শ্বাসকষ্ট রয়েছে এমন শিশুদের করোনার টিকা দেওয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন চিকিৎসকরা। কারণ পাঁচ বছর বয়সী এ ধরনের শিশুরা করোনায় আক্রান্ত হলে তাদের হাসপাতালে ভর্তির ঝুঁকি ৬ গুণ বেশি বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
Advertisement
৭৫ হাজার স্কুলগামী শিশুর ওপর একটি গবেষণায় দেখা গেছে, স্কটল্যান্ডে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভোগা প্রতি ১ লাখ শিশুর মধ্যে কমপক্ষে ৫৪৮ জনকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। যাদের শ্বাসকষ্ট নেই, তাদের মধ্যে এই সংখ্যা প্রতি ১ লাখে মাত্র ৫৫ জন। কোভিড ঝুঁকি বাড়ায় এমন অন্যান্য কারণ বিবেচনায় নিয়ে পরিসংখ্যানগুলোর মধ্যে সামঞ্জস্য করার পর গবেষকরা জানিয়েছেন, এ ধরনের শিশুদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সম্ভাবনা ছয় গুণ বেশি।
এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দল জানায়, শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত পাঁচ বছর বয়সী বা তার বেশি ১ লাখের বেশি শিশুকে টিকার আওতায় আনা উচিত।
বর্তমানে, ১২ বছরের নিচের শিশুদের টিকা দেওয়ার বিষয়টি অনেক দেশেই অনুমোদন দেওয়া হয়নি। এমনকি তাদের অনেক বেশি শ্বাসকষ্ট থাকলেও টিকা দেওয়া হচ্ছে না। যেসব শিশুদের শ্বাসকষ্ট রয়েছে তাদের বিষয়ে ১০ জন টীকা বিষয়ক পরামর্শকের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এসব পরামর্শক এ ধরনের শিশুদের টিকার অনুমোদনের বিষয়ে জোরালো সমর্থন জানিয়েছেন।
Advertisement
যুক্তরাজ্যের শিশুদের শ্বাসকষ্টে ভোগার বিষয়টি অনেকটা সাধারণ ব্যাপার। সেখানে ১১ লাখ শিশু শ্বাসকষ্টে ভুগছে। যুক্ত্ররাষ্ট্রে এই সংখ্যা ৬৮ লাখ। করোনার মতো অন্যান্য ভাইরাসের কারণে শ্বাসযন্ত্রের এই সমস্যা আরও খারাপের দিকে যেতে পারে।
করোনা মহামারির প্রথম ১৫ মাসে এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা স্কটল্যান্ডের ৫-১৭ বছর বয়সী ৭৫ হাজার শিশুকে পরীক্ষানিরীক্ষা করেছেন। তারা দেখেছেন যে, যাদের অতিমাত্রায় শ্বাসকষ্ট রয়েছে তাদের এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর হাসপাতালে ভর্তির ঝুঁকি ৬ গুণ বেশি।
তারা দেখেছেন, ১ লাখ শিশুর মধ্যে ৫৪৮ জন ফুসফুসের সমস্যায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। আর তুলনামূলকভাবে যাদের শ্বাসকষ্ট নেই তাদের সংখ্যা ১ লাখ শিশুর মধ্যে ৫৫ জন। শ্বাসকষ্ট্র নিয়ন্ত্রণে থাকা ১ লাখ শিশুর মধ্যে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা ৯৪। গত দুই বছরে শিশুদের মধ্যে যারা শ্বাসকষ্টে একবার স্টেরয়েড ব্যবহার করেছে, তাদের করোনাতে আক্রান্ত হলে হাসপাতালে ভর্তির উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে (১ লাখে এই সংখ্যা ৯৪) এবং গত দুই বছরে দুইবার স্টেরয়েড ব্যবহার করে থাকলে (এই সংখ্যা ১ লাখে ২৩১)। শ্বাসকষ্ট নেই এমন শিশুদের তুলনায় তাদের ঝুঁকি তিন গুণ বেশি।
২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের জুলাই পর্যন্ত ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে যারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে তাদের তথ্য ব্যবহার করেছেন গবেষকরা। শ্বাসকষ্ট নিয়ন্ত্রণে নেই এমন শিশুদের করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির ক্ষেত্রে ঝুঁকি কেমন তা জানার জন্য ভ্যাকসিনেশন ও ইমিউনাইজেশনের কমিটির যৌথ উদ্যোগে এই গবেষণা পরিচালিত হয়।
Advertisement
যুক্তরাজ্যে স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের শতকরা ১০ ভাগের করোনা শনাক্ত হয়েছে বলে জানা যায়। গবেষকরা বলছেন, শিশুদের টিকা দেওয়ার ঝুঁকি এবং সুবিধা সম্পর্কে অনিশ্চয়তার পাশাপাশি সীমিত আকারে ভ্যাকসিন সরবরাহ নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।
কারণ টিকা গ্রহণকারীদের মধ্যে কারা এর সুফল ভোগ করছে তা জানাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তারা বলছেন, শনাক্ত এবং ও ঝুঁকিতে থাকা লোকজনকে টিকার আওতায় আনা স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতি কমিয়ে আনা এবং ভাইরাস সংক্রমণ কমিয়ে আনতে সহায়তা করবে। ৭ লাখ ৫২ হাজার ৮৬৭ জন শিশুর মধ্যে এই গবেষণা চালানো হয় যাদের মধ্যে ৬৩ হাজার ৪৬৩ জনেরই শ্বাসকষ্ট রয়েছে। অর্থাৎ এই হার ৮ দশমিক ৪ শতাংশ।
খায়রুন নাহার/টিটিএন/জিকেএস