স্বাস্থ্য

চিকিৎসা করাতে এসে খেলায় মেতে রোগ ভোলে শিশুরা

শীতে শিশুদের ঠান্ডাজনিত রোগ যেন সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসময় এ ধরনের রোগ বেড়ে যায় দুই থেকে তিনগুণ। সদ্য বাবা-মা হওয়া অভিভাবকরা তাতেই পড়েন দুশ্চিন্তায়। হাসপাতালে বাচ্চাদের নিয়ে আসেন উৎকণ্ঠা নিয়ে। কিন্তু হাসপাতালে এসে শিশুরা যখন পেয়ে যায় নানা ধরনের খেলনা, তখন তাদের আর থামায় কে। বেড়ে যায় উচ্ছলতা। আনন্দে ভরে ওঠে মন। রোগের কথা ভুলে মেতে ওঠে খেলায়।

Advertisement

মঙ্গলবার (২১ ডিসেম্বর) সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নবজাতক ও শিশু বহির্বিভাগে গিয়ে এমন চিত্র দেখা মেলে।

শিশু বিভাগের গেটে ঢুকতেই দেখা যায়, নানা সমস্যা নিয়ে বাচ্চাদের নিয়ে এসেছেন অভিভাবকরা। আর অফিস সহকারী মো. শাহাবুদ্দিন রোগীর অবস্থার কথা শুনে ২টি রুমে বসে থাকা চিকিৎসকদের কাছে পাঠাচ্ছেন। একাধিক চিকিৎসক দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা এসব শিশুদের চিকিৎসা দিচ্ছেন।

রোগীর চাপ কেমন জানতে চাইলে অফিস সহকারী মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, আগে যদি ৫০ জন শিশু আসতো এখন সেটা দুই-তিনগুণ বেড়েছে। এসব রোগীর অধিকাংশই আসছে ঠান্ডার সমস্যা নিয়ে।

Advertisement

এদিকে শিশুরা অসুস্থ হয়ে আসলেও তাদের বেশ কয়েকজনকে দেখে তেমনটি মনে হয়নি। হাসপাতালের দুই পাশে চিকিৎসকদের রুম থাকলেও মাঝখানে বেশ ফাঁকা জায়গা। আর সেখানেই ছোট্ট করে তৈরি করা হয়েছে শিশু পার্ক। নানা ধরনের খেলনা রাখা আছে এই পার্কে। সেই খেলনা পেয়ে যেন শিশুরা ভুলেই গেছে তারা হাসপাতালে।

কেউ বল হাতে খেলছে, কেউ ঘোড়ায় চড়ে বসেছে। কেউ আবার উঠেছে নৌকায়। আর তাদের বাবা-মায়েরা চারপাশে দাঁড়িয়ে সেই আনন্দকে উপভোগ করছেন। দেখে মনেই হয় না যে এই শিশুরা অসুস্থ।

৪ বছরের মেয়ে এশা জামানকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন তার বাবা-মা। জানতে চাইলে বাবা আমিরুজ্জামান বলেন, গত তিনদিন ধরে ঠান্ডা-কাশি মেয়ের। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। বমি করলে কফ আসে। আজ নিয়ে আসলাম হাসপাতালে।

রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর থেকে ফারজানা আক্তার শিলা দেড় বছর বয়সী ছেলে সিয়াম ইসলাম সিহাবকে নিয়ে এসেছেন চিকিৎসক দেখাতে। কিন্তু তার ছেলে খেলনা দেখে নেমে পড়ে পার্কটিতে।

Advertisement

এসময় পাশে দাঁড়িয়ে মা ফারজানা বলেন, দুইদিন ধরে ছেলের ঠান্ডা। নাক দিয়ে পানি পড়ছে। বাচ্চা মানুষ তাই আগেই নিয়ে আসলাম। ডাক্তারের রুমে লাইন থাকায় ছেলেকে খেলতে নামিয়ে দিলাম। ভালোই লাগছে বিষয়টা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থেকে মো. ইসমাঈল হোসেন মেয়ে ইসরাত জাহানকে নিয়ে আসেন ঢাকা মেডিকেল কলেজে। মেয়ের সমস্যার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশ কয়েকদিন ধরে ঠান্ডা-জ্বর। এলাকায় ডাক্তার দেখাইলাম, ঠান্ডা ভালো হয় নাই। খাওয়া-দাওয়ার সমস্যা হচ্ছে। মেয়ের মায়েরও সমস্যা। তাই ভালো ডাক্তার দেখাইতে এখানে নিয়ে আসলাম।

ঢাকার নবাবপুর থেকে তিন মাস বয়সী মেয়ে নাদিয়াকে নিয়ে আসেন বাবা মো. নাদির। গত কয়েক দিন ধরে ঠান্ডার সমস্যায় ভুগছে তার মেয়ে।

তিনি বলেন, ঠান্ডার লাগার কারণে আমার মেয়েটার নাক প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। যখন মায়ের দুধ খায়, তখন সেটা ভালো করে বুঝা যায়। দুধ খাইতে পারে না নাক বন্ধের কারণে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নবজাতক ও শিশু বহির্বিভাগটিতে মোট ১৭টি সেকশনে চারজন মেডিকেল অফিসার রয়েছেন। শিশুদের নানা ধরনের চিকিৎসা দেওয়া হয় বিভাগটিতে।

জানতে চাইলে এই বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. রাজেশ মজুমদার বলেন, ঢাকা মেডিকেল গরীবের হাসপাতাল। এখানে গরীবসহ সব ধরনের রোগীরাই আসেন। শীতের সময় শিশুদের ফুসফুসের সংক্রমণটা বেশি হয়। ইনফ্লুয়েঞ্জাও হয়। গরমের চেয়ে শীতে তা দুই-তিনগুণ বেড়ে যায়। তাই বাচ্চাকে ঠান্ডা থেকে বাঁচাতে হবে। এজন্য প্রোটিন জাতীয় খাবার খাওয়ানো, গরম পানিতে লেবু-মধু মিশিয়ে খাওয়ানো এবং গরম জামা পরিয়ে রাখা যেতে পারে।

ডা. রাজেশ বলেন, এক বছর বা তার চেয়ে কম বয়সী শিশুরা ঠান্ডা লাগার ঝুঁকিতে বেশি থাকে। তাই মায়েদের সচেতনতা জরুরি বেশি।

আরএসএম/জেডএইচ/এমএস