নতুন বছরে ব্যাংকিং খাতে সুশাসন বাড়াতে আরো বেশি তৎপর থাকবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকিং খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে আরো কঠোর হবে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিশেষ করে আমানত সংগ্রহে অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধ, ঋণ বিতরণে স্বচ্ছতা, খেলাপি ঋণ হ্রাস ও সার্বিক সুদহার টেনে ধরতে এমন পদক্ষেপ নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান এ বিষয়ে টেলিফোনে জাগো নিউজকে বলেন, নতুন বছর ব্যাংকিং খাতে আরো সুশাসন নিশ্চিত করতে নজর দেবো। তবে বিগত বছরেও ছাড় দেয়া হয়নি। আগামী বছরেও না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গরম নিঃশ্বাস পড়বে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঘাড়ে। তিনি আরো বলেন, নিয়মিত ব্যাংকিং কার্যক্রমের পাশাপাশি আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কার্যক্রমকে আরো বাড়াতে নতুন বছরে আরো কিছু নতুন ও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে। জানা গেছে, ব্যাংকিং খাত অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন শক্তিশালী, স্থিতিশীল ও রেসিলিয়েন্ট বা ঝুঁকি বহনে সক্ষম। ব্যাংকিং খাতের সূচকগুলো দিন দিনই শক্তিশালী হচ্ছে। তাই সুশাসনের দিকে এখন আরো বেশি নজর গুরুত্ব দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মূলধনের পর্যাপ্ততা : ব্যাংকিং খাত শক্তিশালী কিনা তার অন্যতম পরিমাপক হচ্ছে মূলধন পর্যাপ্ততা। ব্যাংকগুলোর মূলধন পর্যাপ্ততা সংক্রান্ত ব্যাসেল-২ নীতিমালার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের পর গত বছর (২০১৫) থেকেই ব্যাসেল-৩ বাস্তবায়ন করার পথ-নকশা প্রণয়ন করা হয়েছে। এর আওতায় জুন ২০১৫ শেষে মূলধন পর্যাপ্ততার হার ছিল ১০ দশমিক ২৭ শতাংশ। সেপ্টেম্বর শেষে এ হার দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৫৩ শতাংশ, যা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ৮ শতাংশের চেয়ে অনেক বেশি। তবে এই ধারা যাতে ২০১৬ সালে অব্যাহত থাকে সেদিকে খেয়াল রাখবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আমানত ও ঋণ : অক্টোবর ২০১৫ শেষে ব্যাংকিং খাতে আমানত ১৩ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ২৫ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা। অন্যদিকে, ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৭০ হাজার ৬২০ কোটি। ঋণের প্রবৃদ্ধি ১১ দশমিক ৫ শতাংশ। আমানত ও ঋণের এই স্বাভাবিক গতি প্রবাহ অটুট রাখা হবে। শ্রেণিকৃত ঋণ : নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও খেলাপি ঋণের হার এক অংকের নিচে রাখা সম্ভব হয়েছে। ডিসেম্বর ২০১৪ ও মার্চ ২০১৫ শেষে শ্রেণিকৃত ঋণের হার ছিল যথাক্রমে ৯ দশমিক ৬৯ ও ১০ দশমিক ৪৭ শতাংশ। জুন ২০১৫ শেষে শ্রেণিকৃত ঋণের হার কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ। খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন কভারেজ ৯৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এই সফলতা ধরে রাখবে ২০১৬ তে। সুদ হারের স্প্রেড : আমানত ও ঋণের সুদহার কমানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিবিড় নজরদারি এবং ব্যাংকগুলোর উপর নৈতিক চাপ অব্যাহত রাখায় আমানত ও ঋণের গড় সুদহার কমে অক্টোবর ২০১৫ শেষে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৬ দশমিক ৫৮ ও ১১ দশমিক ৩৫ শতাংশ। আমানত ও ঋণের সুদহারের স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এই স্প্রেড মূল্যস্ফীতি নিম্নগামী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণভাবে ও ক্রমান্বয়ে কমছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এই স্প্রেড যাতে না বাড়ে ২০১৬ সালে সেটি নিশ্চিত করবে। সুপারভিশন জোরদারকরণ : ব্যাংকগুলোর শাখা ও ঊর্ধ্বতন কার্যালয় পর্যায়ের জালিয়াতির সম্ভাব্য প্রবণতা সনাক্তে ফরেন এক্সচেঞ্জ লেনদেন সংক্রান্ত ইলেকট্রনিক ড্যাশবোর্ড ও ইন্টিগ্রেটেড সুপারভিশন সিস্টেম প্রয়োগের মাধ্যমে সুপারভিশন জোরদার করা হয়েছে। যেসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বড় ধরনের অনিয়ম ধরা পড়েছে সেসব ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানের পর্ষদে বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। পর্যবেক্ষকের নিবিড় তদারকির কারণে এখন অনিয়ম-জালিয়াতির ফাঁক-ফোঁকর অনেকটাই বন্ধ হয়েছে। বেসিক ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ সংক্রান্ত অনিয়ম উদঘাটনের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক অভিযুক্তদের অপসারণ এবং পর্ষদ পুনর্গঠনের নির্দেশনা দিয়েছে। ২০১৬ সালেও এমন পদক্ষেপে পিছপা হবে না। বর্তমান সরকারের সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের রূপকল্প বাস্তবায়নে গৃহীত প্রয়াস ও উদ্যোগ এবং তার সমর্থনে বাংলাদেশ ব্যাংকের সময়োচিত উন্নয়নমুখী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে দেশের আর্থিক খাতে সুস্থিতি বিরাজ করছে। এক্ষেত্রে ‘রোল মডেল’হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিত হয়ে উঠেছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে দেশের অর্থনীতি আরো সুদৃঢ়, স্থিতিশীল এবং সামনের দিনগুলোতে আরো প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধির নতুন পথে পরিচালিত হবে।এসএ/এসএইচএস/এএইচ/পিআর
Advertisement