নাজমুন নাহার সর্বাধিক রাষ্ট্র ভ্রমণকারী প্রথম বাংলাদেশি পতাকাবাহী। ৬ অক্টোবর ২০২১ বিশ্বের ১৫০তম দেশ হিসেবে ‘সাওটোমে অ্যান্ড প্রিন্সিপ’ ভ্রমণের মাধ্যমে এক ঐতিহাসিক মাইলফলক সৃষ্টি করেন। সম্প্রতি তিনি জীবনের জানা-আজানা কথা, বিশ্বভ্রমণের অনুপ্রেরণা ও লক্ষ্য নিয়ে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম-
Advertisement
জাগো নিউজ: ১৫০টি দেশ ভ্রমণ করে আপনি রেকর্ড গড়লেন, দেশে দেশে লাল সবুজের পতাকা ওড়ালেন এ বিষয়ে নিয়ে আপনার অনুভূতি কী?নাজমুন নাহার: দীর্ঘ ২১ বছরে বিশ্বের পথে পথে লাল-সবুজের পতাকা উড়ানো খুবই ভালো লাগার ও চমৎকার অনুভূতি। স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকাতলে আমরা বেড়ে উঠেছি। দীর্ঘ কষ্টের বিনিময়ে ১৫০ দেশে বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা ওড়ানো আমার কাছে একটা বিশাল অর্জন।
এই অর্জন শুধু আমার নয়, পুরো দেশের বলে আমি মনে করি। দেশের পতাকা নিয়ে ভ্রমণে সব সময় চেয়েছি আমার কাজের মধ্যে যেন দেশাত্মবোধ থাকে। সব সময় ভাবতাম মুক্তিযুদ্ধ করিনি, স্বাধীনতার সময় জন্ম হয়নি। তবে কাজের মাধ্যমে যেন দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারি। তা ছাড়া দেশের পতাকা পৃথিবীজুড়ে বহন করা আমার জন্য উচ্ছ্বাসের ছিল।
জাগো নিউজ: আপনার কেন মনে হলো বিশ্বে ভ্রমণে বের হবেন, এর পেছনে কী কোনো ঘটনা আছে?নাজমুন নাহার: আমি ছোটবেলা থেকেই পড়ুয়া স্বভাবের ছিলাম। বইয়ের মধ্যে পৃথিবীকে আবিষ্কার করেছি। আমার দাদা ইসলামিক স্কলারশিপ ছিলেন। তিনি ১৯২৬-১৯৩১ সালের মধ্যে আরবের অনেক জায়গায় ভ্রমণ করেছেন। তার ভ্রমণের গল্পগুলো আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। যা আমার ভেতরে আন্দোলিত ও উচ্ছ্বাসের সৃষ্টি করত।
Advertisement
আরেকটা উৎসাহ ছিল আমার বাবা। তিনি আমাকে পৃথিবীর অনেক জায়গার গল্প শুনাতেন। সেই গল্পগুলো আমার মনের ভেতর গেঁথে যেত। তাছাড়া ম্যাপ নিয়ে অনেক কৌতূহল কাজ করত। ছোটবেলায় ম্যাপ পুরোপুরি মুখস্থ করে ফেলি। ম্যাপ নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করা, কোন দেশের পাশে কোন দেশ ও কয়টা দেশ আছে- এগুলো আমার মধ্যে অনুপ্রেরণার সৃষ্টি করেছে।
এ ছাড়াও আমি স্বপ্ন দেখেছি, আমার স্বপ্ন প্রথমে ২০০০ সালে পূরণ হয়। বাবা আমাকে শিখিয়েছেন চার দেয়ালের মাঝে যেন আবদ্ধ না থাকি। কারণ জীবনটা খুব অল্প সময়ের জন্য। এই অল্প সময়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। যত বাঁধাই আসুক না কেন সবকিছু পেছনে ফেলে নিজের লক্ষ্যে পৌঁছে যেতে হবে। কোনো বাধাই আমাকে থামাতে পারেনি। সব বাধার পাহাড় ডিঙিয়ে একেক করে ১৫০ দেশে ভ্রমণ করেছি।
জাগো নিউজ: ভ্রমণ ব্যয়বহুল, এতো অর্থ কীভাবে জোগাড় করতেন?নাজমুন নাহার: ভ্রমণ অবশ্যই ব্যয়বহুল। আমি তো একদিনে করিনি, দীর্ঘ ২১ বছরের লম্বা জার্নি। প্রথমে ২০০০ সালে বাংলাদেশ গার্ল গাইডস অর্গানাইজেশনের মাধ্যমে ভারতে ভ্রমণ করি। বাংলাদেশের গার্ল স্কাউট ছিলাম ও এটা একটা অ্যাডভেঞ্চার প্রোগ্রাম ছিল। এভাবে এশিয়ার কয়েকটা দেশ ভ্রমণ করি।
তারপর স্কলারশিপ নিয়ে ২০০৬ সালে যখন সুইডেনে পড়াশোনা করতে যাই তখন পড়াশোনার পাশাপাশি পার্টটাইম কাজ করি। কাজের মাধ্যমে কিছু টাকা রেখে দেই এবং সেই টাকা দিয়ে ভ্রমণ করতাম। সবাই পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করে গাড়ি-বাড়ি করেন। কিন্তু আমি আমার উপার্জনের টাকা দিয়ে ভ্রমণ করতাম।
Advertisement
খুব কম খরচে কীভাবে ভ্রমণ করা যায় সেটা গবেষণা করে বের করতাম। জোন ভাগ করে ভ্রমণ করতাম যাতে ১০ বা ১৫ ল্যান্ডলকড্ দেশগুলো একসঙ্গে ঘুরতে পারি। একটা দেশে বিমানে যাওয়ার পর ১০-১৫ দেশ সড়ক পথে ভ্রমণ করতাম। পৃথিবীর বেশীরভাগ দেশই সড়ক পথে ভ্রমণ করেছি।
কম খরচে ভ্রমণ করার জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন পথ, ম্যাপ, শহর, দেশের উপর প্রচুর পড়াশোনা করতাম। তাছাড়া বিভিন্ন দেশের ইয়ুথ হোস্টেলে থেকেছি। যেখানে প্রতিদিনের জন্য ১০ বা ১৫ ডলার দিয়েই থাকা যেত। তাছাড়া কোচসার্ফিং নামে একটা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে খুব সহজে অল্প খরচে বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করা যায়।
এখানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভ্রমণের সময় ভ্রমণকারীদের একজন আরেকজনকে সাহায্য করে থাকে। এরকম ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আফ্রিকার কয়েকটা দেশে ঘুরেছি। এভাবে খুব কম খরচে অল্প করে করে দীর্ঘ ২১ বছরে বিশ্বের এতগুলো দেশ ভ্রমণ করেছি। সবসময় কাজ করার পাশাপাশি ভ্রমণ চালিয়ে যেতাম।
জাগো নিউজ: পৃথিবীর পথে রুদ্ধশ্বাস অভিযাত্রার কিছু অভিজ্ঞতার কথা শুনতে চাই?নাজমুন নাহার: পৃথিবীর পথে পথে আমার অনেক অভিজ্ঞতা আছে। প্রথমে ভারত ভ্রমণের মধ্যে দিয়ে শুরু করেছি। সেখানে ঝরনার পানি দিয়ে গোসল করা, তাবুতে থাকা, পেছনে ব্যাগ নিয়ে ২০ কিলোমিটার হাঁটা, ভোরে ঘুম থেকে ওঠা, ব্যায়াম করা, সবার সঙ্গে রান্না করে খাওয়া ও সব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা- এসব থেকে আমার জীবনের একটা শিক্ষা পাই। তারপর গার্লস গাইডের মাধ্যমে এশিয়ার আরো কয়েকটা দেশ ভ্রমণ করি।
আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ভ্রমণের কথা বলব। কারণ এখানে মানুষ খুব কম ভ্রমণ করেন। সম্প্রতি আফ্রিকার দেশ বুরুন্ডি, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, দক্ষিণ সুদান, নামিবিয়া, এঙ্গোলা, সাওটোমে অ্যান্ড প্রিন্সিপ- এই ৬ দেশ আমি তিন মাসে ভ্রমণ করেছি। দেশগুলো ভ্রমণের সময় অনেক দূর্ঘটনা ও বাঁধা বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়েছে। বুরুন্ডি খুবই ভালো লেগেছে।
ছোট সুন্দর একটা দেশ। মানুষের সংস্কৃতি ভালো লেগেছে। বুরুন্ডির পথে পথে অনেক মানুষের দেখা পেয়েছি। রেস্টুরেন্টে গেলে আশেপাশের লোকজন কথা বলতে ও আপ্যায়ন করতে চাইত। তারা ভ্রমণকারীদের পছন্দ করেন। ওই দেশের সংস্কৃতি মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা হয়েছে। তার সঙ্গে মত বিনিময় ও বিভিন্ন বিষয়ে কথা হয়েছে। সেখানকার মিডিয়া আমাকে নিয়ে নিউজও করেছে।
তারপর কঙ্গোতে গিয়েছি। সেখানে অনেক জায়গা আছে, যেখানে যাওয়া সম্ভব নয়। কঙ্গোর ভাঙা সড়ক, দুপাশে রাস্তা ও জঙ্গল ছিল। কঙ্গোতে ওভিরা নামক প্রদেশে সন্ধ্যার পর বিদুৎ থাকে না। পুরো অঞ্চল অন্ধকার থাকে। ওভিরাতে একটা লেক আছে। লেকের অর্ধেক বুরুন্ডিতে আর বাকী অর্ধেক কঙ্গোতে। আমি লেক উভিরার পাশেই তাবুতে ছিলাম।
সেখানকার মানুষের জীবনযাপন দেখেছি। তারা পাহাড়ের কোলে থাকেন ও খালের পানি বিশুদ্ধ করে পান করেন। তারা মাছের উপর নির্ভরশীল। সেখানে সন্ধ্যার পর আর তেমন মানুষের দেখা পাওয়া যায় না। যাতায়াতের জন্য প্লেন বা লেক দিয়ে বোটের মাধ্যমে যেতে হয়। রাস্তা ভালো করে তৈরি হয়নি। কিন্তু মানুষগুলো খুবই ভালো ও দয়ালু প্রকৃতির।
তারপর দক্ষিণ সুদানে যায়। দক্ষিণ সুদানে বাংলাদেশের আর্মিরা শান্তি রক্ষা মিশনে কাজ করছেন। ওই দেশের জুবা ইউনিভার্সিটির গ্রিন রোকন হলে আমাকে সংবর্ধনা দেন দক্ষিণ সুদানের প্রেস মিনিস্টার, উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট অর্গানাইজেশন, ফার্স্ট নেটওয়ার্কসহ অন্যান্য সব অরগানাইজেশন। দক্ষিণ সুদানে যাওয়ার আগে অনেকে তাদের দেশের ভয়াবহতার কথা বলেছে।
তবে সেখানে গিয়ে আমার তেমন কিছুই মনে হয়নি। যখন প্লেনে ছিলাম তখন আকাশ থেকে তাদের দেশটা একটা গ্রিন ভ্যালি মতো দেখা যাচ্ছিল। এটা দেখতে খুবই চমৎকার লাগছিল। গ্রিন ভ্যালির মধ্যে দিয়ে চিকন সুতার মতো নীল নদ মিশর থেকে সুদানে এসে মিশেছে।
দক্ষিণ সুদানে এমনও জায়গা আছে যেখনে মানুষের গায়ে কাপড় থাকে না। সুদানের লোকেরা ভ্রমণকারীদের অনেক পছন্দ করেন। সেখানে ফেসবুক স্ট্রিট নামে একটি জায়গা আছে। যেখানে কিছু আর্টিস্টদের সঙ্গে দেখা করেছি। ওখানকার মানুষ আর্টে খুবই দক্ষ। শান্তির জন্য ওরা কথা বলে, তারা সবসময় শান্তি চায়।
চিলি রাতাকামা নামে একটা স্থান আছে যেখানে ১০০ বছর বৃষ্টি হয়না। সেখানকার মাটি দেখতে চাঁদের মাটির মতো। সেখানে গেলে স্কিন ফেটে যায়, ব্লাড বের হয় ও ত্বক রুক্ষ হয়ে যায়। এটাকেই পৃথিবীর সবচেয়ে শুষ্ক এলাকা ধরা হয়। বলিভিয়ার মধ্যে মাইলের পর মাইল লবণের খনির উপর দিয়ে গেছি। তার পাশে একটা লেক যার নিচে লবণ উপরে পানি। চারদিকে পুরো নীল রঙের সমাহার। সন্ধ্যায় ব্লু স্কাইটা দেখতে খুব চমৎকার লাগছিল।
দীর্ঘ ভ্রমণের সময় বারবার মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছি। কিরগিস্তানের আলা আরচা পর্বত আরোহণ করে নামার সময় পা পিছলে পড়ে গিয়ে ছোট্ট একটি বুনো গাছের সঙ্গে ঝুলে ছিলাম। পড়ে গেলে হয়তো সেদিনই মৃত্যু হতো। গাছে ঝুলে থাকা অবস্থায় আমাকে দু’জন ছেলে বাঁচিয়েছিলো। তারপর ১৪ হাজার ২০০ ফুট উচ্চতায় পেরুর রেইনবো মাউনটেইনে অভিযাত্রায় সময় শ্বাসকষ্ট হয়েছিল। তারপরও সেখানে উঠতে সক্ষম হয়েছি ও বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়েছি।
২০১৯ সালে যখন মধ্য আমেরিকার দেশ গুয়াতেমালায় যাই তখন ছিনতাইকারী কবলে পড়তে হয়েছে। আমার সামানে ছুরি ধরে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়। তখন পড়ে গিয়ে রক্তাক্ত হই। কিন্তু তারা আমার রক্তাক্ত জখম দেখে ভয়ে ফিরে চলে যায়। তারপর ভাঙ্গা পা নিয়ে ভ্রমণ করা শুরু করি। নিকারাগুয়ার সেরো নিগ্রো মাউন্ট সামিটে কয়লাযুক্ত মাউন্টেন আছে। যেখানে ওঠার পর প্রচণ্ড শিলা বৃষ্টি শুরু হয়।
তখন কাঠের খণ্ড ও বড় পাথরের পাশে অবস্থান নিয়ে নিজেকে রক্ষা করি। মাউন্টেনটা খুবই সুন্দর ছিল। তবে এখান থেকে নামা খুবই বিপজ্জনক। মাউন্টেনে পাথরের উপর দিয়ে দড়ি বেয়ে নামা ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। ব্যথা পা নিয়ে সেখান থেকে নামতে হয়েছে। একদিকে ভাঙ্গা পা আরেকদিকে লাল-সবুজের পতাকা ও পেছনে ব্যাগ নিয়ে মধ্য আমেরিকার ৫ দেশ ভ্রমণ করেছি।
১৫০ দেশে ভ্রমণে ১৫০ রকমের মানুষজন, খাবার, সংস্কৃতি ও পরিবেশের সঙ্গে অভিজ্ঞতা হয়েছে। আফ্রিকাতে মরু ঝড়ের মুখোমুখি হয়েছি। মধ্যরাতে ম্যানগ্রোভ জঙ্গলে আটকা পড়েছি। সাহারা মরুভূমিতে মরুঝড়ের মধ্যে পড়েছি, রক্তাক্ত হয়েছি। কখনো আদিবাসীদের সঙ্গে মাটির ঘরে ঘুমিয়েছি। কখনো রাতের অন্ধকারে বর্ডার ক্রস করতে না পেরে অপরিচিত পরিবারের সঙ্গে থাকতে হয়েছে।
পৃথিবীর সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য আমাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। এমনো হয়েছে একটা অচেনা শহরে রাস্তা চিনি না, পেছনে ব্যাগ নিয়ে হাঁটছি। সব সময় মোবাইলে ইন্টারনেট থাকে না, তখন সেখানকার মানুষের সাহায্য নিতে হয়। অনেক ধরনের জটিলতার মধ্যে পড়তে হয়। কখনো না খেয়ে থাকতে হয়েছে। তবে মোটামুটি সব জায়গায় মানুষের যথেষ্ট সাহায্য পেয়েছি। মানুষ যখন পেছনে ট্রাভেল ব্যাগ দেখে তখন আক্রমাণাত্মক ভঙ্গি দেখায় না।
জাগো নিউজ: একজন নারী হিসেবে দেশ ভ্রমণে কি ধরনের বাঁধার সম্মুখীন হয়েছেন?নাজমুন নাহার: ভ্রমণের সময় নিজেকে নারী হিসেবে ভাবিনি, শুধু একজন মানুষ হিসেবে দেখেছি। ছেলে মেয়ের মধ্যে যে তফাৎ আছে তা কখনো আমাকে ভাবায়নি। মেয়ে হিসেবে কোনো কাজে আটকে যাবো তাও ভাবিনি। কারণ আমার বাবা ছোটবেলা থেকে আমাকে একজন মানুষ হিসেবে বড় করেছেন।
তাই নারী হিসেবে তেমন বড় কোনো বাঁধার সম্মুখিন হইনি। বরং বাঁধা অতিক্রম করার জন্য আমাকে মানুষ সবসময় সাহায্য করেছেন। তবে পৃথিবীর পথে পথে অনেক সাবধানে পথ চলতে হয়েছে।
জাগো নিউজ: ভ্রমণে শুধুই কি প্রকৃতি দেখা, এছাড়া আর কোন উদ্দেশ্য ছিল কি?নাজমুন নাহার: ভ্রমণে প্রকৃতি দেখার পাশাপাশি আমার একটা মিশন ছিল। বাংলাদেশের পতাকার সাথে বিশ্ব শান্তির বার্তা বহন করেছি। no war only Peace, save the planet, stop child marriage, women empowerment: ভ্রমণের সময় এই শদ্বগুলো পৃথিবীর মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছি।
আমার লক্ষ্য ভ্রমণের মাধ্যমে বিশ্বশান্তির বার্তা পৌঁছে দেওয়া। পুরো পৃথিবী একটা হুমকির মধ্যে আছে। যুদ্ধ নয় শান্তি চাই, বাল্যবিবাহ রোধ করা ও পৃথিবীর পরিবেশকে বাঁচানোর জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে ও প্লাস্টিক বর্জন করতে হবে। প্রতিটি দেশে গিয়ে আমি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাই। দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার পাশাপাশি এসব সচেতনতামূলক বার্তা সবার মাঝে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করি।
জাগো নিউজ: ভ্রমণে এখন পর্যন্ত আপনি কতোগুলো অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন?নাজমুন নাহার: দেশের পতাকা বহন ও পৃথিবীতে শান্তির বার্তা বহনের বিরল অবদানের কৃতিত্ব স্বরূপ আামকে ‘পিস রানার’ সম্মাননায় ভূষিত করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রে ‘আন্তর্জাতিক পিস টর্চ বিয়ারা আওয়ার্ড’। জাম্বিয়া সরকারের গভর্নর হ্যারিয়েট কায়োনার কাছ থেকে ‘ফ্ল্যাগ গার্ল’ উপাধি , দক্ষিণ সুদানে উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট অ্যাওয়ার্ড পাই।
এ ছাড়াও ‘পিস রানার’ অ্যাওয়ার্ড, মিস আর্থ কুইন অ্যাওয়ার্ড, অনন্যা শীর্ষ দশ সম্মাননা, গেম চেঞ্জার অব বাংলাদেশ অ্যাওয়ার্ড, মোস্ট ইনফ্লুয়েন্সিয়াল উইমেন অব বাংলাদেশ, গ্লোব অ্যাওয়ার্ড, অতীশ দীপঙ্কর গোল্ড মেডেল সম্মাননা, জনটা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড, তিন বাংলা সম্মাননা ও রেড ক্রিসেন্ট মোটিভেশনাল অ্যাওয়ার্ড। সফল নারী সম্মাননা, লক্ষ্মী তারুণ্য সম্মাননাসহ দেশে-বিদেশে মোট ৫০টির মতো সম্মাননা পেয়েছি।
জাগো নিউজ: যারা নতুন ভ্রমণ করতে চান তাদের উদ্দেশ্য কি বলতে চান?নাজমুন নাহার: ভ্রমণটা হচ্ছে একটা শিক্ষা। যা অর্জনের জন্য অবশ্যই পরিশ্রমী হতে হবে। পরিশ্রম করে অর্জন করতে হবে। ছোট স্বপ্নগুলো একসময় বড় স্বপ্নে পরিণত হয়। সেই বড় স্বপ্ন পূরনের জন্য চেষ্টা করতে হবে। ভয়-ভীতি, শঙ্কা, বাঁধা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে গেলেই সাফল্যের পথ দেখা যাবে।
জাগো নিউজ: ভ্রমণের মাধ্যমে মানুষ বা তরুণ প্রজন্ম কী শিখতে পারে এবং পারবে বলে আপনি মনে করেন?নাজমুন নাহার: আমাদের জীবনটাই একটা ভ্রমণ। ভ্রমণের মাধ্যমে তারা পৃথিবীর নানান দেশের মানুষ, প্রকৃতি, সংস্কৃতি এবং অপূর্ব সৌন্দর্য সম্পর্কে জানতে পারবে। নিজে স্বশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে আত্নবিশ্বাসী হয়ে উঠবে।
ভ্রমণ করলে তার চিন্তার পরিবর্তন হয়। মন আকাশের মতো বিশাল হয়ে যাবে। ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে সবকিছুর উর্ধ্বে সে নিজেকে তখন একজন মানুষ হিসেবে ভাবতে পারবে। পৃথিবীর সব মানুষকে একই রূপের ও বন্ধনের মনে হবে। পৃথিবী হচ্ছে মা ও আমরা সবাই একই মায়ের সন্তান। এই চেতনা ও একাগ্রতা তার মধ্যে কাজ করবে।
জাগো নিউজ: ১৫০ দেশ তো দেখা হলো, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?নাজমুন নাহার: ১৫০ দেশের পর পুরো বিশ্ব ভ্রমণে আরো ৪৭টি দেশ বাকি আছে। বাকি দেশগুলোও পর্যায়ক্রমে ভ্রমণের ইচ্ছে আছে। সেটাই আমার স্বপ্ন, এর জন্য ম্যাপ, পড়াশোনা ও কাজ করে যাচ্ছি।
মধ্য এশিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকার কয়েকটা দেশ জোন করা আছে। সামনের দিনগুলোতে এসব দেশে ভ্রমণে যাবো। তাছাড়া ভ্রমণ বিষয়ক একটি বই লিখছি। আশা করি শীঘ্রই সেটি প্রকাশ পাবে। আগামী প্রজন্মের কাছে বইটা উপহার হিসেবে থাকবে।
জেএমএস/জেআইএম