ধর্ম

যেভাবে ‘অনুতপ্ত’ হওয়াকে তাওবাহ বলেছেন নবিজী (সা.)

রূহ কণ্ঠাগত না হওয়া পর্যন্ত অর্থাৎ মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা মানুষের তাওবাহ কবুল করবেন। কিন্তু এই তাওবাহ কী? তাওবাহ বলতে প্রিয় নবি কী বুঝিয়েছেন?

Advertisement

তাওবাহ কী?

তাওবাহ হচ্ছে কোনো অন্যায় বা গুনাহ করে ফেললে আল্লাহর কাছে অনুতপ্ত হওয়া। ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাওয়া। হাদিসে পাকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমনটিই ঘোষণ দেন-

হজরত ইবনে মাকিল রাদিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন, আমি আমার বাবার সঙ্গে হজরত আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে উপস্থিত হলাম। আমি তাকে বলতে শুনলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘অনুতপ্ত হওয়াই তওবাহ’’। আমার পিতা তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন, আপনি নিজে কি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছেন যে, ‘অনুতপ্ত হওয়াই তওবা’? তিনি বলেন, ‘হ্যা’।’ (ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমাদ)

Advertisement

মানুষকে তাওবাহ করার প্রতি উৎসাহ দিতে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গুনাহকারীদের প্রতি চমৎকার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন যারা গুনাহ করে এরপর তাওবাহ করে তারাই উত্তম। হাদিসে এসেছে-

১. হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘প্রত্যেক আদম সন্তানই গুনাহগার। আর গুনাহগারদের মধ্যে তওবাকারীরাই উত্তম।’ (ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মুসনাদে আহামাদ)

২. হজরত আবু উবায়দা ইবনে আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর বাবার সূত্রে বর্ণনা করেছেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

التَّائِبُ مِنَ الذَّنْبِ كَمَنْ لاَ ذَنْبَ لَهُ

Advertisement

‘গুনাহ থেকে তাওবাহকারী হচ্ছে সেই ব্যক্তির মতো; যার কোনো পাপই নেই। অর্থাৎ তওবাকারী নিষ্পাপ ব্যক্তিতুল্য।’ (ইবনু মাজাহ)

মনে রাখতে হবে

তাওবাহকারীকে আল্লাহ তাআলা অনেক বেশি ভালোবাসেন। কারণ তিনি কোরআনে পাকের সুরা বাকারার ২২২নং আয়াতে ঘোষণা করেছেন- اِنَّ اللّٰهَ یُحِبُّ التَّوَّابِیۡنَ

‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তাওবাহকারীকে ভালোবাসেন।’

আর তাওবাহকারী বান্দার প্রতি আল্লাহর আনন্দ ও ভালোবাসার ধরণ এভাবে তুলে ধরেছেন প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-

হজরত আবু সাঈদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কোনো বান্দা বিজন প্রান্তরে তার বাহনের উট হারিয়ে ফেললো, এরপর তার অনুসন্ধান করতে করতে শেষে নিরাশ ও অবসন্ন হয়ে তার কাপড় মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লো। এ অবস্থায় হঠাৎ সে তার হারিয়ে যাওয়া বাহনের আওয়াজ শুনতে পেয়ে নিজের মুখমন্ডল থেকে তার কাপড় সরিয়ে তার উট তার সামনে উপস্থিত দেখতে পেয়ে যতো আনন্দিত হয়; আল্লাহ তাঁর বান্দার তওবায় তারচেয়েও বেশি আনন্দিত হন।’ (ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমাদ)

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, গুনাহ করলেই সঙ্গে সঙ্গে এর জন্য অনুতপ্ত হওয়া। আর গুনাহ না করার দৃঢ় সংকল্প করা। কেননা আল্লাহ তাআলা অনুতপ্ত হওয়া বান্দাকে, তাওবাহকারী বান্দাকে অনেক ভালোবাসেন। তাওবাহ করলে মহান আল্লাহ ওই বান্দার প্রতি অনেক আনন্দিত হন।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বেশি বেশি তাওবাহ করার তাওফিক দান করুন। গুনাহ থেকে অনুতপ্ত হৃদয়ে ফিরে আসার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এএসএম