এই উপমহাদেশের অনেক চলচ্চিত্র নির্মাতার বেড়ে ওঠা, গড়ে ওঠার পেছনে সত্যজিৎ রায়ের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ প্রভাব রয়েছে। গত ৫০ বছর ধরে যারা জীবনঘনিষ্ট চলচ্চিত্র নির্মাণে আগ্রহী হয়েছেন তাদের প্রায় বেশিরভাগেরই আদর্শ নির্মাতা সত্যজিৎ রায়। এ বছর তার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপিত হচ্ছে সারা পৃথিবী জুড়ে।
Advertisement
অস্কার কমিটি উদযাপন করছে ২ কিস্তিতে, তার নির্বাচিত চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর মাধ্যমে। এরই মধ্যে সত্যজিৎ রায়ের গল্প থেকে নেটফ্লিক্স ইন্ডিয়া হিন্দি ভাষায় ‘রে’ নামে একটি সিরিজ নির্মাণ করে তাদের ট্রিবিউট জানিয়েছে। সত্যজিৎ রায়ের নিজের শহর কলকাতা থেকে নির্মিত হচ্ছে দুটি চলচ্চিত্র।
বাংলাদেশ থেকে ‘প্রিয় সত্যজিৎ’ নামে একটি ট্রিবিউট ফিল্ম নির্মাণ করছেন তরুণ নির্মাতা প্রসূন রহমান। সম্প্রতি কিশোরগঞ্জের মসূয়ায় সত্যজিৎ রায়ের দাদা উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীর বাড়িসহ আরো দুটি জায়গায় এবং পুরনো ঢাকার একটি বাড়িতে শেষ হয়েছে এর চিত্রধারনের কাজ।
এ মুহুর্তে চলচ্চিত্রটির সম্পাদনার কাজ চলছে। পরিচালক জানান, ‘এটি হচ্ছে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র এবং সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবর্ষে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।’
Advertisement
গল্পসূত্র হিসেবে জানা গেছে, এর কাহিনী ৩ সময়ের ৩ জন চলচ্চিত্র নির্মাতাকে নিয়ে। প্রথমজন সত্যজিৎ রায় নিজে। যিনি উপস্থিত না থেকেও সেখানে বিরাজমান। আর অন্য দুজন পরবর্তী ২ প্রজন্মের। সত্যজিৎ রায় ও তার সৃষ্টিকে সাথে নিয়ে তার দাদা উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীর বাড়ি পরিভ্রমণের সূত্রে নবীন নির্মাতা অপরাজিতা হক আবিস্কার করে, সত্যজিৎ রায় নির্মিত ‘অপু ট্র্রিলজি’র সাথে জুড়ে থাকা প্রবীণ নির্মাতা আসিফ মাহমুদের অন্য এক গল্প। আবিস্কার করে নির্মাণের আড়ালে থাকা নির্মাতার অজানা অধ্যায়। যেখানটায় আলো পড়েনা কখনো।
প্রবীণ নির্মাতা আসিফ মাহমুদের চরিত্রে অভিনয় করেছেন আহমেদ রুবেল আর নবীন নির্মাতা অপরাজিতার চরিত্রে অভিনয় করেছেন মৌটুসী বিশ্বাস। আরও কয়েকটি বিশেষ চরিত্রে রয়েছেন পংকজ মজুমদার, সাইদ বাবু, সঙ্গীতা চৌধুরী, লাবন্য চৌধুরী, এহসানুল হক, নুসরাত জাহান নদী ও আবীর।
অপরাজিতার সহকর্মীর চরিত্রে অভিনয় করছেন সত্যিকারের কলাকুশলিদের কয়েকজন। তাদের মধ্যে রয়েছেন- চিত্রগ্রাহক নাজমুল হাসান এবং রাসিফ চৌধুরী, মুখর, আবিহা, শামিম ও জাফর সহ আরো কয়েকজন।
চলচ্চিত্রটি নির্মিত হচ্ছে প্রসূন রহমানের নিজস্ব প্রযোজনা সংস্থা ইমেশন ক্রিয়েটরের ব্যানারে।
Advertisement
সত্যজিৎ রায় বাংলা চলচ্চিত্রকে বিশ্বদরবারে পরিচিত করবার পাশাপাশি শৈল্পিক দিক থেকে তুলে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়। তার জন্মশতবর্ষ উদযাপনের অংশ হিসেবে চলচ্চিত্রটি যর্থাথ অর্থেই পূর্বসূরী নির্মাতার প্রতি বর্তমানের নির্মাতার এবং এই বাংলার যথাযথ শ্রদ্ধাঞ্জলি হয়ে উঠুক এমনটাই প্রত্যাশা পরিচালকের।
‘প্রিয় সত্যজিৎ’ চলচ্চিত্রটি আগামী মার্চ ও এপ্রিলে কিছু উৎসবে অংশগ্রহণের পর মে মাসের ২ তারিখ সত্যজিৎ রায়ের জন্মদিনে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদর্শিত হবে। এরপর মুক্তি পাবে কোনো ওটিটি প্লাটফর্মে, নিশ্চিত করেছেন পরিচালক।
প্রসঙ্গত, প্রসূন রহমান এর আগে নির্মাণ করেছেন পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘সুতপার ঠিকানা’, ‘জন্মভূমি’, ‘নিগ্রহকাল’ এবং সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া ‘ঢাকা ড্রিম’। তিনি আরও নির্মাণ করেছেন প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ‘রাইস এন্ড প্রে’, ‘নদী ও নির্মাতা’, ‘ব্যালাড অফ রোহিঙ্গা পিপল’ (৭ পর্ব), ‘এই পুরাতন আখরগুলি’ এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নির্ভর পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ‘র্মাচ টু ডিসেম্বর’।
এলএ/জেআইএম