বিনামূল্যে সরকারি বই বিতরণে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান ও প্রতিনিধি শিক্ষকদের জিম্মি করে ঘুস নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। নির্ধারিত সময়ে বই না দেওয়া ও বিভিন্ন হয়রানির ভয় দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে ঘুসের টাকা আদায় করা হয়।
Advertisement
বিষয়টি বিদ্যালয়ের প্রধান ও শিক্ষকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক আইন অনুযায়ী জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবিও জানিয়েছেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বছরের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়ার জন্য ১ জানুয়ারি বই উৎসব পালন করা হয়ে থাকে। তবে বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে এবার উৎসব পালন করা না হলেও নির্ধারিত দিনেই বই বিতরণ হবে। এজন্য বিদ্যালয়গুলোতে নতুন বই পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) ও শুক্রবার (৩১ ডিসেম্বর) উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে উপজেলার ২৮৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বই বিতরণ করা হয়েছে। এরমধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৭৩টি, ৪৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৬৫টি কিন্ডার গার্টেন স্কুল রয়েছে। কিন্তু বিনামূল্যের সরকারি বই বিতরণে বিদ্যালয় প্রধান ও তাদের প্রতিনিধি শিক্ষকদের জিম্মি করে ঘুস নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
অভিযোগে জানা যায়, সরকারি বই পেতে প্রত্যেক কিন্ডার গার্টেন স্কুলকে ১২০০ টাকা, মাধ্যমিক স্কুলকে ৫০০ টাকা ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো থেকে ৩০০ টাকা করে আদায় করা হয়। মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের নিয়োগ করা আদায়কারীর কাছে নির্ধারিত ওই ঘুসের টাকা দিলেই কেবল তাদের বই দেওয়া হয়। অন্যথায় কোনো বই দেওয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়।
Advertisement
সেইসঙ্গে শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তাদের দাবিকৃত টাকা না দিলে হয়রানির শিকার হতে হবে বলেও বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখানো হয় তাদের। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই ঘুসের টাকা পরিশোধ করে বই নিয়েছেন। এই টাকা আদায়কারী হিসেবে তোফাজ্জল ও নাজমুল ইসলাম নামের দুই ব্যক্তি দায়িত্ব পালন করেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
শিক্ষক আসলাম হোসেন, জাহিদুল ইসলামসহ একাধিক ভুক্তভোগী অভিযোগ করে বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরেই এভাবে নতুন বই নেওয়ার সময় তাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হচ্ছে। প্রতিবাদ জানিয়েও কোনো লাভ হয় না। এছাড়া শিক্ষা অফিসে তাদের অনেক কাজ থাকে। তাই বেশিকিছু বললে বিভিন্ন হয়রানির শিকার হতে হয়। অফিসটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।
সরকারি বই নেওয়ার সময় টাকা আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তোফাজ্জল ও নাজমুল ইসলাম কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। তবে ঘটনাটি সম্পর্কে সাক্ষাতে বিস্তারিত জানাবেন বলে মন্তব্য করে ফোনের সংযোগ কেটে দেন তারা।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোছা. মিনা খাতুন বলেন, বই বিতরণের সম্পূর্ণ কাজটি করে মাধ্যমিক অফিস। তাদের শিক্ষকরা টাকা দিয়ে বই নিয়ে থাকলে যাদের সম্পর্কে অভিযোগ তারাই ওই বিষয়ে জবাব দেবেন।
Advertisement
তবে অভিযুক্ত উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নজমুল ইসলাম নিজেকে নিদোর্ষ দাবি করে সাংবাদিকদের বলেন, কে বা কারা টাকা নিয়েছেন সেটি বলতে পারবো না। এই টাকা আদায়ের সঙ্গে তার অফিসের কেউ জড়িত নেই। এছাড়া বই নেওয়ার সময় টাকা আদায়ের বিষয়ে কেউ অভিযোগও করেননি। এরপরও খোঁজখবর নেওয়া হবে। এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটে থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এফএ/এমএস