দেশজুড়ে

চিকিৎসা শেষে বরিশাল মেডিকেল থেকে বাড়ি ফিরলেন দগ্ধ ১৬ জন

ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ ১৬ জন চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরেছেন। শনিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে তারা বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ছেড়েছেন।

Advertisement

বর্তামানে লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ ৪৬ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। হাসপাতালের ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

অন্যদিকে হাসপাতালের চিকিৎসকরা ছাড়াও ঢাকা থেকে আসা সাত সদস্যের দল লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে তারা এ সেবা কার্যক্রম শুরু করেছেন। এতে দগ্ধ রোগীদের সেবায় আলাদা গতি এসেছে।

এছাড়া সার্জারির তিনটি ওয়ার্ডে থাকা দগ্ধ রোগীদের চারতলার চক্ষু বিভাগে স্থানান্তর করা হয়েছে। এতে করে মেঝেতে যারা ছিলেন তারা সবাই আলাদা শয্যা পেয়েছেন।

Advertisement

চক্ষু বিভাগে ভর্তি থাকা দগ্ধ কয়েকজন রোগী জানান, শুক্রবার ভোরে হাসপাতালে নিয়ে আসার পর অনেকে সেভাবে চিকিৎসা পাননি। শয্যা সংকটের কারণে অনেককে মেঝেতে রাখা হয়েছিল। তবে এখন সবাই শয্যা পেয়েছেন। কিছুক্ষণ পরপর চিকিৎসক ও সেবিকারা এসে খোঁজ নিচ্ছেন। ওষুধ-পত্রসহ সবকিছুই হাসপাতাল থেকে ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এদিকে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হলেও দগ্ধ রোগীদের মধ্যে কয়েকজনের চোখের পানি যেন থামছেই না। কাছের মানুষকে হারিয়ে তারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। কেউ নীরবে চোখের পানি ফেলছেন। আবার কেউ হঠাৎ অঝোরে কেঁদে উঠছেন। আগুনে পোড়ার যন্ত্রণার চেয়ে স্বজন হারানোর বেদনা যেন তাদের বেশি কষ্ট দিচ্ছে।

চিকিৎসাধীন চাঁদপুরের বেল্লাল মিয়া বলেন, মধ্যরাতে অভিযান-১০ লঞ্চের ইঞ্জিন রুমে হঠাৎ আগুন লাগে। তখন লঞ্চটি ঝালকাঠি টার্মিনাল থেকে ১০ মিনিট দূরত্বে। আগুন লাগার পর মাস্টার লঞ্চটি তীরে নিয়ে আসলেও কর্মচারীরা দরজা খুলছিল না। যাত্রীরা দিগ্বিদিক হয়ে লাফিয়ে পড়তে থাকে। লঞ্চটি আবার নদীর মাঝে নিয়ে যাওয়ায় অবস্থা বেগতিক দেখে আমিসহ বহু যাত্রী সুগন্ধা নদীতে ঝাঁপ দেই। সঙ্গে থাকা আমার মেয়ে ও স্ত্রীকে নদীতে ঝাঁপ দিতে বলেছিলাম। পরে আহত অবস্থায় মেয়েকে খুঁজে পেলেও ঘটনার দুদিনেও স্ত্রী মনোয়ারা বেগমের সন্ধান পাইনি।

রিমন নামে আরেক দগ্ধ রোগীর অভিযোগ, লঞ্চ স্টাফদের কারণেই এতবড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। এখনো অনেকে তাদের স্বজনদের খোঁজ পায়নি। বিষয়টি তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

Advertisement

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ ও আহত এমন ৮১ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ৮০ ভাগের ওপরে দগ্ধ এমন ১৯ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এছাড়া অবস্থা কিছুটা সংকটাপন্ন হওয়ায় হাসপাতালের ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) রেখে দুজনকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে আজ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ১৬ জন রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

তিনি আরও বলেন, আইসিউতে থাকা দুজনের অবস্থা কিছুটা শঙ্কাজনক। এছাড়া ভর্তি থাকা বাকি ৪৪ জনের শারীরিক অবস্থা অনেকটা উন্নতির দিকে। ঢাকা থেকে আসা সাত সদস্যের দলের সঙ্গে এখানের চিকিৎসক ও সেবিকারা প্রয়োজনীয় সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। আশা করছি কয়েকদিনের মধ্যে দগ্ধ সবাই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যেতে পারবেন।

সাইফ আমীন/এসজে/এএসএম