কোরআন তেলাওয়াত অনেক বরকত ও ফজিলতপূর্ণ ইবাদত। কোরআন তেলাওয়াতে হৃদয়ে জমা হওয়া গুনাহের মরিচা থেকে মুক্তি পায় মানুষ। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ কারণেই বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াতের কথা বলেছেন। হাদিসে এসেছে-
Advertisement
‘নিশ্চয়ই হৃদয়ে মরিচা ধরে, যেভাবে পানি লাগলে লোহায় মরিচা ধরে। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল! এ মরিচা দূর করার উপায় কী? তিনি বললেন, বেশি বেশি মৃত্যুকে স্মরণ করা ও কোরআন তেলাওয়াত করা।’ (বায়হাকি, মিশকাত)
কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জুমার বিশেষ দিনে কোরআনুল কারিমের বিশেষ কিছু সুরা ও আয়াত তেলাওয়াতের যেমন দিকনির্দেশনা দিয়েছেন তেমনি চমৎকার সব ফজিলতও বর্ণনা করেছেন। কোরআনের সেই আয়াত ও ফজিলত কী?
১. সুরা কাহফ
Advertisement
> হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, ‘নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা আল-কাহাফ পড়বে, তার (ঈমানের) নূর এ জুমা থেকে আগামী জুমা পর্যন্ত চমকাতে থাকবে।’ (বায়হাকি, আত-তারগিব)
> হজরত আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, যে সুরা কাহাফের প্রথম ১০ আয়াত মুখস্ত করবে; সে দাজ্জালের ফিৎনা হতে নিরাপদ থাকবে। অন্য হাদিসে ভিন্ন রেওয়ায়েতে শেষ ১০ আয়াতের ব্যাপারে উল্লিখিত ফজিলতের বর্ণনা রয়েছে। (মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিজি, নাসাঈ ও মুসনাদে আহমদ)
সুতরাং প্রথম বা শেষ ১০ আয়াত অথবা উভয় দিক দিয়ে মোট ২০ আয়াত যে মুখস্ত করবে সেও হাদিসের ঘোষিত ফজিলত লাভের অন্তর্ভুক্ত হবেন।
> হজরত সাহাল ইবনে মুআয রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি সুরা কাহাফের প্রথম ও শেষ আয়াতগুলো পাঠ করবে; তার পা থেকে মাথা পর্যন্ত একটি নূর হয়ে যায়। আর যে পূর্ণ সুরা তিলাওয়াত করে তার জন্য জমিন থেকে আসমান পর্যন্ত নূর হয়ে যায়। (মুসনাদে আহমদ)
Advertisement
> হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ তিলাওয়াত করবে, সে আট দিন পর্যন্ত সর্বপ্রকার ফিৎনা থেকে মুক্ত থাকবে। যদি দাজ্জাল বের হয় তবে সে দাজ্জালের ফিৎনা থেকেও মুক্ত থাকবে।
২. সুরা আল-ইমরান
হজরত মাকহুল রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, ‘যে লোক জুমার দিনে সুরা আল-ইমরান পড়বে মালায়িকাহ (ফেরেশতাগণ) তার জন্য রাত পর্যন্ত সালাত বা দোয়া করতে থাকবেন।’ (দারেমি, মিশকাত)
৩. সুরা হুদ
হজরত কাব ইবনু মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জুমার দিনে সুরা হুদ পড়বে।’ (দারেমি, মিশকাত)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, জুমার দিন সুরা কাহফসহ অন্যান্য সুরাগুলো তেলাওয়াত করা। যে তেলাওয়াতের বিশেষ ফজিলত বর্ণনা করেছেন স্বয়ং বিশ্বনবি।
মনে রাখতে হবে
কোরআন তেলাওয়াতের ক্ষেত্রে দেখে দেখে তেলাওয়াতের ফজিলত অনেক বেশি। তাই দেখে দেখে ধীরস্থিরভাবে কোরআন তেলাওয়াত করা জরুরি। হাদিসে পাকে প্রিয় নবি ঘোষণা করেন- ২১৬৭-[৫৯] রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তির মাসহাফ ছাড়া অর্থাৎ কোরআন দেখা ছাড়া মুখস্থ কোরআন পড়া এক হাজার গুণ মর্যাদা সম্পন্ন। আর কোরআন মাসহাফে পড়া অর্থাৎ কোরআন খুলে দেখে দেখে পড়া মুখস্থ পড়ার দ্বিগুণ থেকে দুই হাজার গুণ পর্যন্ত মর্যাদা রাখে।’ (বায়হাকি)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, প্রিয় নবির শেখানো পদ্ধতিতে সঠিক দিকনির্দেশনা অনুযায়ী কোরআন তেলাওয়াত করা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে জুমার দিন সন্ধ্যার আগে উল্লেখিত সুরাগুলো তেলাওয়াত করার মাধ্যমে ঘোষিত ফজিলত পাওয়ার চেষ্টা করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জিকেএস