পৃথিবীতে মাত্র ১২৫ জন আছে ওরা, বসবাস নিউজিল্যান্ডের প্রশান্ত মহাসাগরের একটা দ্বীপে, নাম কাকাপো। এরা এক ধরনের বিশালাকার টিয়াপাখি, যারা আবার উড়তে পারে না। এদেরই একজন সিরোকো -যে আবার নিজেকে মানুষ বলে ভাবতেই ভালবাসে! এছাড়া ভি ভি আই পি এই কাকাপো নিউজিল্যান্ডের বণ্যপ্রাণ সংরক্ষনের প্রতীক যার আবার একটা সরকারী চাকরিও আছে!টিয়াপাখি সিরোকো-কে নিয়ে একটা তথ্যচিত্র বানিয়ে বণ্যপ্রাণ ছায়াছবির ক্ষেত্রে অস্কার বলে খ্যাত প্যান্ডা পুরস্কার পেয়েছেন কলকাতার অশ্বিকা কাপুর।জন্মগতভাবে অবাঙ্গালি অশ্বিকা বাংলাতে কথা বলতেই বেশী স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। তিনি জানান, নিউজিল্যান্ডে বণ্যপ্রাণীদের ওপরে তথ্যচিত্র নিয়ে পড়াশোনা করছিলাম স্নাতোকত্তর স্তরে। কোর্সের অংশ হিসাবেই আমাকে একটা তথ্যচিত্র তৈরী করতে হত। কিন্তু বাজেট ছিল মাত্র ৫০০ পাউন্ড। তাই কাছাকাছির কোনও একটা প্রাণীর ওপরেই আমাকে ছবি করতে হত। রিসার্চ করতে গিয়ে আমি কাকাপোদের খুঁজে পাই। যারা মাত্র ১২৫ জন রয়েছে প্রশান্ত মহাসাগরের একটা দ্বীপে। তার মধ্যে এই সিরোকো হচ্ছে স্পেশ্যাল। সে নিজেকে মানুষ বলে মনে করে।একটা বিরল প্রজাতির টিয়া পাখি নিজেকে মানুষ মনে করে কেন, সেই ইতিহাস আরও মজাদার আর বিস্ময়কর!অশ্বিকা আরও জানান, ওর জন্মের পরেই একটা অসুখ হয়। নিশ্বাস-প্রশ্বাসের অসুখ। ও হয়তো বাঁচতোই না। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের বণ্যপ্রাণী সংরক্ষণ কর্তারা একটাও কাকাপো-কে মরতে দিতে চাননি। তাই ওকে দ্বীপ থেকে নিয়ে আসেন আর একজন ওকে বড় করতে থাকেন। পাখিদের অনেক সময়েই যারা বড় করে, তাদেরকেই ওরা মা বলে মনে করে। সিরোকোর ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।মানুষের কাছে বড় হওয়ার ফলে এখন তাদের সঙ্গে ঘোরা ফেরা করতেই বেশী স্বাচ্ছন্দ্য সিরোকো। আর অন্য কাকাপোদের কাছে নিয়ে গেলে ও নিজের জাতভাইদের চিনতেই পারে না, অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে থাকে।নিউজিল্যান্ডে বণ্যপ্রাণীদের ওপরে তথ্যচিত্র নিয়ে পড়াশোনা করেছেন- অশ্বিকা কাপুরঅশ্বিকা বলেন, ও এতটাই গুরুত্ব পায় যে সিরোকো যখন প্লেনে যাতায়াত করে, তখন ওর জন্য একটা আলাদা আসন থাকে, বিশেষ সিট বেল্ট থাকে। ও প্লেনে উঠলেই পাইলট ঘোষণা করেন যে সিরোকো ইজ অন বোর্ড – তখন সবাই হাততালি দেয়। ওর সঙ্গে একটা গোটা দল থাকে -ওর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য।সিরোকোকে নিয়ে তৈরী তথ্যচিত্রটা একা হাতে বানিয়েছেন অশ্বিকা। রিসার্চ, স্ক্রিপ্ট তৈরী, ছবি তোলা, এডিটিং, এমন কি মিউজিক -সবই একাই করেছেন।বণ্যপ্রাণী নিয়ে তথ্যচিত্র তৈরী করতে মহিলাদের সাধারণত দেখা যায় না। তবে এই দিকে কীভাবে আকৃষ্ট হলেন অশ্বিকা। এমন এক প্রশ্নের জবাবে অশ্বিকার জানান, আমি ছোট থেকে অনেক সিনেমা, বিজ্ঞাপনে কাজ করতাম। ছোটখাটো কাজ, তবে করতাম নিয়মিত। তাই ফিল্ম জগত আমাকে আকৃষ্ট করত। আর একই সঙ্গে আমার শোয়ার ঘরটা একটা ছোটখাটো চিড়িয়াখানা হয়ে গিয়েছিল। গিনিপিগ, পায়রা, ইঁদুর, খরগোষ আর একটা বক -এসব আমার ঘরে থাকত। তাই ফিল্ম জগতের সঙ্গেই প্রাণীরাও আমার আরেকটা আকর্ষণ ছিল। যখন জীবনে কী করব সেটা ঠিক করার সময় এল, তখন আমার দুটো ভাল লাগাকেই এক জায়গায় নিয়ে এলাম এবং ওয়াইল্ড লাইফ ফিল্মমেকিংয়ের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকায় চলে গেলাম।সিরোকোকে নিয়ে তৈরী এই তথ্যচিত্র আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্তি পাবে ডিসেম্বরে। তবে তার আগেই একটি বিদেশী চ্যানেলের হয়ে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ঘুরে বণ্যপ্রাণীদের নিয়ে একটি সিরিজ তৈরী করছেন অশ্বিকা।সিরোকোর একটা জনসংযোগ টীম আছে -যারা ওর হয়ে টুইটার ফেসবুকে কমেন্ট করে। যে কেউ ওকে ফেসবুকে মেসেজ পাঠাতে পারেন, দেখবেন ও উত্তর দেবে! -বিবিসি
Advertisement