দেশজুড়ে

ভাইরাল সেই শৌচাগারের নামফলক উধাও, দুর্নীতি হয়নি দাবি ইউএনও’র

তিন দিকে তোলা হয়েছে দেয়াল, তা পূর্ণবয়স্ক মানুষের বড় জোর কোমর পর্যন্ত হবে। ভেতরে দুটি ইটের স্লাব। একদিকে রাখা হয়েছে দরজা। উপরে পুরোটাই ফাঁকা। নেই কোনো পানির ব্যবস্থাও।

Advertisement

এটি একটি গণশৌচাগারের দৃশ্য। যেটি গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর রাতইল ইউনিয়নে ‘মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে’ কিছুদিন আগে নির্মাণ করা হয়েছে।

বলতে পারেন, গণশৌচাগারের এমন বেহাল দশা দেশের অনেক জায়গাতেই আছে। সেই অর্থে এটা হয়তো নতুন কিছু নয়। তবে শৌচাগারের পাশের নামফলকটি চোখ পড়লেই চমকে উঠবেন যে কেউ!

সমালোচনার মুখে রাতের আঁধারে ভেঙে ফেলা হয় নামফলকটি। ছবি: সংগৃহীত

Advertisement

কারণ উপরে বর্ণিত এই শৌচাগারটি নির্মাণে খরচ হয়েছে প্রায় ৬৬ হাজার টাকা। লোকাল গভর্ন্যান্স সাপোর্ট প্রজেক্ট-৩ (এলজিএসপি) এর আওতায় এটি নির্মাণ করা হয়েছে। যদিও স্থানীয়রা বলছেন, যে কাজ করে শৌচাগারটি নির্মাণ করা হয়েছে, তাতে বড় জোর ৮-১০ হাজার টাকা ব্যয় হতে পারে।

শৌচাগার যেমন-তেমন হলেও নামফলক থেকে বাদ যায়নি প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কারও নাম। সেখানে লেখা হয়েছে, প্রকল্পের সভাপতি মো. আনিচুর জামান মুন্না এবং বাস্তবায়নে বি এম হারুন অর রশিদ পিনু।

খোঁজ নিয়ে তাদের দুজনের পরিচয় মিলেছে। ভাইরাল হওয়া এই শৌচাগার প্রকল্পের সভাপতি মুন্না ৬নং রাতইল ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার। আর প্রকল্প বাস্তবায়নকারী হারুন অর রশিদ পিনু ওই ইউনিয়নেরই চেয়ারম্যান এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন কমিটির সহ-সভাপতি।

নামফলকটি ভেঙে ফেলার আগে তোলা ছবি/সংগৃহীত

Advertisement

জানা গেছে, শনিবার (১৮ ডিসেম্বর) সকালে ‘পরশ উজির’ নামে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী তার আইডিতে ওই শৌচাগার ও তার পাশের নামফলকের ছবিটি শেয়ার করেন। মুহূর্তেই তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। সমালোচনার মুখে শনিবার রাতেই শৌচাগারের পাশের নামফলক ভেঙে ফেলা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার রাতইল ইটভাটা এলাকায় ২০২০-২১ অর্থবছরে ‘মুজিব শতবর্ষ’ উপলক্ষে যাত্রীদের জন্য একটি শৌচাগার নির্মাণ করা হয়। এ কাজে বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ ৬৫ হাজার ৮৬৭ টাকা। প্রকল্পের সভাপতি আনিচুর জামান মুন্না। বাস্তবায়নে হারুন অর রশিদ পিনু।

ফেসবুকে প্রথম ছবিটি পোস্ট করা পরশ উজির একজন সাংবাদিক। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে যাত্রীদের জন্য নির্মাণ করা শৌচাগারটি অসম্পূর্ণভাবে করা হয়, যা সাধারণ মানুষ ও যাত্রীদের কোনো কাজেই আসছে না। বরাদ্দকৃত অর্থের মধ্যে এ কাজে সর্বসাকুল্যে ৮-১০ হাজার টাকা ব্যয় হতে পারে। প্রকল্পের অর্থ উত্তোলন করা হলে বাকি টাকা লুটপাট করা হয়েছে। তবে এ কাজের বিল উত্তোলন করা হোক বা না হোক কাজটি দেখতে দৃষ্টিকটু, হাস্যরসের পাশাপাশি সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।’

জানতে চাইলে প্রকল্পের সভাপতি ও রাতইল ইউপি মেম্বার আনিচুর জামান মুন্না জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রকল্পের এই কাজে আমি কাগজ-কলমে নামমাত্র সভাপতি। সঠিকভাবে কিছুই জানা নেই। তবে আমার ধারণা এ প্রকল্পের কাজে চেয়ারম্যান সাহেব কোনো অর্থ উত্তোলন করেননি।’

প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা ৬নং রাতইল ইউনিয়ন(ইউপি) পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বি এম হারুন অর রশিদ পিনুর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।

কাশিয়ানী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সুব্রত ঠাকুরের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি। তাকে এসএমএস পাঠানো হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।

তবে শৌচাগার নির্মাণে কোনো দুর্নীতির সুযোগ নেই বলে দাবি করেছেন কাশিয়ানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রথীন্দ্র নাথ রায়।

ইউএনও জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনায় আসার পরে খোঁজ-খবর নেওয়া হয়েছে। এই কাজে অর্থ আত্মসাতের সুযোগ নেই। কাজ না দেখে অর্থছাড় করা হয় না। নির্মাণ করা শৌচাগারের কোনো বিলও এখন ছাড়া হয়নি।’

এন কে বি নয়ন/এএএইচ