ভ্রমণপিপাসু মানুষের কাছে পছন্দের শীর্ষে কক্সবাজার। ছুটি পেলে ক্লান্তি দূর করতে ও পরিবারের সঙ্গে অবসর কাটাতে মানুষ বেরিয়ে পড়েন কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে। সম্প্রতি ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস এবং সাপ্তাহিক শুক্র ও শনিবারের ছুটি মিলিয়ে টানা তিনদিনের ছুটিতে প্রায় পাঁচ লাখেরও বেশি পর্যটক ভিড় জমায় বিশ্বের দীর্ঘতম এই সমুদ্রসৈকতে।
Advertisement
অতিরিক্ত পর্যটক আসার সুযোগে কক্সবাজারের হোটেল-মোটেলের মালিকরা ভাড়া কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেন। এতে ভোগান্তির শিকার হন পর্যটকরা। এক হাজার টাকার রুম ভাড়া নেওয়া হয় তিন হাজার টাকা। এতে তিনদিনের বাজেট একদিনে শেষ হয়ে যাওয়ায় অনেক পর্যটক একদিন পরই চলে আসতে বাধ্য হন। অনেকে আবার রাত কাটিয়েছেন রাস্তা, সমুদ্রপাড়ে বসে।
পর্যটকরা শুধু হোটেলের ক্ষেত্রে এমন হয়রানির শিকার হন তা নয়, নৈরাজ্য চলে খাবারের হোটেলেও। ভাত আর আলু ভর্তার দাম নেওয়া হয় ৪০০ টাকা।
এসব নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারের পর পর্যটন জোনের সার্বিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে সর্বত্র সমালোচনার ঝড় ওঠে। এরপর বিভিন্ন দিক থেকে দাবি ওঠে, হোটেল ভাড়া ও খাবারের মূল্য এবং আনুষঙ্গিক সব বিষয়ে যেন নিয়ম বেঁধে দেয় প্রশাসন।
Advertisement
কক্সবাজারে ভ্রমণে আসা পর্যটকদের হয়রানি রোধ, নিরাপত্তা ও সেবার মান বাড়ানোর লক্ষ্যে সাতটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন। এ সিদ্ধান্তের মধ্যে একটি হলো— প্রতিটি হোটেলে কক্ষ সংখ্যা, মূল্যতালিকা ও খালি কক্ষের সংখ্যা সম্বলিত ইলেকট্রনিক ডিসপ্লে বোর্ড স্থাপন করতে হবে। ভবিষ্যতে যেন রুম ভাড়া নিয়ে পর্যটকরা হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার না হন সেজন্য এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন।
শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এ টি এম জাফর আলম সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদের সভাপতিত্বে সভায় এই সাতটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
কক্সবাজারে পর্যটকদের নিরাপত্তা ও সেবার মানোন্নয়ন বিষয়ক মতবিনিময় সভা
সিদ্ধান্তগুলো হলো-
Advertisement
>> সব আবাসিক হোটেলে রুম বুকিং দেওয়ার সময় পর্যটকদের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদর্শন ও ফটোকপি জমা নেওয়া বাধ্যতামূলক করতে হবে;
>> আবাসিক হোটেলগুলোতে অনুসরণীয় একটি অভিন্ন আদর্শ কর্মপদ্ধতি (এসওপি) প্রণয়ন করতে হবে;
>> প্রতিটি হোটেলে কক্ষ সংখ্যা, মূল্যতালিকা ও খালি কক্ষের সংখ্যা সম্বলিত ইলেকট্রনিক ডিসপ্লে বোর্ড স্থাপন করতে হবে;
>> পর্যটকদের সুবিধার্থে ডলফিন মোড়ে সুবিধাজনক স্থানে একটি তথ্যকেন্দ্র ও হেল্প ডেস্ক স্থাপন করতে হবে;
>> প্রতিটি আবাসিক হোটেলে নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু ও জোরদার করতে হবে;
>> হোটেল-মোটেল জোনে অবৈধ পার্কিং ও সমাজবিরোধীদের কর্মকাণ্ড বন্ধে অভিযান জোরদার করা হবে;
>> হোটেল-মোটেল মালিক সমিতি জেলা প্রশাসনের সহায়তায় তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য প্রশিক্ষণের আয়োজন করবে।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে জেলা পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান, টুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার মো. জিললুর রহমান, কক্সবাজার জেলা আ’লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী, সহ-সভাপতি মো. রেজাউল করিম, কক্সবাজার প্রেস ক্লাব সভাপতি আবু তাহেরসহ পর্যটন-শিল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
এআরএ/জেআইএম