দেশজুড়ে

নাসিকে যত্রতত্র ময়লার ভাগাড়, নেই নির্দিষ্ট ডাম্পিং জোন

প্রতিষ্ঠার প্রায় ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সুষ্ঠু সমাধানে পৌঁছাতে পারেনি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক)। এখনো নেই নির্দিষ্ট কোনো ডাম্পিং জোন। শহরে বের হলেই দেখা মিলবে যত্রতত্র ময়লার ভাগাড়। নাকে ভেসে আসে দুর্গন্ধ। দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।

Advertisement

তবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আশার বাণী শোনাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। তার বলছে, শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে একটি প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে। আরেকটি প্রকল্পের কাজও শুরু হবে। এই দুটি প্রকল্প সম্পন্ন হলে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অনন্য নজির স্থাপন করবে।

সূত্র জানায়, বিলুপ্ত নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা উপমহাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী পৌরসভা ছিল। তৎকালীন বঙ্গ প্রদেশে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা একটি ‘মডেল পৌরসভা’ হিসেবে খ্যাতি লাভ করে। শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা শত বছরেরও বেশি সময়কাল ধরে ব্যবসা-বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ঢাকার পার্শ্ববর্তী ঘনবসতিপূর্ণ শিল্পসমৃদ্ধ এ বন্দরনগরী এখনো বাণিজ্যিক বন্দরনগরী হিসেবে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বর্পূণ অবদান রেখে যাচ্ছে।

২০১১ সালের ৫ মে নারায়ণগঞ্জ, সিদ্ধিরগঞ্জ ও কদমরসুল পৌরসভা একীভূত করে স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) প্রতিষ্ঠা বিধিমালা ২০১০ এর বিধি ৬-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার প্রায় ৭২ দশমিক ৪৩ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠা করে। প্রথম সিটি নির্বাচনে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী মেয়র নির্বাচিত হন। বর্তমান মেয়রও তিনি।

Advertisement

মেয়র আইভী নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের অবকাঠামোগত অনেক উন্নয়ন করলেও পিছিয়ে রয়েছেন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায়।

সরেজমিনে নগরীর মূল সড়কগুলোতে ঘুরে দেখা যায়, রাস্তার ওপরই উন্মুক্তভাবে ৩৪টি সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন করা হয়েছে। এছাড়া সড়কের আরও প্রায় ২৪১টির অধিক স্থানে রাত ৯টার পর থেকে বাজার, হোটেল আর দোকানিরা (গৃহস্থালি ছাড়া) ময়লা ফেলেন। সেই ময়লা ভোর পর্যন্ত উপচে রাস্তার চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। ভোর থেকে সকাল ৮টার মধ্যে ময়লা অপসারণের কথা থাকলেও কখনো কখনো দুপুর গড়িয়ে যায়। সকাল থেকে দুপুর- পুরো সময় জুড়েই নাক ঢেকে চলাচল করতে হয় স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালতগামী নগরবাসীকে। কোনো কোনো স্থানে একদিন পরপর ময়লা অপসারণ করা হয়। এরপর কোনো রকম বাছাই ছাড়াই ফেলে রাখা হয় ডাম্পিং জোনের খোলা স্থানে।

এছাড়া দিন ও রাতের বিভিন্ন সময় বঙ্গবন্ধু সড়কের চাষাঢ়া, কালীরবাজার, ব্যাংকের মোড়, উকিলপাড়া, ২ নম্বর রেলগেট, ডিআইটি, মণ্ডলপাড়া, নিতাইগঞ্জ, মিনাবাজার, টানবাজার, নবাব সিরাজউদ্দোলা সড়ক, ১ নম্বর রেলগেট, ফলপট্টি, চারারগোপ, বিআইডব্লিউটিসির কার্যালয়, মেট্রো সিনেমা হলের মোড় হয়ে ঈশা খাঁ সড়ক, নবাব সলিমুল্লাহ সড়ক, ডন চেম্বার, মিশনপাড়া ও হকার্স মার্কেটসহ প্রায় আড়াইশ স্থানে ময়লার স্তূপ আর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আবর্জনা নগরীকে ময়লার ভাগাড়ে পরিণত করেছে। একইভাবে ২৭টি ওয়ার্ডের অলিগলির চিত্রও একই।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, খোলা ময়লার দুর্গন্ধের জন্য অস্বস্তিবোধ হয়। কখনো ময়লা জমে থাকে, আবার কখনো ময়লা পরিষ্কার করতে দেখি পরিচ্ছন্নকর্মীদের। এটা আসলে নগরবাসীকে এক ধরনের হয়রানি করা। রাস্তাঘাট ও ফুটপাত পরিচ্ছন্ন রাখতে সিটি করপোরেশনের তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। রাস্তা নিয়মিত ঝাড়ু দেওয়া হয় না।

Advertisement

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মো. আলমগীর হিরণ জাগো নিউজকে বলেন, সিটির তিন অঞ্চলে প্রায় ১২শ পরিচ্ছন্নকর্মী কাজ করেন। শহরে ৩৪টিসহ তিন অঞ্চলে মোট ১০৪টি স্থান ময়লা ফেলার জন্য নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এর বাইরেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে ময়লা পড়ে রাস্তায়। সকাল ৮টার মধ্যে নেওয়ার নিয়ম থাকলেও সেটা আমরা পারি না। এটা আমাদের ব্যর্থতাই বলতে পারেন। গৃহস্থালির ময়লা টাকার বিনিময়ে নিয়ে যায় এনজিওগুলো।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল আমিন জাগো নিউজকে বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমাদের যারা পরিচ্ছন্নকর্মী রয়েছে তারা দিনরাত কাজ করছে। আমাদের প্রায় ১২শ কর্মী আছে। তারা শহর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য কাজ করছে। যেহেতু নারায়ণগঞ্জ এলাকায় শহরের সিস্টেমটা ওইভাবে নেই, ফলে আমাদের বর্জ্যগুলো ওইভাবে করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।

তিনি আরও বলেন, জালকুড়িতে ২৩ একর জায়গা নিয়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার একটি প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে। ওটা চালু হলে নারায়ণগঞ্জের দৈনিক ছয় থেকে সাতশ মেট্রিক টন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা হয়ে যাবে। বিপুল পরিমাণ ময়লা আমরা সেখানে পরিবহন করবো। সেই ময়লা থেকে একটি চায়নিজ কোম্পানি পাঁচ থেকে ছয় মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড একটি চায়নিজ কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছে।

আবুল আমিন বলেন, নারায়ণগঞ্জে এখন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার যে ঘাটতি রয়ে গেছে ওটা চালু হলে একেবারে জিরোতে নিয়ে আসা সম্ভব হবে। পাশাপাশি বন্দর এলাকায় প্রায় ৭০ একর জায়গা অধিগ্রহণের প্রস্তাব দিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠিয়েছি। এটা একনেকে পাস হয়েছে। ওখানে বন্দর অঞ্চলের বর্জ্য ব্যবস্থা করা হবে। এই দুটি প্রকল্প হলে নদীর দুই পাড় মিলে শহরে বর্জ্য থাকবে না। এ বিষয়ে মেয়র সারাক্ষণ কাজ করছেন। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় নারায়ণগঞ্জে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অনন্য নজির স্থাপন করবে।

এএ/জেআইএম