শীত এলেই প্রকৃতি হয়ে উঠে ধুলিজীর্ণ। ঘরে-বাইরে চলে ধুলোর উৎসব। আর তাতে সব বয়সী মানুষের ত্বকে শুষ্কতাজনিত সমস্যা দেখা দেয়। অনেকের হাত-পা ফাটা শুরু হয়। দেখা দেয় সোরিয়াসিস নামক চর্মরোগ।
Advertisement
উত্তরের পাহাড় ডিঙিয়ে বাংলাদেশেও ধীরে ধীরে জেঁকে বসছে শীত। প্রতিদিনই তাপমাত্রা একটু একটু করে কমছে। বিশেষত দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলো এরইমধ্যে শীতে কাঁপতে শুরু করেছে। এতে করে দেশের সারাদেশেই হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে শীতকালীন চর্মরোগের প্রকোপ।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে সরেজমিনে মঙ্গলবার (২১ ডিসেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এ ধরনের রোগীর চাপ দেখা গেছে।
ঢামেক হাসপাতালের চর্ম ও যৌন বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৫৫০-৬০০ জন রোগী আসে। শীতে সব মিলিয়ে রোগীর কম এলেও আগের চেয়ে দ্বিগুণ-তিনগুণ বেড়েছে চর্ম রোগীর সংখ্যা। আগে এ বিভাগটিতে ৫০ থেকে ৬০ জন রোগী এলেও শীত শুরুর পর দৈনিক গড়ে ১৫০ বা তারও বেশি রোগী আসছে। যেন শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে চর্মরোগী।
Advertisement
সকালে হাসপাতালের চর্ম ও যৌন বিভাগে রোগীর চাপ কিছুটা কম থাকলে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সে সংখ্যা অনেকটা বেড়ে যাচ্ছে। দীর্ঘ লাইন দেখা যায় পুরুষ ও নারী রোগীদের। ওই বিভাগের সামনে কথা হয় চর্ম রোগের ডাক্তার দেখাতে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থেকে আসা জাকির হোসেনের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, হাঁটু ও পায়ে চুলকানি। গরমের সময় ভালোই থাকে তেমন অসুবিধা হয় না। কিন্তু শীত এলেই সমস্যা বাড়ে। বেশি চুলকায়, টানে। আগে কখনো আসিনি। এবারই প্রথম এখানে ডাক্তার দেখাতে এলাম। এতদিন অন্য জায়গায় ডাক্তার দেখিয়েও কোনো কাজ হয়নি।
শীত এলেই হাতের চামড়া উঠা শুরু হয়। বাড়ে এলার্জিও- বলছিলেন রাজধানীর পুরান ঢাকা থেকে একই বিভাগে ডাক্তার দেখাতে আসা রিয়াজ উদ্দিন।
চর্ম রোগে মাঝ বয়সী বা বৃদ্ধরাই ভুগছে, তা নয়। শীতে এ রোগে শিশু-কিশোরদেরও ভোগান্তি বাড়ছে। মায়ের সাথে ডাক্তার দেখাতে আসা ১৫ বছর বয়সী কিশোর সাইমন ইসলাম হোসেন জাগো নিউজকে জানায়, শরীরের দুই উরুর দুপাশে চুলকায়। গরমের সময় এমন হয় না। শীত এলেই একটু একটু চুলকানো শুরু হয়। পরে তা বাড়তে থাকে।
শীতজনিত চর্মরোগীর চাপ কেমন এবং কী ধরনের রোগীর আধিক্য, এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে ঢামেক হাসপাতালের চর্ম ও যৌন বিভাগের চিকিৎসক সাইদুর রহমান শামীম বলেন, শীতকালে কিছু বিশেষ চর্মরোগ ছাড়া মোট রোগীর সংখ্যা কমই। তবে এ সময়টাতে খুশকি, শুষ্কতাজনিত ত্বকের রোগ, হাত-পা ফাটা রোগ, জন্মগত এলার্জিজনিত রোগ ও চুল পড়া রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও সঠিক চিকিৎসায় এসব রোগ থেকে দ্রুতই মুক্তি মেলে। শীত কমে এলে এ ধরনের রোগীর সংখ্যাও কমবে।
Advertisement
হাসপাতালের চর্ম ও যৌন বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. ফারহানা নিশাদ জাগো নিউজকে বলেন, শীতকালে শুষ্কতা বেড়ে যাওয়ায় চুলকানিও বাড়ে। ফলে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যাও অনেক বেড়ে যায়। সময়মতো চিকিৎসা নিলে চর্মরোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায় সহজে। চর্মরোগীদের ক্রিম ব্যবহারসহ পানি কম ধরা ও গরম পানি ব্যবহার করা জরুরি। এসব রোগীর ক্ষেত্রে আমরা শীতকালীন ব্যবস্থা হিসেবে ভালো মানের ওলিভ ওয়েলসহ ত্বক ভালো রাখার ক্রিম ব্যবহারেরও পরামর্শ দিই।
আরএসএম/এমকেআর/জেআইএম