আইন-আদালত

‘বিচারপতি অবসরে যাওয়ার পর রায় মূল্যহীন’

‘একজন বিচারপতি অবসরে চাওয়ার পর তার দেয়া রায় মূল্যহীন কাগজের টুকরো’ বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী মহসিন রশিদ।সোমবার দুপুরে সুপ্রিমকোর্টের অ্যনেক্স ভবনের ল’রিপোর্টাস ফোরামের কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে অ্যাডভোকটে মহসিন রশিদ এ মন্তব্য করেন।মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু সাজাপ্রাপ্ত জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসোইন সাঈদীর রায় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সাবেক প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন ও বিচারপতি এএইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী অবসরে থাকাকালীন সময়ে এই রায় প্রকাশ করা হয়। যা সংবিধান পরিপন্থি ও বেআইনি’। তিনি মনে করেন, ‘অবসরে যাওয়ার পরও  বিচারক হিসেবে তার শপথ শেষ হয়ে গেছে তাই রায় লেখা ছিলো অবৈধ। তিনি উদারহরণ টেনে বলেন, ভারতের কোন মামলা চলাকালীন যদি ওই বেঞ্চের বিচারক অবসরে চলে যান, তাহলে ওই মামলার (রি-হেয়ারিং) পুনঃশুনানি করা হয়’।  তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে উন্মুক্ত আদালতে রায় দেয়ার চর্চা হারিয়ে গেছে। যদি পূর্ণাঙ্গ রায় উন্মুক্ত আদালতে দেয়া হয়, তাহলে দুর্নীতি চর্চার সুযোগ অনেকাংশে কমে যাবে’। প্রধান বিচারপতির উদ্দেশ্যে গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর সুপ্রিমোকার্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মহসিন রশিদের দেয়া চিঠিতে তিনি এসব কথা বলেন। কিন্তু এই চিঠির  বিষয়ে প্রধান বিচারপতি কোনো জবাব বা কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় আজকের সংবাদ সম্মেলনে এই চিঠি উপস্থাপন করেন তিনি।লিখিত চিঠিতে এ আইনজীবী বলেন, ‘সাবেক প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন গত বছরের ১৬ জানুয়ারি এবং বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী গত বছরের ১ অক্টোবর অবসরে যান । কিন্তু পূর্ণাঙ্গ সাঈদীর রায় দেয়া হয় গত ৩১ ডিসেম্বর। বিচারপতি অবসরে যাওয়ার পর রায় লেখাটা বেআইনি’।তিনি বলেন, ‘ভারত-পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে বিচারপতিরা অবসরে যাওয়ার সময় কোনো রায় লেখা বাকি থাকলে তাহলে নতুন করে বেঞ্চ গঠন করে দেন। যে বেঞ্চে নতুন করে মামলার শুনানি শেষে রায় লেখা হয়। অথচ আমাদের প্রধান বিচারপতিরা বেআইনি কাজ করেছেন’। ‘ইতোপূর্বে ত্রয়োদশ সংশোধনী সাবেক প্রধান বিচারপতি  এবিএম খায়রুল হক যে রায় লিখেছেন তাও অবৈধ। কেননা শপথ শেষ হয়ে অবসরে যাওয়ার পর কোনো বিচারপতি রায় লেখার কোনো এখতিয়ার নেই’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।  লিখিত বক্তব্যে মহসিন রশিদ প্রধান বিচারপতির সমোলোচনা করে বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা মামলার শুনানি না করে রায় দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি  বিচার  না করে রায় দিয়ে যাচ্ছেন। যা সংবিধানের ১০৩ অনুচ্ছেদের পরিপন্থি’। এ আইনজীবী বলেন, ‘প্রধান বিচারপতির এ ধরণের একক মনগড়া আচরণ পরিবর্তন করার জন্য লিখিতভাবে আমি তাকে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু এ চিঠির কোনো পাত্তাই দেননি’। তিনি বলেন, ‘জনকণ্ঠের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলার  শুনানিকালে বিচারপতি এ  এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীকে উদ্দেশ করে প্রধান বিচারপতি বলেছেন, বর্তমান প্রধান বিচারপতির নের্তৃত্বে যে বেঞ্চ রয়েছে সে বেঞ্চের পক্ষ থেকে কোনো দ্বৈত আদেশ এখনো পর্যন্ত হয়নি’।   মহসিন রশিদ বলেন, হাইকোর্টের কোনো বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি প্রশাসনিকভাবে শোকজ করার এখতিয়ার নেই। বরং হাইকোর্টের কোনো বিচারপতি রায় লিখলে তার বিরুদ্ধে আপিল বিভাগ রায় দিতে পারে। তিনি আরো বলেন, ‘হাইকোর্টে ৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে অনেক রায় ঝুলে আছে। মামলা জয়ী হওয়ার পর রায় হাতে না পেয়ে অনেক বিচারপ্রার্থী মারা  গেছেন এমন নজির রয়েছে।  বর্তমান প্রধান বিচারপতি এসব বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। বরং মনগড়া আদালত পরিচালনা করে যাচ্ছেন’।   এফএইচ/এসকেডি/আরআইপি

Advertisement