দেশজুড়ে

১২ শহীদের স্মৃতিস্তম্ভ স্মরণ করেনি কেউ

বিজয়ের ৫০ বছরে যখন সারাদেশ বিজয় উল্লাসে মাতোয়ারা ঠিক তখন গাইবান্ধার সাঘাটায় মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক ত্রিমোহনীঘাটে ১২ শহীদের গণকবর ও শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে দেওয়া হয়নি ফুলেল শ্রদ্ধা। ওড়ানো হয়নি জাতীয় পতাকা। আলোকসজ্জাতো দূরের কথা গণকবরের আশপাশ যেন গোবর শুকানোর স্থান ও ময়লার ভাগাড়।

Advertisement

স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানানোর আশ্বাস দিলেও এমন ঘটনার জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরই দায়ী করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার বোনারপাড়া ইউনিয়নের দলদলিয়া গ্রামের আলাই নদীর তীরে পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে নিহত ১২ শহীদের গণকবর ও স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে। যে দেশের জন্য ১২ বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হলেন সেই শহীদদের কবরে জোটেনি একটু শ্রদ্ধা। কেউ করেনি স্মরণ।

দলদলিয়া গ্রামের ঝর্না রানী জাগো নিউজকে বলেন, আমিই এই স্মৃতিস্তম্ভ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে থাকি। মনে আশা ছিল ১৬ ডিসেম্বর এখানে শ্রদ্ধা জানাতে কেউ না কেউ আসবে, কিন্তু কেউ আসেনি।

Advertisement

স্থানীয় কৃষক জাহিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, মহান বিজয়ের ৫০ বছরে যখন আনন্দে মাতোয়ারা দেশ, তখন আমাদের এই ১২ শহীদের কথা কেউ মনে রাখেনি।

দলদলিয়া গ্রামের কমল চন্দ্র রায় বলেন, আমরা ১৬ ডিসেম্বর সকাল থেকে অপেক্ষায় ছিলাম কেউ না কেউ এখানে শ্রদ্ধা জানাতে আসবেন। কিন্তু কেউ আসেনি। ১৭ ডিসেম্বরও সারাদিন কেউ আসেনি শ্রদ্ধা জানাতে।

বোনারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সুবাস চন্দ্র জাগো নিউজকে বলেন, ১৬ ডিসেম্বরের ওই স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা জানানো এবং জাতীয় পতাকা উত্তলোন আমাদের উচিৎ ছিল। কিন্তু কেন যেন এবছর এই ১২ শহীদের কবরে শ্রদ্ধা জানানো হলো না। সাঘাটা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক তথ্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মহবুবুর রহমান (মহব্বত) জাগো নিউজকে বলেন, গাইবান্ধা জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে দলদলিয়া ত্রিমোহনী ঘাটটি স্বাধীনতার স্মৃতি বহন করছেন। এই স্থানে ১২ জন শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধার কবর আছে। ১৬ ডিসেম্বর শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা জানানো দরকার ছিল। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ায় এখন দায়িত্বে আছেন ইউএনও। আমি বিষয়টি তাকে জানাবো যেন এরকম ভুল আর কখনো না হয়।

নিজের দোষ স্বীকার করে তিনি জানান, জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বী মিয়া দেশে থাকলে এমনটি হতো না। কারণ তিনি নিজ তহবিল থেকে এই জায়গা কিনেছেন। সরকারিভাবে এই শহীদ মিনার ও শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ তৈরিসহ যোগাযোগ ব্যবস্থা পাকা করেছেন। তিনি বিদেশে চিকিৎসাধীন থাকায় আমরা এই স্থানটি মনে রাখতে পারিনি।

Advertisement

এ বিষয়ে সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরদার মোস্তফা শাহিন জাগো নিউজকে বলেন, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কেউ যদি আমাকে ওই স্থানে ফুল দেয়া বা পতাকা ওড়ানোর বিষয়ে পরামর্শ দিতো তাহলে অবশ্যই আমরা সেখানে ফুল দিতে যেতাম। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের কেউ এই বিষয়ে আমাকে কিছুই বলেনি। এজন্যই আসলে যাওয়া হয়নি।

গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার বোনারপাড়া ইউনিয়নের দলদলিয়া গ্রামের বাঙালি নদীর ত্রিমোহনী ঘাট এলাকায় ১৯৭১ সালে সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হন ১২ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা। সেই সময় তাদেরকে একটি গণকবরে সমাহিত করা হয়। ওই শহীদের স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখতে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বী মিয়া এমপি ও গাইবান্ধা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত মনিরুল হক জুবেল নিজ তহবিল থেকে ২১ শতক জমি কেনেন।

পরে ডেপুটি স্পিকার ২০১৯ সালের ১২ জানুয়ারি প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে ‘মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক স্থানসমুহ সংরক্ষণ ও মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় বোনারপাড়া ইউনিয়নের দলদলিয়া গ্রামের বাঙালি নদীর ত্রিমোহনী ঘাটে গণকবরগুলো পাকাকরণ, স্বাধীনতার স্মৃতিস্তম্ভ ও শহীদ মিনার নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন এই স্থানে সম্মুখযুদ্ধে নিহত হন, ফুলছড়ি উপজেলার শহীদ শহিদুল্লাহ, শহীদ হাবিবুর রহমান, সাঘাটা উপজেলার শহীদ আনছার আলী, শহীদ আব্দুল হাই, গাইবান্ধা সদরের শহীদ হামিদুর রহমান মধু, পাবনা সদরের শহীদ হাবিবুর রহমান, লালমনিরহাট জেলার হাতিবান্ধা উপজেলার শহীদ আব্দুল হাই, শহীদ আহম্মদ আলী, শহীদ বোচারাম দাস, শহীদ জনজয় দাস, শহীদ প্রভাত চন্দ্র ও শহীদ ভারত চন্দ্র।

জাহিদ খন্দকার/এফএ/এমএস