স্বাস্থ্য

অর্ধশতাধিক কোম্পানিতে নিম্নমানের ওষুধ উৎপাদন অব্যাহত

দেশের বাজারে অর্ধশতাধিক কোম্পানিতে এখনও নিম্নমানের ওষুধ উৎপাদন হচ্ছে! স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সুপারিশে ওষুধ বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি তৃতীয়বারের মতো গত কয়েকমাস দেশের ছোটবড় ৮৪টি ওষুধ কোম্পানি সরেজমিন পরিদর্শন করে অধিকাংশগুলোতেই তথৈবচ অবস্থা দেখে চরমভাবে হতাশাগ্রস্ত হয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কমিটির একাধিক সদস্য জানান, ইতোপূর্বে তারা (কমিটির সদস্যরা) যে সকল কোম্পানিকে নিম্নমানের চিহ্নিত করে ওষুধের গুণগত মান ও উৎপাদন নিশ্চিত করতে কারখানার পরিবেশ, প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল নিয়োগ ও আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের নিদের্শনা দিয়েছেন অধিকাংশ কারখানা তা অনুসরণ করেনি। তারা জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্দেশনা অনুসারে যেকোনো ওষুধ উৎপাদনের ক্ষেত্রে গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্রাকটিস (জিএমপি) গাইড লাইন অনুসরণের বাধ্যবাধকতা নির্ধারণ করে দিলেও এখনও বহু সংখ্যক কোম্পানিতে জিএমপি গাইড লাইন অনুসরণের বালাই নেই। তবে কিছু কিছু কোম্পানি উদ্যোগী হয়ে আগের তুলনায় উন্নতি করেছে। সে সংখ্যা খুবই কম বলে ওই কর্মকর্তারা জানান। অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রায় সাত বছর আগে ২০০৯ সালের জুন-জুলাই মাসে রিড ফার্মাসিউটিক্যালস্ নামে একটি ওষুধ কোম্পানির উৎপাদিত প্যারাসিটামল সিরাপ খেয়ে কিডনি বিকল হয়ে ঢাকা শিশু হাসপাতাল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ২৪ শিশুর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সংসদীয় কমিটির সুপারিশে গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা দেখতে পান ট্যানারি শিল্পে রং হিসেবে ব্যবহৃত ডায়াথেলিন গ্লাইকল কেমিক্যাল মিশ্রিত প্যারাসিটামল সিরাপ খেয়েই শিশুদের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ওই ঘটনায় সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সাংসদ নাজমুল হাসান পাপনের নেতৃত্বে দেশের ওষুধ কোম্পানিগুলোর গুণগত মান সঠিকভাবে নির্ণয় ও পরিচালিত হচ্ছে কি না তা নির্নয়ে সাব কমিটি গঠন করে। কমিটি মোট ১৯৩টি কোম্পানি পরিদর্শন করে জিএমপি গাইডলাইন অনুসরণ করে কোম্পানিগুলোকে এ, বি, সি, ডি, ই ও এফ ক্যাটাগরিতে ভাগ করে। দীর্ঘ সময় পর মোট ৬২টি কোম্পানিকে নিম্নমানের বলে চিহ্নিত করে। এর মধ্যে সীমিত সংখ্যক কোম্পানি এ বি ও সি (জিএমপি) গাইডলাইন অনুসরণ আর অধিকাংশই অর্থাৎ ডি, ই ও এফ অনুসরণ করে না। ২০১২ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে দ্বিতীয়বার ও গতবছর সর্বশেষ অর্থাৎ তৃতীয় কমিটি গঠিত হয়। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে জাগো নিউজকে জানান, ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে বিভিন্ন সময় নাম সর্বস্ব কোম্পানিকে জেল জরিমানা করা হলেও তাদের টনক নড়ছে না। নিম্নমানের ওষুধ উৎপাদন ও বিপণন করে কেউ কেউ কোটিপতি বনে যাচ্ছে। তবে নিম্নমানেরসহ নকল ও ভেজাল ওষুধ উৎপাদন ও বিপণন বন্ধে তারা বদ্ধপরিকর বলে ওই কর্মকর্তা মন্তব্য করেন। সার্বিক পুনঃতদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ড. আ ব ম ফারুক এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে এ মাসের মধ্যে তারা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা দেবেন বলে জানান। এমইউ/এসএইচএস/আরআইপি

Advertisement