মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে চতুর্থ দিন শেষেও চালকের আসনে বাংলাদেশ। আর ম্যাচ বাঁচাতে প্রাণপন লড়ছে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড। এবাদত হোসেন, তাসকিন আহমেদ ও মেহেদি হাসান মিরাজদের বোলিং তোড়ে দারুণ চাপে টম লাথামের দল।
Advertisement
এ কি স্বপ্ন? নাকি মায়া? নাকি ভাবছেন ভুল লেখা হয়েছে বুঝি। হয়তো সব উইলোবাজরা আউট হয়ে সাজঘরে হতাশায় দাঁত দিয়ে নখ কাটছেন। আর তিন বোলার তাসকিন, এবাদত ও মিরাজ ব্যাট হাতে পরাজয় এড়ানোর প্রাণপন চেষ্টায়। নাহ! মোটেও ভুল লেখা হয়নি।
নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ব্ল্যাকক্যাপসদের বিপক্ষে সত্যিই টেস্ট জয়ের হাতছানি মুমিনুল বাহিনীর সামনে। তাও দুই প্রধান স্তম্ভ ও ম্যাচ উইনার সাকিব-তামিমকে ছাড়া। কে ভেবেছে কবে? অতবড় বাংলাদেশ ভক্তও যে তা স্বপ্নেও ভাবেননি । কিন্তু মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে সে অভাবনীয় কাণ্ড ঘটার সমূহ সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
এখন খেলার যে অবস্থা তাতে বাংলাদেশ জয়ের স্বপ্ন দেখতেই পারে। আর নিউজিল্যান্ড যে জায়গায় দাঁড়িয়ে, সাধারণত বাংলাদেশ সমর্থকরা সেখানে নিজ দলকে দেখে অভ্যস্ত। বহু টেস্টে এমন অবস্থায় ছিল বাংলাদেশ। নিশ্চিত পরাজয়ে মুখে দাঁড়িয়ে মুশফিকুর রহিম বা একজন ব্যাটার প্রাণপন লড়ছেন, সঙ্গে মেহেদি মিরাজ বা একজন বোলার।
Advertisement
বেশিরভাগ সময়ই স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় নীল হয়েছে গোটা বাংলাদেশ। অবাক করা সত্য, আজ ঠিক ঐ জায়গায় নিউজিল্যান্ড। টম লাথাম, উইল ইয়ং, ডেভন কনওয়ে, হেনরি নিকলস ও টম ব্লান্ডেল আউট। টেস্ট ক্যারিয়ারের বিদায়ের যাত্রী রস টেলর একা একদিক আগলে আছেন শুধু।
এমন নয় বাংলাদেশ টেস্টে কোনো পরাশক্তিকে কখনও হারায়নি। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের মত দলের বিপক্ষেও জয়ের রেকর্ড আছে টাইগারদের। কিন্তু সেটা ঘরের মাটিতে স্পিন নির্ভর পিচে। এমনিতে দুর্বল ও সবার নিচে থাকা জিম্বাবুয়ে, নাম সর্বস্ব ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও শ্রীলঙ্কাকেই কেবল তাদের মাটিতে হারানোর কৃতিত্ব আছে বাংলাদেশের।
এর বাইরে বিশ্ব শক্তিগুলোর মাটিতে লড়াই করে টেস্ট ড্রয়ের রেকর্ডও খুব কম। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে জয় বহু দূরে একটি টেস্টও ড্র করা সম্ভব হয়নি। এমনকি ৫৯৫ রানের বিশাল স্কোর গড়ে প্রথম ইনিংসে ৫৬ রানে এগিয়ে থেকেও ম্যাচ হাতাছাড়া করার নজির আছে।
সেই মাটিতে চার দিনের ১২ সেশনের মধ্যে অন্তত ১০টিতে পূর্ণ প্রভাব বিস্তার ব্যাটিং ও বোলিংয়ে কর্তৃত্ব ফলিয়ে প্রথম ইনিংসে ১৩০ রানের লিড ও চার দিনেই (দুই ইনিংস মিলে) ১৫ উইকেটর পতন ঘটিয়ে জয়ের সম্ভাবনা জাগানো বিস্ময়কর বৈকি।
Advertisement
বলার অপেক্ষা রাখে না, যা আগে কখনই হয়নি। সেই আমিনুল ইসলাম, আকরাম খান, হাবিবুল বাশার, খালেদ মাসুদ পাইলট, খালেদ মাসুদদের সময় থেকে মাশরাফি, তামিম, সাকিব, রিয়াদ, মুশফিকদের নিয়ে গড়া পুরোদস্তুর দল নিয়েও যা কখনও করা সম্ভব হয়নি।
তার ওপর এখন তামিম-সাকিব নেই। যারা খেলছেন চলতি ম্যাচে, তাদের অর্ধেকের বেশি ক্রিকেটার এখনও বয়সে তরুণ। হাতে গোনা কয়েকটি টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা আছে মাত্র। তিন টর্প অর্ডার সাদমান (৯ টেস্ট), নাজমুল শান্ত (১০) ও মাহমুদুল জয় (১) মিলে ২০ টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে নেমেছেন মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে। তিন পেসার শরিফুল ইসলাম (১), তাসকিন (৭) ও এবাদত (৯ টেস্ট) মিলে এ টেস্টের আগে খেলেছেন সাকুল্যে ১৭ টেস্ট।
এমন এক ঝাঁক তরুণ ও নবীনে গড়া দল নিয়ে এমন সাহসী, উজ্জীবিত ও আত্মপ্রত্যয়ী টিম পারফরম্যান্স রীতিমতো অকল্পনীয়! দেখা যাক কালকের সকালটা এমন হয় কি না? অনেক বড় তারকারা যা পারেননি, মুমিনুল হকের নেতৃত্বে এই তরুণ দল না পারার শেকল ভাঙতে পারে কি না?
এআরবি/এসএএস/জেআইএম