অফিসে পৌঁছে পিয়ারা বানু দেখল তার বস জুলমত আলী মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন। জুলমত আলীকে এ অবস্থায় দেখে গলায় বিষাদের ঢেউ তুলে সে জানতে চাইল, : স্যার, কী হইছে!: সর্বনাশের ঢোলে হিট করছে। আগামী সপ্তাহে নেদারল্যান্ডস থেইকা মাননীয় ডোনার পার্টি আসতেছে। : ডোনার আসতেছে, এইটা তো আনন্দের সংবাদ। এতে মাথায় হাত দিয়া বইসা পড়নের কী আছে?: শুইয়া যে পড়ি নাই, এইটাই আশ্চর্যজনক ম্যাটার।: ঘটনা কি খুবই সিরিয়াস?: সিরিয়াসের গ্রান্ড ফাদার। এই ব্যাটারা আমাদের নারী উন্নয়ন, বনায়ন আর গরু মোটাতাজাকরণ প্রকল্পে ডোনেশন করছে। প্রকল্পে তো ভনভন কইরা মাছি উড়তেছে। আর এদিকে টাকা-পয়সা সব ইটিং করা শেষ। : এখন তাইলে কী করবেন স্যার?: কী করব, সেই চিন্তায়ই তো বেহুশ হইয়া যাইতেছি। : বেহুশ হওনের প্রয়োজন নাই। আমি আপনেরে রাস্তা বাইর কইরা দিতেছি। : কী রাস্তা!: আগে বলেন, ম্যাডামের ওজন কতো?: ম্যাডাম মানে মাই ওয়াইফ?: জি স্যার। : তার ওজন পূর্বে ছিল একান্ন কেজি। বর্তমানে হইছে একশ তেইশ কেজি। : নারী উন্নয়নের মডেল হিসেবে আমরা ম্যাডামরে শো করব। শো করার সময় ডোনারদের ব্রিফ করব- উনার ওজন পূর্বে ছিল একান্ন কেজি আর বর্তমানে হইছে একশ তেইশ কেজি। ডিয়ার ডোনার স্যার, এইটা কি পারফেক্ট উইমেন ডেভেলপমেন্ট নয়? : মানলাম তোমার কথা; কিন্তু বনায়ন?: গাজীপুরের গজারি বনে ডোনার পার্টিরে ছাইড়া দিয়া বলব, লুক স্যার! দেখেন, বনায়নের ক্ষেত্রে আমরা কী সাড়া জাগানো ইতিহাস সৃষ্টি করছি। তবে এইখানে একটু হোমওয়ার্ক করার প্রয়োজন আছে। : কী রকম?: ডোনারদের বন দেখানোর আগে গাছপালাগুলোরে হালকা মেকআপ মাইরা লওন লাগব। : মেকআপ?: হু মেকআপ। এই যেমন ধরেন লাল ফিতা, সবুজ ফিতা দিয়া গাছগুলারে একটু বাইন্ধা দিব। তারপর গোড়ায় একটু চুনা মাইরা দিব...: মনঃপুত হইল না। : তাহলে স্যার ডোনারদের লইয়া একটা খোলা মাঠে চইল্যা যাব। ওইখানে যাইয়া বিরান মাঠ দেখাইয়া বলব, এই মাঠে লক্ষ লক্ষ গাছের চারা রোপণ করছিলাম; কিন্তু ছাগল উন্নয়নের জোয়ারে সবকিছু ভাইসা গেছে। জুলমত আলী চেচিয়ে বলে উঠলেন, : মানে?হাসতে হাসতে পিয়ারা বানু বলল,: মানে হইল স্যার, ছাগল গাছের বেবাক চারা খাইয়া ফেলছে। : বুঝলাম; কিন্তু গরু মোটাতাজাকরণ প্রকল্পের কি উপায় হবে?: এইটা আরও বেশি ইজি। : যেমন?: আমরা ডোনারদের লইয়া সোজা গাবতলীর হাটে যাব। ওইখানে যাইয়া মোটা মোটা ষাঁড় দেখাইয়া বলব, দিস ইজ আওয়ার প্রজেক্ট বোওল। আর পাইকাদের দেখাইয়া বলব, দিস ইজ আওয়ার ফার্মার। : কিন্তু পাইকার ব্যাটারা যদি বিরিংতাল ঘটায়?: মাথা খারাপ হইছে আপনের? বিদেশিদের সেখানে লইয়া গেলে দেখবেন বাঙালি পাবলিক মাখনের মতো গইলা পড়তেছে। তারপরও স্পেশাল সিকিউরিটি হিসেবে তাদের বলব, ভিজিট শেষ হইলে তোমাদের ঠান্ডাসহ বিরিয়ানি খাওয়াব উইথ পান-সিগারেট। ডোনাররা তো আর বাংলা বুঝবো না। দেখবেন দুই পক্ষই ফিট। ডোনাররা খুশি জাম্বু সাইজের ষাঁড় দেইখা আর গরুর পাইকাররা খুশি বিরিয়ানি খাইয়া। : প্রকল্প সমস্যার সমাধান তো দিলা পিয়ারা; কিন্তু ব্যাটাদের থাকতে দিব কোথায়? একটা রেস্টহাউজ করার জন্য তাদের কাছ থেইকা যে ফান্ড পাইছিলাম, সব তো খাইয়া বইসা রইছি। : এইটাও কোনো বিষয় নয়। ডোনাররা হইল আমাদের মামাশ্বশুর। কাজেই তাদের মামাশ্বশুরের মতোই আদর-যত্মে রাখাটা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। তাদের সোনারগাঁও হোটেলে তুইলা দিব। পাশাপাশি একটা এসি মাইক্রোবাস ভাড়া করব। আশা করি, বাংলাদেশ থেইকা তারা বেজার হইয়া যাবে না; আমাদের আতিথেয়তায় সন্তুষ্ট হইয়াই তারা গো টু নেদারল্যান্ডস। : আমি তো এইটাই চাই। ডোনার বেজার হইলে তো গাট্টি-বোচকা সব গোল কইরা দোকানদারি ক্লোজ করতে হবে। জুলমত আলীর কথা শুনে পিয়ারা বানু হেসে বলল, : আশা করি আমাদের বেলায় এ ধরনের ঘটনা ঘটবে না স্যার।
Advertisement
লেখক : সাংবাদিক, রম্যলেখক ।
এইচআর/ফারুক/জিকেএস
Advertisement