উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতার আসনে ১০ বছর ধরে বসে আছেন কিম জং উন। ২৭ বছর বয়সে দেশের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন তিনি। এই সময়ের মধ্যে বহুবার খবরের শিরোনাম হয়েছেন। কখনও আলোচিত, কখনও সমালোচিত, কখনও বা জনপ্রিয়তার শীর্ষে থেকেছেন কিম। আসলেই কি তার নেতৃত্ব চমকপ্রদ নাকি অন্য কোনো কঠিন বাস্তবতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তার দেশ সেটি ভিন্ন প্রসঙ্গ। তবে উত্তরসূরীদের কাছ থেকে ক্ষমতার আসন পেলেও নিজেই এখন অন্যভাবে চিনিয়েছেন বিশ্বকে।
Advertisement
২০১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে কিম জং উনের বাবা কিম জং ইলের মৃত্যুর খবর ঘোষণা করা হয়। মৃত্যুকালে কিম জং ইলের বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর। এরপর বাবা কিম জং ইলের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার পর ২৮ ডিসেম্বর নিজেকে উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে ঘোষণা করেন কিম জং উন।
কিম জং উন ইল সাং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে এবং সেনা কর্মকর্তা হিসেবে কিম ইল সাং সামরিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুটি ডিগ্রি নিয়েছেন। নতুন একজন অল্প বয়সী নেতা যিনি স্কিইং ও বাস্কেটবল খেলতে ভালোবাসেন, রাতারাতিই হয়ে গেলেন উত্তর কোরিয়ার চেঞ্জ মেকার।
কিম জং উন ক্ষমতায় বসার পর অনেকে ধারণা করেন যে, সামরিক বাহিনী হয়তো শাসন করবে দেশ। তরুণ একনায়ককে কিছুটা হলেও অবমূল্যায়ন করেছিল বিশ্বের অনেকেই। কিন্তু অল্প বয়সী হয়েও কিম জং উন নিজের আসন পাকাপোক্ত করেছেন। শুধু তাই নয় ‘কিম জং ইউনিজম’ এর ধারা সূচনা করেছেন।
Advertisement
অভিযোগ আছে, শুরু থেকেই কিম জং উন তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের নির্মূল করার চেষ্টা অব্যাহত রাখেন এবং শতাধিক মৃত্যুদণ্ড দিয়ে শুরু করেছিলেন দেশ শাসন। এরপর নজর দেন বর্হিবিশ্বে। চারটি পারমাণবিক পরীক্ষা, একশটি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা এবং বহুবার হুমকি-ধামকির পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কিম জং উনের আলোচনা এখন কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
কিন্তু পারমাণবিক অস্ত্রের জন্য বহু অর্থ ব্যয় করা তার নেশায় পরিণত হয়। তবে এর খেসারত দিতে হয় দেশবাসীকেই। গভীর আর্থিক সংকটে পড়েছে উত্তর কোরিয়ার অর্থনীতি। তার ক্ষমতাগ্রহণের পর থেকে দেশ আরও বেশি দারিদ্র্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং নিষেধাজ্ঞার কারণে অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েছে।
করোনা মোকাবিলায় কিম জং উন ২০২০ সালের জানুয়ারিতে চীনের সঙ্গে সীমান্ত নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তবে এতে শুধু মানুষ নয়, বাণিজ্যেও নিষেধাজ্ঞা আনা হয়। ফলে খাদ্য ও গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ সংকট প্রকট হয় দেশটিতে। যেখানে দেশটির ৮০ শতাংশের বেশি বাণিজ্যিক লেনদেন হয় চীনের সঙ্গে।
কিমের সরকারের দাবি, করোনা মহামারি মোকাবিলায় সাফল্য লাভ করেছে তারা। নানা সংকটের মধ্য দিয়ে গেলেও কিম জং উন মাথা নত করতে নারাজ। বিদেশি শক্তির কূটনৈতিক জালে আটকা পড়েন না কিম, যদিও নিজ দেশের মানুষের তার বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ আছে।
Advertisement
সব সময় নিজেকে নিয়ে রহস্যময় কাণ্ড ঘটান কিম জং উন। মাঝে মাঝে উধাও হয়ে যান। ফলে তাকে নিয়ে বৈচিত্র্য খবরও চাওড় হয় বিশ্বজুড়ে। ভিন্নমতাবলম্বী ও দলত্যাগকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হলেও কিম জং উন তার বাবার চেয়েও বন্ধুসুলভ এবং স্মার্ট। তার হেয়ারস্টাইলের জন্যও ব্যতিক্রমী নেতা হিসেবে পরিচিতি তিনি, যা তরুণদের আকৃষ্ট করে। কিম জং উন ২০১২ সালে রি সোল-জু নামে এক তরুণীকে বিয়ে করেন।
সূত্র: বিবিসি, সিএনএন
এসএনআর/এমএস