বাংলাদেশে ভ্রমণের স্থান নেহাতই কম নয়। পাহাড়-পর্বত, সমুদ্র-সৈকত, নদী, ঝরনা, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহ, পার্ক, রিসোর্টসহ নানা ধরনে বিনোদনকেন্দ্র আছে দেশের বুকেই। যদিও ভ্রমণের উদ্দেশ্যে বর্তমানে বাংলাদেশিরা বিদেশে যান, তবে দেশের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানসমূহে ভিড় করা পর্যটকের সংখ্যা কম নয়।
Advertisement
দেশের পর্যটনশিল্পের বর্তমান অবস্থা নিয়ে পরিচালিত এক জরিপের ফল প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। কোথাও ঘুরতে গিয়ে যারা এক রাতের বেশি সময় বাইরে কাটিয়েছেন, জরিপে তাদেরকেই পর্যটক হিসেবে ধরেছে বিবিএস।
‘ট্যুরিজম স্যাটেলাইট অ্যাকাউন্ট’ শীর্ষক জরিপটিতে দেশে পর্যটকের সংখ্যা ও ভ্রমণ ব্যয়ের পরিমাণ, মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) পর্যটন খাতের অবদান ইত্যাদি সম্পর্কে যেমন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
এমনকি দেশের কোন কোন স্থানে পর্যটকদের বেশি আনাগোনা, সে তথ্যও দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে শুধু ভ্রমণের উদ্দেশ্যেই পর্যটকরা গেছেন এমন ২৪টি স্থানের তালিকা আছে। জেনে নিন দেশের প্রথম ১০টি জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানের কথা-
Advertisement
কক্সবাজার
এ তালিকার প্রথমেই আছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের নাম। দেশের পর্যটকদের মধ্যে সর্বাধিক মানুষ ভ্রমণ করেন কক্সবাজারে। এ কারণে কক্সবাজারকে বলা হয় পর্যটন রাজধানী।
বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতটি বছরের বেশিরভাগ সময়ই পর্যটকদের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। টেকনাফ-কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়কও অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় মানুষদের পছন্দের জায়গা।
এ ছাড়াও কক্সবাজারে আছে নানা পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্র। কক্সবাজারে গেলে সেসব স্থান ভ্রমণ করতে ভোলেন না পর্যটকরা।
Advertisement
পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম
দেশের জনপ্রিয় ১০ স্থানের মধ্যে তালিকার দ্বিতীয়তে আছে পতেঙ্গা। সাগরের বুকে অস্তমিত সূর্যের আলোর রূপ দেখতে ও বিশুদ্ধ বাতাসে শ্বাস নিতে পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেকে ছুটে যান চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে। এ সৈকতের ৫ কিলোমিটার এলাকায় সৌন্দর্য বৃদ্ধির কারণেও বেড়েছে পর্যটকরা।
কুয়াকাটা, পটুয়াখালী
তালিকার প্রথম ৩ স্থানই সমুদ্র সৈকত। একই স্থান থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত উপভোগের বিরল দৃশ্যের স্বাক্ষী হতেই কুয়াকাটা ছুটে যান পর্যটকরা। পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় জায়গাটি ৩ নম্বরে রয়েছে।
শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার
চা বাগানের মনোরম দৃশ্য অবলোকন করতে প্রথমেই আসে শ্রীমঙ্গলের নাম। জানেন কি, এ স্থানেও দেশের বেশিরভাগ পর্যটক ভিড় করেন।
সবুজ চা-বাগানের পাশাপাশি শ্রীমঙ্গলে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান আছে। এমনকি ৫ তারকা হোটেলসহ সেখানে গড়ে উঠেছে অসংখ্য মানসম্পন্ন রিসোর্ট। বছরজুড়ে পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় থাকা শ্রীমঙ্গল জনপ্রিয়তায় চতুর্থ।
বান্দরবান
দেশের জনপ্রিয় স্থানসমূহ, যেখানে পর্যটকরা বেশি ভিড় করেন- এমন স্থানের মধ্যে ৫ নম্বরে আছে বান্দরবান। উঁচু পাহাড়ে উঠে চারপাশের দৃশ্য উপভোগ করা কিংবা মেঘ হাতে নিয়ে খেলা করার দৃশ্য আপনি শুধু বান্দরবানে গেলেই দেখতে পাবেন। বান্দরবানের নীলাচল থেকে নীলগিরি, মেঘলা থেকে মিরিঞ্জা পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে অসংখ্য দর্শনীয় স্থান।
সাজেক উপত্যকা, রাঙামাটি
পাহাড়ে ঘুরতে যাওয়ার কথা মনে আসলেই এখন সবাই ছুটছেন সাজেকের পানে। দেশের জনপ্রিয় স্থানের তালিকায় ৬ নম্বরে আছে সাজেক উপত্যকা। এর অবস্থান রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায়।
পাহাড়ের চূড়ায় সাদা মেঘের আনাগোনা সাজেককে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। পর্যটকদের জন্য এখানে শতাধিক রিসোর্ট ও কটেজ গড়ে উঠেছে। পাশাপাশি সেখানকার মনোরম দৃশ্য ও আবহাওয়া পর্যটকদের মুগ্ধ করে।
বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর, সোনারগাঁ, নারায়ণগঞ্জ
১৯৭৫ সালে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের উদ্যোগে এ জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের লোকশিল্পের সংরক্ষণ, বিকাশ ও সর্বসাধারণের মধ্যে লোকশিল্পের গৌরবময় দিক তুলে ধরার জন্যই এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে সংরক্ষিত আছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কারুশিল্পীদের হাতে তৈরি ঐতিহ্যবাহী প্রায় ৫ হাজার নিদর্শন।
রাঙামাটি
দেশের জনপ্রিয় স্থানসমূহের তালিকার ৮ নম্বরে আছে রাঙামাটির নাম। সেখানকার কাপ্তাই হ্রদ, ঝুলন্ত সেতু, রাজবন বিহারসহ জেলা সদরের বিভিন্ন পর্যটনস্থানে বছরজুড়েই পর্যটকেরা ভ্রমণ করেন।
সুন্দরবন
ভ্রমণপিপাসুদের আনাগোনা সুন্দরবনেও কম নয়। সুন্দরবনেরর হাজার হাজার গাছ-গাছালির সৌন্দর্য ও প্রাণী পর্যটকদেরকে সব সময় আকর্ষণ করে। এ ছাড়াও সমুদ্রের তীরবর্তী ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন দেখতে দেশের আনাচে-কানাচে থেকে পর্যটকরা ছুটে যান।
বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা, ঢাকা
ঢাকার জাতীয় চিড়িয়াখানায় বছরজুড়েই দর্শনার্থীদের ভিড় লেগে থাকে বলে জানা গেছে বিবিএস-এর জরিপে। রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত জাতীয় চিড়িয়াখানার নাম আছে তালিকার দশে।
দুটি লেকসহ ১৮৬ একরের এই চিড়িয়াখানায় শতাধিক প্রজাতির প্রায় ৩ হাজার পশুপাখি আছে। করোনা সংক্রমণের আগে প্রতিদিন গড়ে দর্শনার্থীর সংখ্যা ছিল ১২ হাজারের মতো।
আরও যেসব স্থানে বেশি যান পর্যটকরা
মেহেরপুরের মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ, কক্সবাজারের সেন্ট মার্টিন ও সিলেটের জাফলং, কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় অবস্থিত বাউলসম্রাট ফকির লালন শাহের মাজার, ঢাকার লালবাগ কেল্লা, দিনাজপুরের কান্তজিউ মন্দির।
এ ছাড়াও বগুড়ার মহাস্থানগড়, খাগড়াছড়ি, নওগাঁর পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার, সিলেটের সীমান্তবর্তী জৈন্তাপুর উপজেলার লালাখাল, সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ, সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার রাতারগুল ও বিছনাকান্দি, বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদেও বছরজুড়ে ভিড় লেগেই থাকে পর্যটকদের।
জেএমএস/এমএস