রাজনীতি

ঐতিহ্যের ধারায় ফিরতে চায় ছাত্রলীগ

বাংলাদেশের জেগে থাকার নাম ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া এই ছাত্র সংগঠন ছিল বাংলা ও বাঙালির অধিকার আদায়ের এক আপসহীন নাম। ৫২-এর ভাষা আন্দোলন থেকে ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত সব আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিল ছাত্রলীগ। সংগঠনটি পাকিস্তানি জান্তা সরকারের ঘুম হারাম করে দিয়েছিল।

Advertisement

একাত্তরের পরও দেশ গঠনে ভূমিকা রাখেন এই ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সর্বশেষ ’৯০-র স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। কিন্তু পরবর্তীকালে এসে ঝিমিয়ে পড়ে এই ছাত্র সংগঠন। নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডসহ বর্তমান গতিহীন, নিস্তেজ সাংগঠনিক অবস্থার কারণে সংগঠনের ভেতরে রয়েছে ক্ষোভ, অভিমান।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সর্বশেষ সম্মেলনের মাধ্যমে হওয়া কমিটি প্রায় চার বছর পার করে ফেলছে। কিন্তু এই দীর্ঘ সময়ে কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ছাড়া অন্য নেতাদের ভাগ্য তেমন একটা পরিবর্তন হয়নি। তাই হতাশা, ক্ষোভ আর অভিমানে কাটছে তাদের দিন। ছাত্র রাজনীতিতে বয়সের সীমা নির্দিষ্ট হওয়ার কারণে দীর্ঘদিন রাজনীতি করেও নিজেকে প্রমাণ করেত পারেননি অনেকে। হল ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এসে অনেকে এখন পর্যন্ত সাংগঠনিক কোনো পরিচয় পাননি। এজন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাজনীতি থেকে অনেকটা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বলা যায়।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রধান ইউনিট খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল, অনুষদ কমিটিসহ অন্যান্য কোনো কমিটি করতে পারেননি বর্তমান নেতৃবৃন্দ। এছাড়া বর্তমান কমিটির প্রধানদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জাগো নিউজ থেকে কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা নতুন সম্মেলনসহ ছাত্রলীগের কাছে বিভিন্ন প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেন।

Advertisement

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সোহান খান বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে একটাই চাওয়া, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি যেন গঠনতান্ত্রিক অবস্থান সমুন্নত রেখে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে। ৩০তম সম্মেলনের মাধ্যমে আগামীর নেতৃত্বে যেন ধাপে ধাপে ছাত্রলীগের বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করা কোনো ছাত্রবান্ধব নেতা আসেন। বর্তমান কমিটিতে পদানুক্রমে কপালগুণে হওয়া সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যেভাবে দুইবছর মেয়াদি কমিটির মেয়াদকে চার বছরে ঠেকিয়েছেন এবং ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটের কমিটিগুলো দীর্ঘদিন ঝুলিয়ে রেখে নিজেদের ব্যক্তিস্বার্থের জন্য চেয়ার দখল করে আছেন এমন প্রেস রিলিজ ভিত্তিক নেতৃত্ব যেন না আসে। এভাবে সংগঠন পরিচালনা জাতির পিতার আদর্শিক ছাত্ররাজনীতি পরিচালনার পরিপন্থি, এখন মমতাময়ী নেত্রী (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) শেষ ভরসা আমাদের।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের আরেক সহ-সভাপতি সৈয়দ আরিফ হোসেন বলেন, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীকে সামনে রেখে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের যতটা উৎফুল্ল থাকার কথা, আদতে তার বিপরীত অবস্থাই বিরাজ করছে। সংগঠন পরিচালনায় গঠনতান্ত্রিক বাধ্যবাধকতা থাকলেও সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য স্বজনপ্রীতি ও নিজস্ব বলয়ে সংগঠন পরিচালনা করছেন। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে ছাত্রলীগ বারবার খারাপ সংবাদের শিরোনাম হচ্ছে। স্বেচ্ছাচারিতা এবং অনিয়মের যে কর্মযজ্ঞ তারা শুরু করেছেন, তা কখনোই প্রত্যাশিত ছিল না।

ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব খান বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে হলে ৩০তম সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি করতে হবে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙে পড়েছে। সংগঠনের সাংবিধানিক নিয়মের বাইরে গিয়ে সংগঠনকে পরিচালিত করছেন। দুই ভাইয়ের গ্রুপে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। এখানে বঙ্গবন্ধু এবং দেশরত্ন শেখ হাসিনার নীতি আদর্শ শুধুই মুখের বুলি, কর্মে বিপরীত। ভোগের স্রোতে জয়-লেখক নিজেদের ভাসিয়ে দিয়েছেন, ব্যবসা-টেন্ডার আর তদবিরে মগ্ন দুইজন। সুতরাং সাংবিধানিক নিয়ম অনুসরণ করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৩০তম সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টির বিকল্প নেই।

Advertisement

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাহিত্য সম্পাদক আসিফ তালুকদার বলেন, করোনা পরিস্থিতি শিথিল পরবর্তী সময়ে ঐতিহাসিক ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আমরা শিক্ষার্থীদের প্রাণোচ্ছল উপস্থিতিতে উদযাপন করতে পারছি এটি ছাত্রলীগ পরিবারের জন্য অত্যন্ত আনন্দের এবং গর্বের। সময়ের চাহিদা অনুযায়ী গণমানুষ এবং শিক্ষার্থী তথা রাষ্ট্রের প্রয়োজনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ যেমন তার গৌরবোজ্জ্বল অর্জন সমুন্নত রেখে জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে আপসহীন ভূমিকা পালন করেছে আগামীতেও সেই ধারা অব্যাহত থাকবে এটিই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমাদের অঙ্গীকার।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, আমরা অবশ্যই সাংগঠনিক গতিময়তা, সাংগঠনিক বৈচিত্র, সাংগঠনিক সৃজনশীলতা নিয়েও কাজ করার চেষ্টা করছি। আশা করি, এটিও বেগবান হবে। আমাদের সংগঠনের প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসবে। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির নিউক্লিয়াস। এখানে যে স্থবিরতা এটা আমরা কাটিয়ে উঠতে পারি। হলগুলোতে নতুন নেতৃত্বের প্রাণের সঞ্চালন যেন করতে পারি সে দায়বদ্ধতাও আমরা ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এসে অনুভব করি। এই অনুভূতির জায়গা থেকে আমরা এই চ্যালেঞ্জেও বিজয়ী হতে চাই যাতে করে আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল, অনুষদ, ইনস্টিটিউট কমিটি ঢেলে সাজাতে পারি এই শপথও আমাদের থাকবে।

এমআরআর/জিকেএস