এমইউ/ইএ/জেআইএম