ইমোতে নারীকণ্ঠে কথা বলে অনৈতিক কাজের প্রলোভন দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় একটি চক্র। তাদের প্রধান টার্গেট প্রবাসীরা। নারীকণ্ঠে অনৈতিক কাজের প্রলোভন দেখিয়ে প্রবাসীদের ইমো আইডি হ্যাক করে ব্ল্যাকমেইলও করে চক্রটি। দেড় শতাধিক সদস্যের এই চক্রের পাঁচজনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
Advertisement
গ্রেফতাররা হলেন- হুসাইন আলী (১৯), সুমন আলী (২৩), তরিকুল ইসলাম (২১), শান্ত আলী (১৯) ও সাদ্দাম হোসেন (১৯)। বুধবার (২২ ডিসেম্বর) রাতে রাজধানীর আশুলিয়া ও নাটোর জেলা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির সাইবার ক্রাইম কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. কামরুল আহসান এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নাটোর-রাজশাহীকেন্দ্রিক কিছু কিশোর ও যুবক ইমো হ্যাকিংকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তাদের কাছে এটি স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা প্রবাসী পুরুষদের ইমোতে অনৈতিক কাজের প্রলোভন দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এমন পাঁচজনকে গ্রেফতারের পর আমরা তাদের বিশাল একটা নেটওয়ার্কের সন্ধান পেয়েছি। চক্রের দেড় শতাধিক সদস্য এমন প্রতারণার কাজে জড়িত।
Advertisement
তিনি বলেন, তারা প্রথমে আইডি সার্চ দিয়ে প্রবাসীদের খুঁজে বের করেন। এরপর নারী সেজে নানা গল্প-কথায় এগোতে থাকেন। একপর্যায়ে অনৈতিক কাজ করার প্রস্তাব দেন। এ সময় ভিকটিম রাজি হলে জানান, ঘণ্টায় কাজ করতে হলে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা দিতে হবে। এরপর টাকায় রাজি হলে মোবাইলের রেয়ার ক্যামেরায় অন্য কোনো কিশোরী বা নারীর ভিডিও চালু করে দিয়ে আড়ালে নারীকণ্ঠে প্রতারকরা কথা বলতে থাকেন। এতে ভুক্তভোগী প্রবাসীর কাছে আসল নারী মনে হতে থাকে। এভাবে একসময় আরও ক্লোজ হতে হতে প্রবাসীর ইমো আইডি হ্যাক করে নেয় ওটিপি কোড হাতিয়ে নেয়।
অতিরিক্ত ডিআইজি কামরুল আহসান আরও বলেন, এই প্রতারকরা প্রথমতো পুরুষ হয়েও নারী সেজে কথা বলে টাকা বাগিয়ে নিচ্ছেন। দ্বিতীয়ত, তারা ইমো হ্যাক করে ইমো মালিকের কোনো অনৈতিক ছবি বা ভিডিও পেলে সেটি দিয়ে ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যম লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা দেখেছি নাটোরের লালপুর এলাকায় এ ধরনের প্রতারকদের আধিপত্য বেশি। তাদের সঙ্গে আরও এক থেকে দেড় শতাধিক সদস্য কাজ করছে। তারা সবাই একটি নেটওয়ার্কে কাজ করলেও চার-পাঁচজনের গ্রুপে বিভক্ত হয়ে প্রতারণা করে।
তাদের টার্গেট কেন প্রবাসীরা- এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রবাসীরা দীর্ঘদিন পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকেন। এসময় মাঝে মাঝে বিনোদনের খোঁজে ইমোতে যান। আর সেখানেই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।
Advertisement
এক প্রশ্নের জবাবে সাইবার ক্রাইম কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতারদের তেমন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। কিন্তু তারা সবাই একসঙ্গে কাজ করার কারণে একে অপর থেকে এসব প্রতারণার কৌশল সহজে রপ্ত করে। আমরা এই চক্রের বাকি সদস্যদেরও গ্রেফতারে চেষ্টা চালাচ্ছি।
টিটি/ইএ/জিকেএস