জাগো জবস

চাকরির পাশাপাশি উদ্যোক্তা হলেন মারিয়া মীম

মারিয়া মীমের জন্ম ফরিদপুরে। বাবা মো. হাসেম মৃধা, মা হাফিজা খাতুন। মীম ফরিদপুরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ থেকে ব্যবসায় স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। পাশাপাশি হয়েছেন উদ্যোক্তা। সম্প্রতি তার চাকরি ও উদ্যোগ সম্পর্কে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সালাহ উদ্দিন মাহমুদ—

Advertisement

জাগো নিউজ: প্রথমেই আপনার পড়াশোনা সম্পর্কে জানতে চাই—মারিয়া মীম: জীবনের প্রথম শিক্ষা শুরু হয় ব্যাপটিস্ট চার্চ স্কুলে শিশু শ্রেণি থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত। তারপর গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুলে তৃতীয় শ্রেণি থেকে এসএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা করি। ফরিদপুরের সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করি। শেষে সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ থেকে এম.কম সম্পন্ন করি। সিএ (সিসি) করেছি মোস্তাফিজ হক অ্যান্ড কোম্পানি ফার্ম থেকে।

জাগো নিউজ: উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেছেন কবে থেকে?মারিয়া মীম: ছোটবেলা থেকে কিছু একটা করতে চাই, করতে হবে। তবে অনার্স থেকে বুটিকসের কাজ করি। এলাকার দুস্থ নারীদের নিয়ে সমিতি করেছিলাম। তাদের অংশগ্রহণে বুটিকস হাউজটি দাঁড় করাতে চেয়েছিলাম। পরে ঢাকায় সিএ করতে এসে আর কন্টিনিউ করা যায়নি।

জাগো নিউজ: চাকরির পাশাপাশি উদ্যোক্তা হওয়ার কারণ বলবেন কি?মারিয়া মীম: চাকরিটা করছি কিছুই করতে পারিনি বলে। মাস শেষে একটি ফিক্সড বেতন পাবো, টেনশন নেই। তাই চাকরি করছি। নিজস্ব একটা কিছু করার চেষ্টা করি। নিজের ভালো লাগা, শখকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া, নিজের পণ্যকে জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া এবং অথনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার প্রচেষ্টা থেকেই উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছা জাগে।

Advertisement

জাগো নিউজ: আপনার উদ্যোগের ধরন ও কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাই—মারিয়া মীম: কাজ করছি হোম মেড খাবার নিয়ে। ছোটবেলা থেকে রান্না করতে ভালো লাগত। যেখানে যা রেসিপি পেতাম, নিয়ে আসতাম। কখনো চিন্তা করিনি নিজ রান্নাঘর থেকেও হোম বেকিংয়ের কাজ করা যায়। ই-কমার্স আর করোনার কারণে রান্নাঘর আজ রেস্তোরাঁ হয়ে গেছে। তাই আমিও শুরু করলাম। প্রথমে ফেসবুকে একটি বিজনেস পেজ খুলে আমার সব রেসিপি পোস্ট করলাম। বিভিন্ন গ্রুপে জয়েন করলাম। প্রতিদিন নতুন নতুন পোস্ট করি। খাবারের গুণাগুণ সম্পর্কে তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করি। ইনভাইট করি বিভিন্ন পেজে, বুস্টিং করি এবং প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকি। বিভিন্ন সেমিনার, কর্মশালা ও বেকিং কোর্সে যোগ দিয়ে থাকি নিজেকে আরও যোগ্য করে তোলার জন্য। সারারাত কাজ করি, যখন অর্ডার থাকে। ডেলিভারি ম্যান আছে হোম ডেলিভারির জন্য। কাঁচামাল সংগ্রহ করি গুলশান ডিসিসি মার্কেট থেকে। মাঝে মাঝে অনলাইনেও কিনে থাকি।

জাগো নিউজ: চাকরিজীবী এবং উদ্যোক্তার মধ্যে কী কী পার্থক্য দেখতে পান?মারিয়া মীম: চাকরিজীবী এবং একজন উদ্যোক্তার মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। চাকরির ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অফিসে অবস্থান করতে হয়। নির্দিষ্ট কাজ বা দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারলেই শেষ। সময়মতো মাস শেষে বেতন নিশ্চিত। ঝুঁকিমুক্ত ও চিন্তা কম। বছর শেষে বেতন বৃদ্ধি কমবেশি যা-ই হোক। আর চাকরি সরকারি হলে তো কথাই নেই। কিন্তু একজন উদ্যোক্তার ক্ষেত্রে ২৪ ঘণ্টা ডিউটি করতে হয়। শতভাগ ঝুঁকি বহন করার ক্ষমতা থাকতে হয়। ব্যক্তিগত জীবন ও প্রফেশনাল জীবন কখনো কখনো মেনটেন কষ্টকর হয়ে যায়, বিশেষ করে নারীর ক্ষেত্রে। সর্বদাই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়। অবসর বা পেনশন নেই। এ অসুবিধাগুলো নিয়েই একজন উদ্যোক্তাকে আরম্ভ করতে হয়। প্রতিটি সফল উদ্যোক্তার পেছনে অনেক গল্প আছে। ধৈর্য ধরা আর কঠোর পরিশ্রম করার মানসিকতা থাকতে হবে।

জাগো নিউজ: একজন উদ্যোক্তার সফলতা ও ব্যর্থতা কীসের ওপর নির্ভর করে?মারিয়া মীম: একজন উদ্যোক্তাকে সফল হতে হলে অনেক ধৈর্য ধরার ক্ষমতা থাকতে হবে। সৎ থাকতে হবে। কঠোর পরিশ্রম করার মানসিকতা থাকতে হবে। কমিটমেন্ট অনুযায়ী কাজ করতে হবে। কাস্টমারের মনোভাব ও চাহিদা বোঝার ক্ষমতা থাকতে হবে। যে কোনো চ্যালেঞ্জ নেওয়ার ও মোকাবেলা করার মানসিকতা থাকতে হবে। প্রচারণা ও প্রসারের ক্ষেত্রে সুকৌশলী হতে হবে। সঠিক দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করতে হবে। পণ্যের গুণগত মান বজায় রাখতে হবে। ব্যবসা পরিচালনার জন্য সব ধরনের আইনি বৈধতা নিশ্চিত করতে হবে। একজন উদ্যোক্তার ব্যর্থতা তখনই আসবে; যখন তিনি উপরের গুণাবলী অর্জন করতে পারবেন না।

জাগো নিউজ: উদ্যোক্তা হিসেবে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?মারিয়া মীম: আমার এ বেকারিকে হোমের ভেতর সীমাবদ্ধ রাখতে চাই না। দেশের শীর্ষ পর্যায়ের বেকারিগুলোর মতো তৈরি করতে চাই। সকালে ঘুম থেকে উঠে আমার পণ্য দিয়ে নাস্তা শুরু করবে। আনন্দ-আড্ডায় আমাকে মনে রাখবে। এমনভাবে মানুষের অন্তরে জায়গা করে নিতে চাই।

Advertisement

জাগো নিউজ: যারা উদ্যোক্তা হতে চান, তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?মারিয়া মীম: উদ্যোক্তাদের জন্য বলবো, সবাই উদ্যোগ নিতে পারেন না বা জানেন না। আপনি যে কাজটি করতে ভালোবাসেন ও ভালো করে জানেন, সেই কাজটি দিয়ে শুরু করতে পারেন। এজন্য অনেক ধৈর্য ও পরিশ্রম করতে হবে। পিছপা হলে চলবে না, ভেঙে পড়লে হবে না। আপনার কোনো উদ্যোগ বা কাজ যেন অন্যের ক্ষতির কারণ না হয়, সে ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। শুধু অর্থের জন্য নিজের উদ্যোগকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলবেন না। সর্বোপরি দেশকে, দেশের মানুষকে ও দেশীয় পণ্যকে পছন্দের তালিকায় জায়গা দেওয়া উচিত।

এসইউ/এএসএম