আজাহার ইসলাম, ইবি
Advertisement
সুন্দরবনের গহীনে ঢুকে পড়েছি। হঠাৎ দেখি হরিণ, বানর সব প্রাণভয়ে দৌড়াচ্ছে। দৌড়ানোর রহস্য উৎঘাটন করতে গিয়ে দেখি এক বাঘ। আমিও প্রাণপণে ছুটতে লাগলাম।
হঠাৎ পায়ের সঙ্গে কিছু একটা বেঁধে পড়ে গেলাম... ঘুম ভেঙে গেল। আতঙ্কভরে উঠে চোখ কচলাতে কচলাতে দেখি সকাল ৭টা বাজে। চোখে যেন সেই স্বপ্ন ভাসছিল। সাথে আতঙ্ক। তবুও কাছ থেকে সুন্দরবন দেখার তৃষ্ণা মেটেনি।
সাংবাদিক আজাহার মাহমুদ ভাই দু’দিন আগেই বলছিলেন সাতক্ষীরা থেকে সুন্দরবন ভ্রমণের কথা। সাতপাঁচ না ভেবে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অচেনা পথে যাত্রা শুরু করলাম একাই। রাতের দিকে পৌঁছালাম শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জে।
Advertisement
বাস থেকে নেমে আজাহার ভাই, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক নাইম ভাই আর বশেমুরবিপ্রবির সাংবাদিক মাহমুদ ভাইয়ের সঙ্গে। কুশলবিনিময় শেষে উদরপূর্তি করে উঠলাম বরসা রিসোর্টে। জানতে পারলাম সকালে আরো দুজন যোগ দেবেন।
সকাল ঘুম থেকে উঠেই দেখি ক্যামেরাম্যান মামুন হাজির। কিছুক্ষণ বাদে মোস্তাফিজ। মোট ৬ জন বেরিয়ে পড়লাম রিসোর্ট থেকে। সকাল ১০ টায় রিসোর্টের পাশে চুনা নদীর কোলঘেঁষা কলবাড়ি মোড়ে নাস্তা সেরে রওনা দিলাম নীলডুমুর খেয়াঘাটের দিকে।
রাস্তার দুই ধারে থাকা অসংখ্য চিংড়ি আর কাঁকড়া ঘেরে চোখ আটকে গেল। ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানেরও ঘের আছে সেখানে। ঘাটে পৌঁছে বন বিভাগ কর্তৃক ‘পাস’ ও দু’জন গার্ড নিয়ে গেলাম খোলপেটুয়া ঘাটে। নোঙর করা নির্ধারিত ইঞ্জিনচালিত নৌকায় উঠতেই নৌকা চলতে লাগলো আপন গতিতে।
ঘণ্টাখানেক চলার পর নৌকা পৌঁছে গেলো কলাগাছি ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্রে। নামতেই অভ্যর্থনা জানালো একদল বানর। হাতে চিপস দেখে একটি বানরের তাড়া খেয়ে চিপস ফেলে দিলাম ভোঁ দৌড়। সামনে একটু এগিয়ে যেতেই হরিণের দেখা। বানর ও বন্য হরিণকে চিপস ও মুড়ি খাওয়ানোর পর উদ্দেশ্য বনের গহীনে প্রবেশ।
Advertisement
সঙ্গে থাকা গার্ড আমাদের পাগমার্ক (বাঘের পায়ের ছাপ) ও খাড়া শ্বাসমূল দেখিয়ে সতর্ক করলেন। তারাই সুন্দরবনের সুন্দরী, গোলপাতা, গরান, গেওয়া, কেওড়া, কাঁকড়া, খলিসাসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ ও ফার্ন চেনালেন।
দেখা মিললো রংবেরঙের কাঁকড়ারও। সেখানকার ওয়াচ টাওয়ার থেকে সুন্দরবনের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করারও সুযোগ হয়েছিল। টাওয়ার থেকে নেমে কাঠের সেতু দিয়ে ঢুকলাম বনের গহীনে।
বনের গহীন থেকে ফিরে পরবর্তী গন্তব্য দোবেকি। মালঞ্চ নদীর বুক চিরে এগিয়ে চলছে নৌকা। মৃদু বাতাস আর মামুনের ক্যামেরার ক্লিকে ক্লিকে নৌকাতেই কাটলো আরো দেড় ঘন্টা। সময় তখন বিকেল। নৌকা থেকে নেমেই দেখি মোবাইলের নেটওয়ার্ক গায়েব।
তবে অবাক হলাম চারদিকে লোনাপানির নদীর মাঝে মিঠা পানির পুকুর দেখে। মিললো হরিণের দেখাও। পুকুরটির আরেকপাশে পড়ে রয়েছে জব্দ হওয়া কয়েকশ’ নৌকা। ফেরার আগে মালঞ্চ রেস্ট হাউজের ফরেস্ট অফিসারের আতিথেয়তায়তা ও দিনশেষে এক কাপ চা প্রশান্তি এনে দিল।
সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়েছে। সারাদিনে বাঘের দেখা মেলেনি কোথাও। সেই আক্ষেপ নিয়েই বেড়িয়ে পড়লাম ফেরার পথে। ফেরার সময় নীলডুমুর খেয়াঘাটে নেমে জানলাম দেওয়ান শাহাদত মামার খাবার হোটেল সেরা। এখানে বেশ কিছু সুস্বাদু মাছ পাওয়া যায় যেগুলো দেশের অন্য কোথাও তেমন দেখা মেলে না।
চিংড়ি, আবাদি, সিলেট মাছ, ভেটকি, ভাঙান, পাসসে, টেংরা, কাইন, বাঁশপাতা, খয়রা, তপস্বে, দাঁতনে, ছোট মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির নদীর মাছ খাওয়ার সুযোগ তো থাকছেই। তবে হরিণের মাংস সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ফিরে আসার আগেই খাবার শেষ। তারা আমাদের রান্না করে দিতে সম্মত হলেন।
রান্নার ফাঁকে তার স্বরোচিত কবিতা মুগ্ধ করলো আমাদের। খাওয়া সেরে রাতে ফিরলাম রিসোর্টে। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে মাহমুদ ভাইসহ রিসোর্টের আশেপাশে চক্কর দিলাম চারপাশে।
এবার ফেরারা পালা। পথে দেখা মিললো শ্যামনগরের ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি। সময় স্বল্পতায় সবজায়গায় যেতে না পারলেও ভ্রমণের স্মৃতি অমলীন হয়ে থাকবে আজীবন।
জেএমএস/এমএস