সোমবার ভোরে হঠাৎ কেঁপে ওঠে সারাদেশ। ভূমিকম্পের তীব্র ঝাঁকুনিতে ঘুম ভাঙ্গে দেশের অধিকাংশ মানুষের। ঘুম ভাঙার পর ছড়িয়ে পড়ে ভূমিকম্প আতংক। প্রায় এক মিনিটের কাছাকাছি সময়ের এই ভূকম্পনে আতংক আর ভয় ছড়িয়ে পড়ে মানুষের মাঝে। দুই দফায় সংঘটিত এ ভূকম্পনে অনেকটাই ভীত হয়ে পড়ে মানুষ। ভূমিকম্পের সময় অনেকেই ঘর ছেড়ে রাস্তা এবং খোলা জায়গায় বেরিয়ে আসেন। এই আতংকের মধ্যেই ফেসবুকে স্ট্যাটাসের ঝড় ওঠে। প্রায় সবাই ফেসবুকে ভূমিকম্প নিয়ে স্ট্যাটাস দেয়া শুরু করেন। ব্যবহারকারীদের দেয়া ভূমিকম্পের স্ট্যাটাসে ভরে ওঠে ফেসবুক। অনেকে যেমন সিরিয়াস স্ট্যাটাস লিখেছেন, আবার কেউ কেউ হাস্য-রসাত্মক স্ট্যাটাসও লিখেছেন। জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য এমন কিছু স্ট্যাটাস তুলে ধরা হলো :ফেসবুক সেলিব্রেটি আরিফ আর হোসেন লিখেছেন :দুই মেয়েকে আমরা দুইজন কোলে নিয়ে বাসার গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। ছয় তলা থেকে নিচে নামব কি নামব না ভাবছি। চারিদিকে ফজরের আযান শুরু হলো এক সাথে। জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প ফার্স্ট হ্যান্ড ফিল করার পরেও ভয়টা নিমিষেই দূর হয়ে গেল। বিজ্ঞানের আফটার শকের থিওরিকে আযানের পাশে তুচ্ছ মনে হলো। এই ফিলিং জীবনে কম আসে। আর যারা পায়, তারা ভাগ্যবান। এটাকে ফজরের নামাজ পরার জন্য আল্লাহর অ্যালার্ম বলেন বা, ছোটবেলা থেকে ভুরুকুচকে শুনে আসা সেই প্রবাদটা যে ‘বিপদে পড়লে আজান দিলে কাজ হয়’ যেটাই বলেন। আজ বিজ্ঞানকে ছাপিয়ে সেই সুমধুর আজানই ছিল মানসিক শক্তির উৎস।সাংবাদিক শরীফুল হাসান লিখেছেন :ভয়াবহ ভূমিকম্প। এতো শক্ত মাত্রার ভূকম্পন আমি কোনদিন টের পাইনি। মনে হয় সবকিছু দুলিয়ে ভেঙে ফেলবে। পাখি আর কুকুরের আতঙ্কিত চিৎকার। মানুষের হুড়োহুড়ি। এখনো বুকের ভেতর ধুক ধুক বাজছে। সবাই ভালো আছে তো?সাংবাদিক আরাফাত সিদ্দিক মজা করে লিখেছেন : তারপরও আমার উনি টের পাননি। বুঝুন আমি কি নিয়ে থাকি। অথচ মৃদু অস্ফুট স্বরে আমার মুখ থেকে কিছু বেরুলে, কি বল্লে কি বল্লে করে বিল্ডিং নাড়িয়ে দেয়। না না কিছু না, আমি এম্নি বললাম। এমনি। তুমি খুব ভালো।মনোচিকিৎসক ও লেখক মোহিত কামাল লিখেছেন : ভালো আছো তো, বন্ধুরা ? ভূকম্পনের ধকল কাটিয়ে চলো আবার নেমে যাই জীবনযুদ্ধে।সাংবাদিক ইশরাত জাহান উর্মি লিখেছেন : জীবনে এমন ভূমিকম্প আগে ফিল করিনি, ঘুমন্ত মেয়েকে রেখেই প্রায় দৌড় দিয়েছিলাম, নিজেরে যে ভালোবাসি সবচেয়ে বুঝলাম।শান্ত মহাসেন নামে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন : ভয়, প্রবল ভয়। শুধু অসহায় হয়ে তাকিয়ে ছিলাম আমার মাথার ওপর দাঁড়িয়ে থাকা তিনটা মোবাইল টাওয়ার এর দিকে। না তারা হাল ছাড়ে নি। নিজের দায়িত্ব অটল ছিলো। আল্লাহ’র কাছে শুকরিয়া আপাতত ভয় দেখিয়ে ছেড়ে দিছে। এই ভূমিকম্প ভোলার না।লেখক আসমা সুলতানা শাপলা লিখেছেন :ভূমিকম্প হয়েছিল কি? অনেক্ষণ ধরে মনে হয় কাঁপছিল জানালার কাঁচ। কাঁচের শব্দে ঘুম ভেঙে ভাবি, ‘‘চোর কি? অত উঁচু, চারপাশ ফাঁকা চোর উঠবে কোনদিক দিয়ে!’’ কিছুক্ষণ পর টের পাই ঘুমঘোরে যেন কোন এক তুফানী ঝড়ে আমি শুয়ে আছি নৌকার গলুইয়ে একা। আহ সে কী দুলুনি। দারুণ ঝড়। দারুণ তুফান। তখনো বোধ করি স্বপনঘোর। হঠাৎ মনে হল এই স্বপ্নের ঘোরে যদি অবসান হয় জীবনের তবে কন্যারা একসাথে নয় কেন? দরজায় তখন একের পর এক প্রতিবেশির অনবড়ত ধাক্কা ‘‘ভূমিকম্প হচ্ছে, বাইরে বেরিয়ে আসুন।’’ কে যায় ছ’তলা থেকে নেমে অত নীচে জীবন বাঁচাতে। তার চেয়ে এই ভালো সবাই একসাথে জেনে শুনে মৃত্যুর অপেক্ষা । এক জীবনে এই বা কি কম পাওয়া - হৃদয় রতনেরে সাথে লয়ে যতনে পাশে পাশে মরণেরে বরণের অবাধ সুযোগ এই শুভ প্রত্যুষে।আব্দুল্লাহ মাহফুজ অভি লিখেছেন :এইমাত্রা কি আগে টের পেয়েছি? ভয়ঙ্কর অনুভূতি! ঘুমের ভেতর পুরো ঢাকা নেমে এসেছে রাস্তায়। মাত্রা ৬.৭।আবু সাঈদ লিখেছেন :মৃত্যভয় কি ভয়ানক। আল্লাহ নিজ হাতে বাঁচালেন। আলহামদুলিল্লাহ্। বুকটা এখনও ধপধপ করছে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে ভালো রাখুন। এআরএস/এমএস
Advertisement