রাজনীতি

পূর্ণ মহাসচিব হচ্ছেন না মির্জা ফখরুল!

পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত হলেও ভারমুক্তির কবল থেকে বের হতে পারছেন না বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ভারপ্রাপ্ত থেকে পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব করার যে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল সে সম্ভাবনা ক্রমাগত ক্ষীণ হয়ে আসছে। সম্প্রতি ছাত্রদলের ৩৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ছাত্রসমাবেশে দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্যের পর থেকে বিষয়টি নিয়ে খোদ দলের মধ্যেই নানা কথা চলছে।খালেদা জিয়া তার বক্তব্যে দলের বিভিন্ন নেতাকর্মীদের রাজপথের আন্দোলনে অবদানের কথা বললেও মির্জা ফখরুলের বিষয়ে কিছুই বলেননি। অথচ মির্জা ফখরুল তার পাশেই বসা ছিলেন। পৌনে এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে দেয়া বক্তব্যে দলের নেতাকর্মীদের চিকিৎসা সেবায় সব সময় সচেষ্ট থাকেন বলে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনের প্রশংসা করেন খালেদা জিয়া।দলীয় প্রধানের মুখে এ রকম প্রশংসা শুনে হয়তো কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন ডা. জাহিদ। বেগম জিয়া যখন তার প্রশংসা করছিলেন তখন দর্শক সারির সামনে বসে থাকা জাহিদ মাথা নিচু করে ছিলেন।আইনজীবীদের প্রশংসা করতেও ভুলেননি বেগম জিয়া। এক্ষেত্রে তিনি ‘অনেকের নাম বলা লাগে’ বললেও শুধুমাত্র যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহাবুব উদ্দিন খোকন, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদিন, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়ার নাম উল্লেখ করেন।বক্তব্যে ছাত্রদলে যাদের জায়গা হবে না তাদের অন্যান্য জায়গায় মূল্যায়ন করা হবে এমন আশ্বাস দেন খালেদা জিয়া। বিএনপির যুব বিষয়ক সম্পাদক ও যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের নাম উচ্চারণ না করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘তার এখন যুবদলের বয়স নেই। সে এখন এমপি নির্বাচন করবে। তার নিজেরও যুবদলে থাকার ইচ্ছে নেই বলে আমাকে জানিয়েছে।’ আত্মগোপনে থাকা হাবিব উন নবী খান সোহেলকে নিয়ে কথা বলেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, ‘সোহেলও খুব ভালো। ছাত্রদলের সভাপতি ছিল। আমি তার কাজ দেখেছি। তাকে মূল্যায়ন করে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি করা হয়েছে। এখন তাকে মূল দলে আনা হবে। সিটি বিএনপিতে তাকে মূল্যায়ন করা হবে।’বিএনপি চেয়ারপারসন নেতাদের নাম ধরে বক্তব্য দেয়ার সময় হলরুম জুড়ে করতালির ধুম পড়ছিল। নেতাদের নিয়ে দলীয় প্রধানের মূল্যায়নের সময় দর্শক সারির মাঝামাঝি দিক থেকে বলা হচ্ছিল মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব হিসেবে দেখতে চাই।মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের দুঃসময়ে কঠিন দায়িত্ব পালন করছেন। অসুস্থ শরীর নিয়ে তিনি বার বার কারাভোগ করছেন। তাকে নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন কোনো কথা না বলায় কারো কারো মুখে অভিমানের ছাপ লক্ষ্য করা গেছে।দর্শক সারির প্রথমে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ থাকলেও তার নাম উচ্চারণ করেননি খালেদা জিয়া। এছাড়াও এক সময়ে ঢাকার দুই দাপুটে নেতা মির্জা আব্বাস এবং সাদেক হোসেন খোকার বিষয়েও কোনো কথা বলেননি বিএনপি চেয়ারপারসন।মওদুদ, আব্বাস, খোকার নাম না তোলাতে উপস্থিত নেতাকর্মীদের মধ্যে তেমন একটা প্রতিক্রিয়া দেখা না গেলেও ফখরুলের নাম মুখে না নেয়ায় গোটা হলরুমে একটা চাপা অসন্তোষ লক্ষ্য করা গেছে।অনেককে বলেন, দলের দুঃসময়ের কাণ্ডারী যিনি, সর্বজনে যার বিপুল গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে, সে রকম একজন নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তাকে রাজনীতির মাঠে কত অগ্নিপরীক্ষা দিতে হয়েছে। তারপরও খালেদা জিয়ার কাছে তিনি আস্থাভাজন হতে পারলেন না। তার মনে জায়গা করতে পারলেন না। এটা স্বাভাবিকভাবেই বিস্মিত ও অসন্তুষ্ট করেছে দলীয় নেতাকর্মীদের।২০১১ সালের মার্চ মাসে দলের তৎকালীন মহাসচিব খন্দকার দেলোয়ার হোসেনের মৃত্যুুর পর ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব পান মির্জা ফখরুল। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব পালনের ফখরুল পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব হচ্ছেন এমন গুঞ্জন বারবার শোনা গেলেও এখনো পূর্ণাঙ্গ মহাসচিবের দায়িত্ব পাননি তিনি। সর্বশেষ লন্ডনে চিকিৎসা শেষে দেশে আসার পর গুঞ্জন উঠলেও সেই গুঞ্জন এখনো গুঞ্জনই রয়ে গেছে।সূত্র জানায়, বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে মির্জা ফখরুলের দূরত্ব রয়েছে। নানা কারণে মির্জা ফখরুলকে অপছন্দ করেন তারেক রহমান। তাই তারেক রহমানের গ্রীণ সিগন্যাল না পাওয়ার কারণে মির্জা ফখরুলকে পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব করতে পারছেন না বেগম জিয়া।এ বিষয়ে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান জাগো নিউজকে বলেন, বিষয়টি বিএনপি চেয়ারপারসনের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে।সাবেক সেনা প্রধান ও দলের স্থায়ী কমিটির প্রবীণ সদস্য লে জে (অব.) মাহবুবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, মির্জা ফখরুল রাজনীতিতে পরিচ্ছন্ন ব্যক্তি। দলের জন্য তার অনেক অবদান রয়েছে। তবে তাকে ভারমুক্ত করার দায়িত্ব চেয়ারপারসনের।এমএম/এসকেডি/আরএস/এমএস

Advertisement