নিজে থেকে তদারকি না করলে পুরোটাই যে ভেস্তে যেতো, এ কথা আগে থেকেই জানা ছিল। যে কারণে সকাল-বিকেল নিজের সবজি খেতে প্রচুর খাটুনিও দিতে হয়েছে। আর এখন? রোজ সকালে কম করে হলেও হাজার পাঁচেক কামাই। বলা হচ্ছিল, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের প্রত্যন্ত অঞ্চলের যুবক প্রসেনজিৎ রুদ্র পালের কথা।
Advertisement
সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা না পেলেও পড়াশোনা ছেড়ে নতুন করে কৃষিকাজেই মন বসিয়েছেন তিনি। গত কয়েক বছরে কৃষিতে দারুণ সফলতাও পেয়েছেন। নিজেদের জমিতে কৃষিকাজ করে এখন তিন স্বাবলম্বী। বাজারের চাহিদা বুঝে ফলাচ্ছেন বাহারি ফসল। উপার্জন করছেন কাড়ি কাড়ি টাকা।
পড়াশোনায় তেমন ভালো না হলেও একটু একটু করে স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে শহর আগরতলার রামঠাকুর কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন প্রসেনজিৎ। এরপর কোভিড পরিস্থিতিতে দ্বিতীয় বর্ষ পর্যন্ত পড়া চালানোর পর হঠাৎই সবজি চাষের ভুত চাপে তার মাথায়। বাড়িতে বসে সময় নষ্ট না করে শুরুতে অল্প জমিতে মরিচের চারা রোপণ করেন। তাতে লাভের মুখ দেখার পর চাষাবাদের প্রতি তার নেশা আরও বেড়ে যায়।
মৌসুমি সবজি চাষে বেশ পাকা হয়ে উঠছে কুড়ি বছর বয়সী এ যুবক। বাজারে যখন যে সবজির কদর তা বুঝেই চাষ করছেন তিনি। লাউয়ের চাহিদা মাথায় রেখে দুর্গাপূজার পরই কিছু জমিতে লাউয়ের বীজ পুঁতে দেন। সেগুলোতে সকাল-বিকেল যত্ন করেন। কিন্তু অসময়ের বৃষ্টিতে তার স্বপ্ন যেন চুরমার হওয়ার উপক্রম হয়। পুরো জমি তলিয়ে যায় পানির নিচে। এরপর বহু চেষ্টায় তলানো জমির বীজ থেকে পানি অপসারণ করেন।
Advertisement
গত রোববার বিশ্রামগঞ্জ থানার অন্তর্গত বড়জলা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, পুরো জমিটিতেই কোনো না কোনো ফসল চাষে ব্যস্ত প্রসেনজিৎ। কথা বলে জানা যায়, ১৫ হাজার টাকা খরচ করে পুরো এক কানি জমিতে লাউয়ের বীজ রোপন করেন তিনি। ভারী বৃষ্টিতে তার চোখের সামনেই আশপাশের জমির ফসল নষ্ট হতে দেখলেও বহু চেষ্টায় নিজের লাউ ক্ষেতটিকে রক্ষা করেছেন তিনি।
প্রসেনজিৎ রুদ্র পাল জানান, প্রতি বছরই লাউ, আলু, করমচা, মরিচ, ধান, বেগুন, টমেটো থেকে শুরু করে প্রচুর পরিমাণ পাতা সবজি চাষ করছেন। তাতে লাভের মুখও দেখছেন। তবে অসময়ের বৃষ্টিতে এবছর আলু থেকে মরিচ, সবকিছুই পচে গিয়েছে। লাউ ক্ষেতটিও নষ্ট হতে বসেছিল। অনেক খাটুনি দিয়ে সেটি রক্ষা করা গেছে। এখন প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজার টাকার লাউ বিক্রি করছেন তিনি। এরইমধ্যে ৫০ হাজার টাকার লাউ বিক্রি হয়ে গেছে।
এই সবজি চাষি যুবক আরও জানান, একই জমিতে মোট দুই ধরনের লাউ চাষ করেছেন তিনি। এরমধ্যে একটি ডায়না লাউ, অন্যটি প্রগতি লাউ। পশ্চিমবঙ্গ থেকে তারই এক ভাই তাকে এই প্রগতি লাউয়ের বীজ দেয়। এ বীজের লাউগুলি বেশ লম্বা আকৃতির এবং বাজারে এ জাতের লাউয়ের দামও বেশি। ডায়না লাউয়ের দামও মন্দ নয়।
কোনো ধরনের সরকারি প্রণোদনা ছাড়া স্ব-উদ্যোগে ফসল উৎপাদনে নেমে সফলতা পাওয়ায় প্রসেনজিৎ এখন অনেক যুবকের অনুপ্রেরণা। তবে ক্ষেতে বানরের উপদ্রব নিয়েই তার যত সমস্যা। নিয়মিতই বানর তাড়াতে পাহারা দিতে হয়। কিনেছেন একটি ট্রাক্টরও। বানর তাড়াতে সেটিও কাজে আসে। পরিশ্রমকেই নিজের জীবনে সফলতার মন্ত্র করে নিয়েছেন এ যুবক।
Advertisement
এমকেআর/এমএস