সাহিত্য

ফকির ইলিয়াস এর সাম্প্রতিক পাঁচটি কবিতা

জল ছিটানো ঘুমতন্দ্রা এবং তন্ত্রে কেটে গেছে কয়েকটি মহাকাল।কয়েকলক্ষ পৌষের শীত, জবুথবু করে রেখেছেপাখিদের জীবন। যেসব মানুষ পরিন্দার প্রতিবেশী,তারাও বন্দী হয়ে পড়েছে আঁটোসাটো পলেস্তারারভেতর। থেমে যাচ্ছে প্রদক্ষিণরত সূর্য। বিগত এমন ইতিহাস অস্বীকার করতে চাইছেআমাদের ভালোবাসার সাম্পান। ঢেউ ভাঙছেযে নদী- তাকে সাক্ষী রেখেই লিখতে চাইছেজীবনের নতুন পরিচ্ছেদ।মাটিতে জল ছিটাচ্ছে যে ঘুমময় চোখ, মানুষতার শুশ্রূষা চেয়ে করছে বিনম্র প্রার্থনা- পুনরায় লিখিত হোক নতুন সূচিপত্র,আবার উচ্চকিত হোক বলিষ্ঠ বাহু-এমন বরণের গানে সুর তোলে, চাঁদের দিকেনা তাকিয়েই মধ্যরাতে বাড়ি ফিরছেদীনহীন গায়েন। প্রথম প্রেমের পৃথিবী রেখে যাচ্ছি বর্ষের সর্বশেষ রেণু। রেখে যাচ্ছি মাটিরভেতরে লুকিয়ে থাকা সবটুকু খনিজ। যে তুমি সংগ্রাহকহয়ে তুলতে চাইবে এই জলজ শালুক,তার হাতেই ফোটে থাকবে সহস্র পদ্মের পরাগ,কিংবা স্বপ্নের কুমার হয়ে যে কুমারীর নামেলিখে দেবে প্রথম প্রেমের পৃথিবী-তার জন্যই জমা থাকবে আমার কবিতারসর্বশেষ অক্ষর, অযুত মায়ার মহার্ঘ। মিশে যাচ্ছি সম্ভাবনার আগাম অনুবাদে,পাখির কোমল চোখে কাজল পরিয়ে যেপালক, আঁকে নন্দনের নবম শিল্পআমি তার হাতেই রেখে যেতে চাইছি আমারকালি ও কলম। প্রচুর প্রেমবৃষ্টিতে ভিজে যারানিজেদের ছবি তুলবে,তাদের পাশেই রেখে যাচ্ছি আপাতত আমারকাব্যপোট্রেট। সব দুঃখই পাখি হয়ে যায় সব দুঃখই পাখি হয়ে যায়। সকল বেদনাই চৈতন্যেরজল হয়ে সমুদ্রে ভাসে। কোনো পরদেশী জাহাজেরপাটাতন তা ছুঁতে পারে, কখনও থেকে যায় অস্পর্শের অতল।ঝড়গুলো বিভক্ত হয়ে প্রদক্ষিণ করে উত্তর এবংদক্ষিণ মেরু। যারা পূর্বে থাকে, তারা তাকায় পশ্চিমে।সূর্য ডুবলো বলে, জোনাকিরা গায়ে জড়ায় রাতের সন্ন্যাস। দুঃখের অপর নাম সন্ন্যাস-সমুদ্রবেদনার অন্য নাম কাকাতুয়া পাখিযারা দুঃখ পেতে চায় না, তারা নির্বাক হাসেযারা হাসতে ভুলে গেছে, তারা স্মরণ করতেপারে না কান্নার সর্বনাম। অথচ আমরা জানি,আদম-হাওয়া একদিন কাঁদতে কাঁদতেইপৃথিবীর পথযাত্রী হয়েছিলেন! আর যারা সমুদ্রের প্রতিবেশী আমার কাছে বসে বৃষ্টি, গল্প শোনায় না এখন আর।কোনো মেঘ ছায়া দেবে বলে, করে না অঙ্গীকারকিছু বিজলী, পাশ কাটিয়ে অন্যত্র চলে যায়কিছু ঝড়, হারিয়ে যায় খড়ের বক্ষদেশে। আমি আর আমার পালিত দুঃখ`রা জেগে থাকিআর যারা সমুদ্রের প্রতিবেশী, তারা বসে থাকে শিয়রেআমরা সবাই ভুলে যাই আত্মরক্ষার কৌশল। আপাতত আত্মরক্ষা বলতে আমি তাকিয়ে থাকাকেইবুঝি। সব ইচ্ছে একদিন সমুদ্রে ভেসে যাবে-এমন ভাবনা আমাকে আর বিচলিত করে না। ভরচৈত্রের ছায়াগ্রহণ অপূর্ব মায়াবৃষ্টি ছড়াবে বলে উড়ে যাচ্ছে পৌষের মেঘভালোবাসার পালকে উষ্ণতার বিস্তার দেখে,পাখিগুলো নেচে উঠছে আনন্দে-আহা শৈশবকাল! আহা মার্বেল পাথরে আঁকাপ্রিয়তমার চোখ,জেগে থাকার ইতিহাস পাঠ করে যে রাত নীরবে ঘুমায়,তার শিয়রেই বসে থাকে প্রেমের শুশ্রূষা। পথ্য হাতে চাঁদসুন্দরীরা-হাত বুলায় মেঘের মাথায়। দীর্ঘজীবী হওরাতের শূন্যতা,বলতে বলতে তারাগুলো হারিয়ে যায় জোনাক সংসারেআগামী বসন্তে ভরচৈত্রের ছায়াগ্রহণ শেষ হলেযে পাখি দেশান্তরি হবে-তার জন্য কয়েকটি পাপড়ি জমিয়ে রাখে সতীর্থরা,জমিয়ে রাখে কয়েকটি পাথর।এইচআর/আরআইপি

Advertisement