মাহমুদ হাসান হৃদয় ৩৬তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে উত্তীর্ণ হন। তার জন্ম মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর উপজেলার উয়াইল গ্রামে। তার বাবা মো. সরোয়ার হোসেন মৃধা শিক্ষক, মা সানোয়ারা বেগম গৃহিণী। হৃদয় ২০০৫ সালে কলিয়া পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ২০০৭ সালে মেজর জেনারেল মাহামুদুল হাসান আদর্শ কলেজ টাঙ্গাইল থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মার্কেটিংয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
Advertisement
বর্তমানে তিনি রংপুরের মিঠাপুকুরে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কর্মরত। সম্প্রতি তার বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া, ভবিষ্যৎ স্বপ্ন ও সফলতার গল্প শুনিয়েছেন জাগো নিউজকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম—
জাগো নিউজ: আপনার শৈশবের গল্প দিয়ে শুরু করতে চাই— মাহমুদ হাসান হৃদয়: শৈশবে দুরন্তপনায় সময় কেটেছে। আমার বাড়ির পাশেই ছিল বিশাল মাঠ। যখনই সময় পেতাম ক্রিকেট, ফুটবলসহ বিভিন্ন খেলায় অংশ নিতাম। বইপড়া ছিল আমার অন্যতম শখ। বিভিন্ন বই পড়তাম ছোটবেলা থেকেই। কবিতা আবৃত্তি, উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় পুরস্কার জিতেছি। ছোট থেকেই আমার একমাত্র ভাই মো. এমরান হাসান মৃধা আমার স্বপ্নপূরণে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে।
জাগো নিউজ: পড়াশোনায় কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল কি?মাহমুদ হাসান হৃদয়: আমার বাবা শিক্ষক ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি আমাকে পড়াশোনায় উৎসাহিত করেছেন। আর আমার মা ছিলেন আমার পড়াশোনার নিত্যসঙ্গী। বড় স্বপ্ন ছিল ছোট থেকেই। তবে অনেকেই আমার স্বপ্নে বিশ্বাস রাখেননি। বিশ্বাস রেখেছিলেন শুধু আমার বাবা-মা। তাদের অবিরত উৎসাহ ও প্রেরণাই আমাকে সব বাধা অতিক্রম করতে সাহায্য করেছে।
Advertisement
জাগো নিউজ: বিসিএসের স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?মাহমুদ হাসান হৃদয়: বিসিএসের স্বপ্ন দেখা ক্লাস ফাইভ-সিক্স থেকেই শুরু হয়েছিল। ছোটবেলায় আমাদের স্কুলে একবার তখনকার জেলা প্রশাসক এসেছিলেন। তখন তার সম্মান দেখেই জেলা প্রশাসক হওয়ার স্বপ্ন দেখি। আমার দাদি তখন থেকেই আমাকে ডিসি বলে ডাকা শুরু করেন। এরপর জানতে পারি, বিসিএস দিয়েই হওয়া যায় জেলা প্রশাসক। সেই থেকে বিসিএসের স্বপ্ন শুরু।
জাগো নিউজ: বিসিএস যাত্রার গল্প শুনতে চাই, প্রস্তুতি নিয়েছেন কীভাবে?মাহমুদ হাসান হৃদয়: বিশ্ববিদ্যালয়ের ২য় বর্ষ থেকেই বিসিএসের প্রস্তুতি শুরু করি। প্রথমে পত্রিকা ও সাধারণ জ্ঞানের বই দিয়ে শুরু হয় প্রস্তুতি। তারপর বিভিন্ন বই সংগ্রহ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে চলে প্রস্তুতি। সত্য বলতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২য় বর্ষ থেকেই পুরোদমে বিসিএসের পড়া চলতে থাকে। এরপর দিনের পর দিন প্রস্তুতির ভিন্ন ভিন্ন কৌশল জেনে প্রস্তুতিকে সমৃদ্ধ করতে থাকি। অনার্স ২য় বর্ষ থেকে অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি থেকে শুরু করে সব জায়গায়ই পড়াশোনা করেছি। অনেক সময় ছুটিতেও বাড়ি যাইনি। মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জনের সময়ও বিসিএস সংক্রান্ত পড়াশোনার মধ্যেই ছিলাম। প্রিলিমিনারি, লিখিত ও ভাইবার প্রতিটি পর্যায়ে সর্বোচ্চ মনোযোগের সাথে বিসিএস বিষয়ে পড়াশোনার মধ্যেই ছিলাম। একাগ্রতার সাথে দীর্ঘদিন বিসিএসের পড়াশোনার সাথে থাকার কারণেই সাফল্য অর্জন সম্ভব হয়েছে বলে আমি বিশ্বাস করি।
জাগো নিউজ: পর্দার আড়াল থেকে কেউ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে?মাহমুদ হাসান হৃদয়: আমার বাবা আমার অনুপ্রেরণা। তিনি আমার স্বপ্নকে স্পর্শ করা পর্যন্ত প্রতিমুহূর্তে পাশে ছিলেন, উৎসাহ দিয়েছেন প্রতিমুহূর্তে। অনেক ত্যাগ স্বীকার করে ধৈর্য ধরে আমার পাশে ছিলেন সব সময়। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাসের পরও বিসিএসের দীর্ঘদিন প্রস্তুতিতেও তিনি পাশে ছিলেন। আর মা ছিলেন আমার বিসিএস প্রস্তুতির নিত্যসঙ্গী। আমার সাফল্য-ব্যর্থতার প্রতিটি মুহূর্তে মা উৎসাহ দিতেন।
জাগো নিউজ: নতুনরা বিসিএস প্রিলির জন্য কীভাবে প্রস্তুতি শুরু করবেন?মাহমুদ হাসান হৃদয়: প্রিলিমিনারি প্রস্তুতির জন্য পত্রিকা ও বিভিন্ন বই পড়ে বিশ্ব সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। ৮ম, ৯ম, ১০ম শ্রেণির বেসিক বইগুলো সংগ্রহ করে পড়া শুরু করতে হবে। ভালো কোনো প্রকাশনীর প্রিলিমিনারি বই দেখা যেতে পারে। রুটিন করে নিতে হবে। পড়াশোনায় সময় দিতে হবে অনেক। স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে অনুপ্রেরণা নিতে হবে বিভিন্ন অনুপ্রেরণামূলক বই পড়ে কিংবা অনুপ্রেরণামূলক ভিডিও দেখে। বিসিএস প্রিলিমিনারি প্রস্তুতিতে কৌশলের চেয়েও প্রচুর পড়াশোনার উপরই নির্ভর করবে সাফল্য।
Advertisement
জাগো নিউজ: প্রিলি শেষ করার পর বিসিএস লিখিত প্রস্তুতি নিয়ে আপনার পরামর্শ কী?মাহমুদ হাসান হৃদয়: লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি প্রিলিমিনারি প্রস্তুতির চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। লিখিত পরীক্ষায় ভালো নাম্বার পাওয়ার উপরই নির্ভর করবে ক্যাডার পাওয়ার সম্ভাবনা। লিখিত পরীক্ষায় গাইড বইয়ের উপর একদমই নির্ভর করা যাবে না। বিসিএসের যত কৌশল রয়েছে, তার সবই যেন লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য। পত্রিকা, ইন্টারনেট, রেফারেন্স বই, বিভিন্ন রিপোর্ট, বেসিক বইসহ অন্যান্য উৎস হবে লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির মূল উপাদান। লিখিত পরীক্ষার খাতাটি যেন হয় অন্যের তুলনায় অনন্য। প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে। প্রচুর তথ্য সংগ্রহ ও তা পরীক্ষায় প্রয়োগ করার ক্যাপাবিলিটি অর্জন করতে হবে। পরীক্ষার হলের সময় ব্যবস্থাপনা সম্পর্কেও আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। সর্বোপরি বিসিএস লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি অবশ্যই একসেপশনাল হতে হবে। না হলে ক্যাডার পাওয়া সম্ভব হবে না।
জাগো নিউজ: বিসিএসে ভাইবার প্রস্তুতি কেমন হতে হয়?মাহমুদ হাসান হৃদয়: ভাইবা প্রস্তুতির জন্য নিজের সম্পর্কে বলার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। এ ছাড়া অনার্স-মাস্টার্সে পঠিত বিষয়, পছন্দকৃত প্রথম ক্যাডার, নিজ জেলা, মুক্তিযুদ্ধ, বর্তমান সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম প্রভৃতি বিষয়ে প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। পত্রিকা পড়ে বিশ্ব সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে প্রতিনিয়ত। ভাইবা বোর্ডে যাওয়ার পোশাক, প্রবেশ, বসা, বের হওয়া থেকে প্রতিটি বিষয়ই আগে থেকে প্র্যাকটিস করে যাওয়া উচিত। ইউটিউব থেকে বিভিন্ন ভাইবার ভিডিও দেখা যেতে পারে। ভাইবার ক্ষেত্রে আমার পরামর্শ হচ্ছে, সব সময় আত্মবিশ্বাসী ও বিনয়ী থাকা। যা আপনাকে ভাইবায় সর্বোচ্চ নাম্বার পেতে সাহায্য করবে।
জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?মাহমুদ হাসান হৃদয়: আমার স্বপ্নই ছিল মানুষের কল্যাণে কাজ করা। এ ছাড়া দুর্নীতি ও বিভিন্ন অন্যায় কার্যক্রম প্রতিরোধ করাও অন্যতম লক্ষ্য। ভবিষ্যতেও যতদিন সিভিল সার্ভিসে থাকবো, মানুষের কল্যাণে কাজ করবো ইনশা আল্লাহ্। আমি বিশ্বাস করি, সৎভাবে মানুষের জন্য কাজ করতে পারা জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া। আমার বাবা-মায়ের স্বপ্নও তাই।
এসইউ/এমএস