অর্থনীতি

ভূমিহীনদের ঘর নির্মাণসহ ১০ প্রকল্প অনুমোদন, ব্যয় ১১ হাজার কোটি

ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল ও অসহায় ৪ লাখ ৮৫ হাজার ৯২টি পরিবার ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা মূল্যের পাকা ঘর পাবে। আগে এ মূল্য নির্ধারিত ছিল ২ লাখ টাকা। এ জন্য সরকার আরও ৬ হাজার ৩১৬ কোটি টাকা ব্যয় করবে। ফলে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পটির চতুর্থ সংশোধন করা হবে।

Advertisement

বাংলাদেশে ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল ও অসহায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন, আয়বর্ধক কার্যক্রম সৃষ্টির মাধ্যমে উপকারভোগীদের দারিদ্র্য বিমোচন এবং ঋণ প্রদান ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহে সক্ষম করে তোলা হবে এ প্রকল্পের মাধ্যমে।

মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এটিসহ ১০টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পগুলোর মোট ব্যয় ১১ হাজার ২১১ কোটি টাকা। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নকারী সংস্থা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। মূল অনুমোদিত প্রকল্পের ব্যয় ছিল ১ হাজার ১৬৯ কোটি ১৮ লাখ টাকা। এরপর প্রথম সংশোধিত ব্যয় ২ হাজার ২০৪ কোটি ২০ লাখ টাকা। দ্বিতীয় সংশোধিত ব্যয় ছিল ৪ হাজার ৮৪০ কোটি ২৮ লাখ টাকা। তৃতীয় সংশোধিত ব্যয় ছিল ৪ হাজার ৮২৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা।

Advertisement

কাজের পরিধি বাড়ার ফলে চতুর্থ সংশোধিত প্রস্তাবে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ১১ হাজার ১৪২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। ফলে পাঁচ লাখ মানুষকে পাকা বাড়ি দিতে সরকার আরও ৬ হাজার ৩১৬ কোটি টাকা ব্যয় করবে। প্রকল্পটি অনুমোদনের পর জুন ২০২৩ মেয়াদে এটি বাস্তবায়ন করা হবে।

নানা কারণে প্রকল্পটি সংশোধন করা হচ্ছে। মুজিববর্ষে দেশের ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য ‘গৃহ প্রদান নীতিমালা-২০২০’ বাস্তবায়ন এবং প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রকল্পের কাজ ২০২৩ সালের মধ্যে সম্পন্ন করার সানুগ্রহ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আংশিক সংশোধিত ডিজাইন মোতাবেক একক গৃহের নির্মাণ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা।

প্রকল্পের আওতায় ৫ হাজার ১৪৯টি পাকা ব্যারাক, চরাঞ্চলে ৫ হাজার ৭৮টি সিআইসিট ব্যারাক, ৪ হাজার ৩৯৩টি সেমিপাকা ব্যারাক নির্মাণ এবং ৬০টি বহুতল ভবন নির্মাণ হবে। ১ হাজার ১২০টি কমিউনিটি সেন্টার, ৫৮০টি বিশেষ ডিজাইনের ঘর, ৫৬৫টি ঘাটলা, অভ্যন্তরীণ রাস্তা, বক্স কালভার্ট, পাকা ড্রেন ও স্লপ প্রোটেকশন নির্মাণ করা হবে। সব প্রকল্প গ্রামে অগভীর-গভীর নলকূপ ও অভ্যন্তরীণ রাস্তাও থাকবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পটি ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আবাসন সুবিধা নিশ্চিতকরণ এবং বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে পিছিয়ে পড়া গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখবে বিবেচনায় এটি ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।

Advertisement

এছাড়া ২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওতায় এয়ারপোর্ট রোডসহ বিভিন্ন সড়কসমূহ উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন’ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

জুলাই ২০২১ থেকে জুন ২০২৪ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে এয়ারপোর্ট রোড সম্প্রসারণসহ বিভিন্ন রাস্তা উন্নয়নের মাধ্যমে যানজট নিরসন ও নগরবাসীর জীবন-যাত্রার মানোন্নয়ন, ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের মাধ্যমে পথচারীদের নিরাপদে রাস্তা পারাপারের সুযোগ বৃদ্ধিকরণ এবং নগরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন।

প্রকল্পের আওতায় ৭৬৯ কিলোমিটার রাস্তা উন্নয়ন, এয়ারপোর্ট রোডে ৬০০ মিটার ওভারপাস নির্মাণ, ৩৮টি ফুটওভার ব্রিজ, ১৪টি ব্রিজ, ২২টি কালভার্ট, ১০টি গোল চত্বর নির্মাণ করা হবে।

চট্টগ্রামের মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্প প্লটের সংখ্যা ২৫০টি বাড়িয়ে ৫৩৯টি করবে সরকার। অর্থনৈতিক অঞ্চলে নতুন করে ফায়ার স্টেশনসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি, দুটি কারখানা ভবন, ফুটপাত, গাড়ি মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ, তিনটি আবাসিক ভবন, একটি মসজিদ ও একটি মেডিকেল সেন্টার নির্মাণসহ কয়েকটি নতুন অঙ্গ সংযোজন করা হবে। মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রকল্পটি সরকার প্রথমবারের মতো সংশোধন করতে যাচ্ছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা)।

৫৫২ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল মীরসরাই ১ম প্রথম পর্যায়ে প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ১ দশমিক ১৫৬ কোটি ঘনমিটার ভূমি উন্নয়ন, ৩ দশমিক ৬৪ লাখ বর্গমিটার রাস্তা ও ৩৮ হাজার ৭৮৫ বর্গমিটার ফুটপাত নির্মাণ করা হবে। ৬১ হাজার ২৮৩ মিটার ড্রেন, ৯ হাজার ৩৬৮ মিটার বারবেড ওয়ার ফেন্সিং ও ৪ হাজার ৪৬৫ মিটার সীমানা দেয়াল নির্মাণ হবে। ৩ হাজার ৫১৬ বর্গমিটার অফিসার্স ডরমিটরি ও ২ হাজার ১১৬ বর্গমিটার স্টাফ ডরমিটরি ভবন থাকবে প্রকল্প এলাকায়।

১৩৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের জন্য লজিস্টিকস ও ফ্লিট মেইনটেন্যান্স ফ্যাসিলিটিস গড়ে তোলা (১ম সংশোধিত) প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের নিজস্ব ফ্লিট মেইনটেন্যান্স ও লজিস্টিকস ক্যাপাবিলিটি গড়ে তোলা। প্রধান কার্যক্রমসমূহ হলো- ২টি স্লিপওয়ে, ৫টি ওয়ার্কশপ, ১টি ওয়্যার হাউজ, ১টি ইয়ার্ড সার্ভিস ও ১টি বোট ইয়ার্ড নির্মাণ করা। এছাড়া ৩৪২ মিটার দীর্ঘ নদীরক্ষা বাঁধ নির্মাণ, কজওয়ে, বেইলি ব্রিজ ও জেটি নির্মাণ ও ৪৬৮১টি যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম ক্রয় করা হবে।

৭২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘কুমারগাঁও-বাদাঘাট-এয়ারপোর্ট সড়ককে জাতীয় মহাসড়ক মানে ৪-লেনে উন্নীতকরণ’ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পটি ডিসেম্বর ২০২১ থেকে জুন ২০২৪ মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হবে।

প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে, সিলেটের কুমারগাঁও-বাদাঘাট-এয়ারপোর্ট জেলা মহাসড়কটিকে ৪-লেনের জাতীয় মহাসড়ক মানে উন্নীত করার মাধ্যমে সিলেট শহরের যানজট নিরসন।

বাংলাদেশ টেলিভিশনের কেন্দ্রীয় সম্প্রচার ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, ডিজিটালাইজেশন ও অটোমেশন (১ম পর্যায়, ১ম সংশোধিত) প্রকল্পে ৩৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা অনুমোদন করা হয়েছে। প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে দর্শকদের চাহিদা অনুযায়ী আইটিভিত্তিক অটোমেটেড পদ্ধতির যন্ত্রপাতি সন্নিবেশিত করে বিটিভি, বিটিভি ওয়ার্ল্ড, সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশনের অনুষ্ঠান ও সংবাদ পরিবেশন করা হবে।

৪৮ কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘মোবাইল গেইম ও এ্যাপ্লিকেশনের দক্ষতা উন্নয়ন (৩য় সংশোধিত)’ প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মোবাইল অ্যাপস ও গেম উন্নয়নে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের জন্য বাংলাদেশকে প্রস্তুত করে বিশ্ববাজারের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন এবং নতুন কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি করা হবে। মোবাইল অ্যাপস ও গেম উন্নয়নের জন্য যোগ্য প্রশিক্ষক তৈরি করা ও দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গেম ও অ্যাপস তৈরির জন্য ল্যাব স্থাপন ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তথ্য প্রযুক্তিতে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা অর্জন করা হবে।

৭৫১ কোটি টাকা ব্যয়ে বরগুনা জেলার অধীন পোল্ডার ৪৩/১ ও ৪৪বি পুনর্বাসন এবং ঝুঁকিপূর্ণ অংশ পায়রা নদীর ভাঙন থেকে প্রতিরক্ষা প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্প এলাকা হচ্ছে বরগুনা জেলার আমতলী ও তালতলী উপজেলা

প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো- খাল খনন, রেগুলেটর মেরামত/পুনঃনির্মাণ, নদীর তীর সংরক্ষণ এবং বাঁধের ঢাল সংরক্ষণ কাজ বাস্তবায়নের মাধ্যমে নদী ভাঙন রোধ ও প্রকল্প এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ। লবণাক্ত পানির প্রবেশ রোধ করে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি এবং পায়রা নদীর ভাঙন থেকে স্কুল-কলেজ, মসজিদ, মাদরাসা ও রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অবকাঠামো রক্ষা করা।

১৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী ও উলিপুর উপজেলায় ব্রহ্মপুত্র নদের ডানতীর ভাঙনরোধ (১ম সংশোধিত) প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্প এলাকা হলো কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী ও উলিপুর উপজেলা। প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো- ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন থেকে কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার অনন্তপুর এলাকার নয়ারদারা এবং চিলমারী উপজেলার ফকিরেরহাট, জোড়গাছ, চিলমারী বন্দর ও পার্শ্ববর্তী এলাকা রক্ষা, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও ভূমি পুনরুদ্ধার করা এবং দারিদ্র্য দূরীকরণ ও সামাজিক নিরাপত্তাসহ এলাকার আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন।

৬ কোটি ৯২ লাখ টাকা ব্যায়ে ‘পাট বিষয়ক মৌলিক ও ফলিত গবেষণা (৩য় সংশোধিত) প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্প এলাকা হলো- ঢাকা, নোয়াখালী, রংপুর, যশোর ও মানিকগঞ্জ জেলায় বিজেআরআই’র গবেষণাগার, স্টেশন, আঞ্চলিক কেন্দ্র, উপকেন্দ্র ও গবেষণার জন্য উপযোগী স্থান।

প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে- উচ্চ ফলনশীল ও ঘাত সহনশীল পাটের নতুন জাত/লাইন উদ্ভাবন, তোষা পাটের ড্রাফট জিনোম হালনাগাদকরণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার উপযোগী আধুনিক পাটের জাত উদ্ভাবনে গবেষণালব্ধ তথ্যের ব্যবহার করা।

দেশি পাটের জিনোম সিকোয়েন্সিং ও জীনসমূহ শনাক্তকরণ ও পাট পচানোর অণুজীবসমূহের জিনোম সিকোয়েন্সিং সম্পন্নকরণ করা হবে।

এমওএস/এমএইচআর/জেআইএম