নড়াইল সদর উপজেলার গোবরা ব্রিজ নির্মাণের ১০ মাসেও শুরু হয়নি সংযোগ সড়কের কাজ। ব্রিজের দুই প্রান্তে থাকা জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ দিতে না পারায় এ কাজ বন্ধ আছে। এতে থেমে আছে নড়াইল-ফুলতা আঞ্চলিক মহাসড়ক দুই লেনে প্রশস্তকরণ।
Advertisement
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রশস্ত করা ব্রিজের সংযোগ সড়কটি হলে নড়াইল থেকে সরাসরি বিভাগীয় শহর খুলনা যেতে তিন ঘণ্টার জায়গায় লাগবে মাত্র এক ঘণ্টা। ফলে শিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরিসহ বিভিন্নভাবে এ অঞ্চলের মানুষ উপকৃত হবেন।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলা মহাসড়কে যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্পের আওতায় তিনটি প্যাকেজে ২০১৯ সালের মে নড়াইল-ফুলতলা সড়কের ২৭ কিলোমিটার দুলেন বিশিষ্ট রাস্তা, চিত্রা নদীর মোহনায় ৫০.১২ মিটার লম্বা এবং ১০.২৫ মিটার প্রশস্ত গোবরা ব্রিজ, সংযোগ সড়ক এবং ১৯টি কালভার্টের কাজ শুরু হয়। ১১৭ কোটি ৮৮ লাখ ৫৭ হাজার টাকা ব্যয়ে এর কার্যাদেশ পায় মো. মইনুদ্দীন বাঁশি জেভি ফার্ম। ২০২০ সালের জুনে এ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও হয়নি। পরে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের সময়কাল বাড়ানো হয়েছে। এ পর্যন্ত ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হলেও গোবরা ব্রিজের সংযোগ সড়কের কাজ শুরুই হয়নি।
জেলা ভূমি অধিগ্রহণ শাখা জানিয়েছে, সংযোগ সড়কের জন্য ব্রিজের দুইপ্রান্তে ১.২ কিলোমিটার রাস্তার জন্য ৫.০৯ একর জমি অধিগ্রহণ, ৫১টি বাড়ি, ১৫টি দোকান এবং অনেক গাছ-গাছালি অপসারণ করতে হবে। এ জন্য ৭৬টি পরিবার ১১কোটি ৪৬ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কথা থাকলেও এ পর্যন্ত পেয়েছে ২৫ টি পরিবার।
Advertisement
ব্রিজের দক্ষিণ প্রান্তের গোবরা বাজারের চা বিক্রেতা চন্দনা শীল বলেন, আমার পৌনে চার শতাংশ জায়গা ও একটি চায়ের দোকাদের ক্ষতিপূরণের জন্য দুবছরে কমপক্ষে ২০ বার সংশ্লিষ্ট অফিসে যাই। কিন্তু ক্ষতিপূরণ পাইনি।
গোবরা বাজারের মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, দুবছর আগে নোটিশ পেয়েছি আমাদের প্রায় ১৩ শতক জমি অধিগ্রহণ করা হবে। এরপর আর কোনো নোটিশ পাইনি এবং শুনানিহয়নি।
এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ডেপুটি প্রজেক্ট ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম জাগো নিউজকে বলেন, এ পর্যন্ত ৮০-৮৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। গোবরা ব্রিজের দুপাশে জায়গা বুঝে না পাওয়ায় ১.২ কিলোমিটার সংযোগ সড়কের কাজ শুরু হচ্ছে না। বিষয়টি অফিসকে বার বার জানানো হয়েছে। এখন বড়ো কাজের মধ্যে ব্রিজের অ্যাপ্রোচ কাজই বাকি আছে। এ বছরের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ আছে। কিন্তু শিগগির জায়গা বুঝে না পেলে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা কষ্টকর হয়ে পড়বে।
জেলা প্রশাসনের এলএ শাখার কানুনগো মো. সিরাজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, এ প্রকল্পের প্রয়োজনীয় অর্থ আসতে দেরি হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণদেওয়া বন্ধ ছিল। ১৪-১৫ দিন আগে এ অর্থ এসেছে। ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিয়েই সংশ্লিষ্ট অফিসকে জমি বুঝিয়ে দেওয়া হবে। তবে যেসব মালিকদের জমি নিয়ে বিরোধ আছে তা নিষ্পত্তি হলে ক্ষতিপূরণ পাবেন।
Advertisement
নড়াইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুজ্জমান জাগো নিউজকে বলেন, জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণের বাকি অর্থ ৩০দিন আগে জেলা প্রশাসনকে পরিশোধ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের সঙ্গে শুনানি শেষ হলে আমাদের জায়গা বুঝিয়ে দেওয়া হবে। তখন আমরা সংযোগ সড়কের কাজ শুরু করতে পারব।
হাফিজুল নিলু/এসজে/এএসএম