শীতের প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে গেছে শিশুদের ঠান্ডাজনিত রোগ। এর মধ্যে নবজাতক শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এ কারণে ঢাকা শিশু হাসপাতালে বেড়েছে শিশু রোগীর চাপ।
Advertisement
মঙ্গলবার (২১ ডিসেম্বর) সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালের নিচতলার দুই নম্বর ওয়ার্ডে ঠান্ডাজনিত অসুস্থতার কারণে ভর্তি করা হয়েছে ৪০ দিন বয়সী সালমানকে। তার সঙ্গে রয়েছেন মা জেসমিন আক্তার ও দাদি নুরজাহান বেগম।
রাজধানীর মিরপুর রূপনগরের বাসিন্দা জেসমিন আক্তার জানান, গত কয়েকদিন ধরে সালমানের ঠান্ডাজনিত রোগ দেখা দিয়েছে। স্বাভাবিকভাবে নিঃশ্বাস নিতে পারছে না। শ্বাস নিতে তার কষ্ট হচ্ছে। এ কারণে গত রোববার (১৯ ডিসেম্বর) রাতে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অক্সিজেন মাস্ক লাগিয়ে তাকে কৃত্রিমভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস করানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, হঠাৎ করে শীত বেড়ে যাওয়ায় আমার সন্তানের এমন হয়েছে। ডাক্তার দেখেছেন। পরীক্ষা করে তার নিউমোনিয়া ধরা পড়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
Advertisement
পাশের বেডে ভর্তি করা হয়েছে দুই মাসের নবজাতক সুরাইয়াকে। কয়েকদিন আগে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়েছে সে। সমস্যা বেড়ে যাওয়ায় শুক্রবার রাতে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সুরাইয়ার মা সাভার নবীনগরের বাসিন্দা মারজান বলেন, হঠাৎ করে শীত বেড়ে গেছে। শীত বাড়ার পর থেকে সুরাইয়ার ঠান্ডা লেগেছে। ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ খাওয়ানো হলেও সুস্থ না হওয়ায় শ্যামলী শিশু হাসপাতালে ভর্তি করি। পরীক্ষা-নিরীক্ষা পর জানা যায় তার নিউমোনিয়া হয়েছে। বর্তমানে এখানেই চিকিৎসা চলছে তার।
তিনি বলেন, মেয়ের চিকিৎসা করতে গিয়ে অনেক টাকা ব্যয় হচ্ছে। তার অসুস্থতার কারণে পরিবারের সবাই দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছেন। পরিবারের সবার খাওয়া-দাওয়া অনেকটা বন্ধ হয়ে গেছে।
শীত আসার পরপরই ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়েছে চার মাসের শিশু মরিয়ম। মিরপুরের রূপনগরে তাদের বাসা। মরিয়মের মা জেসমিন আক্তার দুই দিন আগে তাকে শিশু হাসপাতালে ভর্তি করান। শ্বাস নিতে অনেক কষ্ট হওয়ায় তিনদিন আগে রাতে তাকে এই হাসপাতালে আনা হয়।
Advertisement
তিনি বলেন, ঠান্ডা বেড়ে যাওয়ার কারণে তার মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। কোনোকিছু খেতে চাচ্ছে না, জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে আর কান্নাকাটি করছে। সে কারণে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গত তিনদিনে মরিয়মের চিকিৎসা করতে গিয়ে ৩০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে বলে জানান পরিবারের সদস্যরা।
এদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত ১৪ দিনে (৭ থেকে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত) নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়ে ঢাকা শিশু হাসপাতালে ৮৬ শিশু ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে গত ৭ ডিসেম্বর থেকে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভর্তি হয় ৪৮ জন। আর ১৪ ডিসেম্বর থেকে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভর্তি হয়েছে আরও ৩৮ শিশু।
এ বিষয়ে শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. সৈয়দ সফি আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পেলে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা বৃদ্ধি পায়। এ সময়ে কুয়াশা ও ধুলাবালির কারণে এসব সমস্যা বৃদ্ধি পায়। আমাদের বহির্বিভাগে যারা চিকিৎসার জন্য আসছে তাদের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশই ঠান্ডাজনিত সমস্যা নিয়ে আসে। এর মধ্যে নিউমোনিয়া, সাধারণ সর্দি-কাশি, ব্রংকাইটিস এবং ডায়েরিয়ার রোগী আছে। গত এক সপ্তাহে নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে।
তিনি বলেন, এই সময়ে যদি জ্বর কিংবা সর্দি হয় তাহলে প্রাথমিকভাবে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। আর যদি শ্বাসকষ্ট বা অসুস্থতা বৃদ্ধি পায় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ঠান্ডাজনিত সমস্যায় আক্রান্তদের মধ্যে ১০ থেকে ১২ শতাংশ রোগী নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। এর মধ্যে ব্রংকাইটিসও আছে, অ্যাজমাও আছে। এই সময়ে সাধারণত এসব রোগ বৃদ্ধি পায়।
শীতে ঠান্ডাজনিত রোগ থেকে বাঁচার প্রতিকার জানতে চাইলে সফি আহমেদ বলেন, এই সময়ে শিশুদের ভালোভাবে যত্ন নিতে হবে। তাদের যেন ঠান্ডা না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। শিশুদের গরম খাবার খাওয়াতে করতে হবে। আর যদি শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা বৃদ্ধি পায় অবশ্যই হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে।
এমএইচএম/ইএ/এএসএম