ফেনীর আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য এবং আলোচিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব জয়নাল আবেদীন হাজারী আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।
Advertisement
সোমবার (২৭ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। ব্যক্তিজীবনে জয়নাল হাজারী চিরকুমার ছিলেন।
ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী ও জয়নাল হাজারী সম্পাদিত ‘হাজারিকা প্রতিদিন’ পত্রিকার বার্তা সম্পাদক জসীম উদ্দিন জাগো নিউজকে তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন।
ল্যাবএইড হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকর্তা মেহের এ খোদা জাগো নিউজকে জানান, সোমবার বিকেল আনুমানিক সোয়া ৫টায় কার্ডিয়াক বিভাগে লাইফ সাপোর্টে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জয়নাল হাজারীর মৃত্যু হয়। তিন দিন আগে তিনি হৃদরোগসহ নানা সমস্যা নিয়ে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) ভর্তি হন। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সোহরাব উজ্জামানসহ একাধিক চিকিৎসকের অধীনে মেডিকেল বোর্ড গঠন করে তার চিকিৎসা চলছিল। সোমবার সকালে তিনি আরেক দফা হৃদরোগে আক্রান্ত হন এবং লাইফ সাপোর্টে থাকাবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
Advertisement
মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টায় ফেনী সরকারি পাইলট স্কুল মাঠে তার নামাজে জানাজা হবে। পরে ফেনী শহরের মাস্টার পাড়ায় নিজ বাসভবনের সামনে মুজিব উদ্যানে তাকে দাফন করা হবে।
১৯৪৫ সালের ২৪ আগস্ট ফেনী শহরের সহদেবপুর নিবাসী হাবিবুল্লাহ পণ্ডিতের বাড়িতে আব্দুল গণি হাজারী ও রিজিয়া বেগমের সংসারে জন্ম জয়নাল আবেদীন হাজারীর। হাবিবুল্লাহ পণ্ডিত ছিলেন তার নানা।
জয়নাল হাজারী ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতি শুরু করেন। ছাত্রাবস্থায় ফেনী সরকারি কলেজে তৎকালীন ছাত্র মজলিশের (বর্তমান ছাত্র সংসদ) সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ছিলেন। এরপর বৃহত্তর নোয়াখালী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হন। পরে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য পদেও দায়িত্ব পালন করেন জয়নাল হাজারী।
একাত্তরের রণাঙ্গনের এ বীরসেনানী ১৯৮৪-২০০৪ পর্যন্ত ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ফেনী-২ (ফেনী সদর) আসন থেকে ১৯৮৬, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে এমপি নির্বাচিত হন তিনি। শেষবার এমপি হয়ে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি পদেও দায়িত্ব পালন করেন।
Advertisement
২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নিলে ১৭ আগস্ট রাতে তার বাড়িতে অভিযান চালায় যৌথবাহিনী। তিনি তখন ভারতে চলে যান। ২০০৪ সালে জয়নাল হাজারীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এলে তিনি ভারত থেকে দেশে ফেরেন এবং চলমান মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে একে একে সব মামলা থেকে অব্যাহতি পান হাজারী। কিন্তু ফেনী জেলা আওয়ামী লীগে ফিরে পাননি নিজের হারানো অবস্থান। পরে তিনি ‘হাজারিকা প্রতিদিন’ নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনায় মনোযোগী হন।
রাজনৈতিক সতীর্থ ও প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিষয়ে নানা মন্তব্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব থাকা জয়নাল হাজারী ২০১৯ সালে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদে পদ পান।
নুর উল্লাহ কায়সার/এসআর/এমইউ/এইচএ/এমএস