মতামত

ভূমিকম্পের আঘাত, আমাদের প্রস্তুতি

তখনও ভোর হতে কিছুটা সময় বাকি। মানুষজন অধিকাংশই ঘুমিয়ে। কিন্তু তীব্র ঝাঁকুনিতে হঠাৎই তাদের ঘুম ভেঙে গেল। শুরু হল দৌড়াদৌড়ি আর্তচিৎকার।  রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সোমবার ভোর ৫টা ৫ মিনিটের দিকে শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এরফলেই আতঙ্কিত হয়ে সৃষ্টি হয় এই অবস্থার। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, উৎপত্তিস্থলে রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের তীব্রতা ছিল ৬ দশমিক ৭। উৎপত্তিস্থল ভারতের মণিপুর রাজ্যের ইম্ফল থেকে ২৯ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে। যা বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সীমান্ত-সংলগ্ন এলাকা।ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কে হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন প্রায় ৩০ জন। আহতদের বেশির ভাগই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থী। নিহত ব্যক্তির নাম আতিকুর রহমান (২৪)। তার বাড়ি জুরাইন এলাকায়। পূর্ব জুরাইনের এক বাসা থেকে দৌঁড়ে নামতে গিয়ে তার মৃত্যু হয়েছে। বাংলাদেশ ভূকম্পপ্রবণ অঞ্চলে অবস্থিত। বিজ্ঞানীদের এই কথা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যাচ্ছে। ভূমিকম্প বলে-কয়ে আসেনা। কিন্তু এজন্য করণীয় রয়েছে। এ জন্য আমরা কতোটা প্রস্তুত সে ব্যাপারে নতুন করে ভাবতে হবে। নিতে হবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।ভূমিকম্প এমন একটি দুর্যোগ যার পূর্বাভাষ এখনো বিজ্ঞানীরা দিতে পারছে না। তবে নানা গবেষণায় ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল হিসেবে বাংলাদেশের কথা উঠে এসেছে বার বার। বিশেষজ্ঞের মতে, বাংলাদেশ এখন কোনোমতেই ঝুঁকিমুক্ত নয়। কারণ গত ৮০-৮১ বছরে কোনো বড় ভূমিকম্প হয়নি। এছাড়া ইন্ডিয়ান প্লেট যাচ্ছে উত্তর দিকে, আর উত্তর দিকে আমাদের ইউরেশিয়ান প্লেট। দুটি প্লেট ধাক্কা দিচ্ছে, আর তাতে করে এর বাউন্ডারিতে এনার্জি স্টোর হচ্ছে। বেশ কিছুদিন পরপর প্রেসারটি রিলিজ করার জন্য জায়গাটি নড়ে যায়, আর তখন ভূমিকম্প হয়।ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল হওয়ায় বাংলাদেশ রয়েছে মারাত্মক ঝুঁকিতে। বিল্ডিং কোড মেনে না চলা, বন উজাড়, পাহাড় কেটে ধ্বংস করাসহ নানা উপায়ে আমরা যেন ভূমিকম্প নামক মহা বিপদকে ডেকে আনছি। এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, সারা দেশে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা লক্ষাধিক। একই সাথে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে ভূমিকম্পের কারণে সৃষ্ট ভূকম্পনেও বাংলাদেশের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে বলেও বিশ্লেষকরা বলছেন। এ ক্ষেত্রে নতুন ভবন নির্মাণে সরকারি তদারকি আরো বাড়ানো প্রয়োজন। বার বার ভূমিকম্প এ কথাই যেন স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে যে,  দুর্যোগ মোকাবেলায় আমরা আসলে কতোটা প্রস্তুত। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় বলা হয়েছে সাড়ে ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে বাংলাদেশে প্রায় ২ থেকে ৩ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটবে। রাজধানীতে দিন দিন বাড়ছে আকাশচুম্বী অট্টালিকার সংখ্যা। অল্প জায়গায় এতো বড় বড় স্থাপনা ভূমিকম্পের ঝুঁকি আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। শুধু তাই নয় বিল্ডিং কোড না মেনে তৈরি করা হচ্ছে ভবন। এতে স্বল্পমাত্রার কম্পনেই ভেঙে পড়তে পারে অনেক ভবন। এছাড়া ভূমিকম্পপরবর্তী দুর্যোগ মোকাবেলায়ও প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে হবে। তৈরি করতে হবে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী। জনসচেতনার জন্য চালাতে হবে ব্যাপক প্রচারণা। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ভূমিকম্প রোধ করা সম্ভব নয়, তবে আমরা প্রকৃতির ওপর অবিচার করে নিজেরাই যেন ভূমিকম্প ডেকে না আনি সে বিষয়ে সতর্ক থাকার কোনো বিকল্প নেই। এইচআর/এমএস

Advertisement