কক্সবাজারের প্রথম শ্রেণির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন ইন্টারন্যাশনালের বিরুদ্ধে লেবার কন্ট্রাক সোসাইটি (এলসিএস) প্রকল্পের নারী শ্রমিকদের বেতনের ৩৮ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। ওই টাকার দাবিতে রোববার জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও করেছেন ভুক্তভোগি শ্রমিকরা। পরে তারা ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও সকলের কাছে স্মারকলিপি দেন। এসময় জেলা প্রশাসক বিষয়টি দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন।স্মারকলিপি সূত্রে জানা গেছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃপক্ষ ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এলজিইডির নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত উখিয়া উপজেলার কোর্টবাজার-সোনাপাড়া-মনখালী সড়ক এবং টেকনাফের বাস স্টেশন-শামলাপুর সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য এলসিএস প্রকল্পে চারজন সুপারভাইজার ও ৬১ জন নারী শ্রমিক নিয়োগ দেয়। মাসে প্রতিজন সুপারভাইজারের বেতন ছয় হাজার টাকা এবং প্রতিজন নারী শ্রমিকের বেতন সাড়ে চার হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়।নিয়োগের পর থেকে একটানা ১৬ মাস ৬৪ কিলোমিটার সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ করে শ্রমিকরা। ওই ১৬ মাসের মধ্যে কয়েক দফায় সুপারভাইজার ও শ্রমিকদের প্রতিজনকে বেতন দেয়া হয় মাত্র ১৮ হাজার টাকা করে। এরপর বেতনের আর কোনো টাকা পরিশোধ করেনি উন্নয়ন ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃপক্ষ। এতে নির্ধারিত বেতন অনুযায়ী সুপারভাইজার ও এলসিএস কর্মীদের বকেয়া পড়ে আরো ৩৮ লাখ টাকা।ওই পাওনা টাকার দাবিতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স উন্নয়ন ইন্টারন্যাশনালের স্বত্ত্বাধিকারী আতিকুল ইসলাম সিআইপির কাছে শ্রমিকরা বারবার ধর্না দিলে টাকা পরিশোধ না করে উল্টো নানা ধরনের তালবাহনা করেন তিনি।রক্ষণাবেক্ষণ কাজের সুপারভাইজার আব্দুল আমিন জানান, আতিক সিআইপির কাছে বেশ কয়েকবার শ্রমিকের পাওনা মজুরি চাইতে গিয়ে লাঞ্ছিত হয়েছেন। টাকা দেয়ার পরিবর্তে উল্টো শ্রমিকদের মেরে লাশ গুম করার হুমকি দেন আতিক। পরে বাধ্য হয়ে উন্নয়ন ইন্টারন্যাশনালের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করলে তিনি এলজিইডি কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলীকের যাচাই পূর্বক দ্রুত শ্রমিকের মজুরি পরিশোধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু এখনো শ্রমিকদের পরিশ্রমের বকেয়া টাকা পরিশোধের কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।কোনো সুরাহা না পেয়ে শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীসহ দফতরে অভিযোগ করতে বাধ্য হয়েছি। এরপরও যদি টাকা আদায় না হয় তাহলে সকল শ্রমিকরা কঠোর কর্মসূচি দেবে।এলসিএস কর্মী মিনারা আক্তার জানান, খেয়ে না খেয়ে দায়িত্বপালন করেছি। কোনোদিন দায়িত্বে অবহেলা করেননি কেউ। কিন্তু ওই ঠিকাদারি কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের মজুরি নিয়ে তামাশা শুরু করেছে। চুক্তি শেষ হলেও এখনো বকেয়া ৩৮ লাখ টাকা পরিশোধের কোনো মানসিকতা দেখছি না। এখন সব শ্রমিক চরম অসহায়ত্বের সঙ্গে জীবন যাপন করছে। বকেয়া টাকা পাওয়ার আশায় ধারদেনা করে জীবন চালাচ্ছেন সবাই।এলসিএসর আরেক উপজাতি কর্মী মাবুচিং চাকমা (৪৮) জানান, এলসিএস শ্রমিকদের বেশিরভাগই স্বামী পরিত্যক্তা বা চরম দরিদ্র। আমরা সঠিকভাবে দায়িত্ব সম্পন্ন করলেও বেতন পরিশোধ করছে না কর্তৃপক্ষ। পাওনা টাকার দাবিতে এ পর্যন্ত অনেকবার ধারদেনা করে জেলা শহরে এসেছি। কিন্তু নির্বাহী প্রকৌশলী থেকে শুরু করে সরকারি সকল কর্তাব্যক্তিরা প্রতারক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে যোগসাজস করে আমাদের পাওনা আদায়ে অসযোগিতা করছে। তাই বাধ্য হয়ে শেষ ভরসা হিসেবে প্রধানমন্ত্রীসহ ঊর্ধ্বতন মহলের কাছে আবেদন করেছি।অভিযোগের বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে মেসার্স উন্নয়ন ইন্টারন্যাশনালের স্বত্ত্বাধিকারী আতিকুল ইসলাম সিআইপি বলেন, অনিয়মের কারণে অনেক আগে এসব শ্রমিকদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এখন কেন তারা আন্দোলন করছে সে সম্পর্কে আমি জ্ঞাত নয়। তিনি ওই শ্রমিকদের এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলার পরামর্শ দেন।সায়ীদ আলমগীর/বিএ
Advertisement