দেশপ্রেমের বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার কৃষক রোমান আলী শাহ। নিজের খামারবাড়িতে সবুজ ঘাসে ফুটিয়ে তুলেছেন জাতীয় স্মৃতিসৌধ, বাংলাদেশের মানচিত্র ও জাতীয় পতাকা। আর এর ওপরেই লাল রঙে লেখা ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’। তার এই সৃষ্টিশীল শিল্পকর্ম দেখতে স্থানীয়সহ আশপাশের লোকজন ছুটে আসছেন তার ‘কৃষিক্লাব’ নামের খামার বাড়িতে। মুগ্ধ হয়ে অনেকে ছবি তুলছেন।
Advertisement
কুলিয়ারচর উপজেলার গোবরিয়া আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়নের জাফরাবাদ গ্রামের মো. জিন্নত আলীর ছেলে রোমান আলী। তিনি ২০০২ সালে সোয়া এক একর পৈতৃক জমিতে ‘কৃষিক্লাব’ নামের একটি খামারবাড়ি গড়ে তোলেন। এখানে তিনি ফল, মাছ ও ঘাস চাষ এবং গরু-ছাগল ও কবুতর লালন-পালনসহ বিভিন্ন কৃষি উপকরণ ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করেন।
কুষক রোমান শাহ আলী তার খামারবাড়ির এক পাশে ছয় শতক জমির ওপর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সবুজ ঘাসের বেষ্টনী দিয়ে তৈরি করেছেন জাতীয় স্মৃতি সৌধ, বাংলাদেশের মানচিত্র, জাতীয় পতাকা। এঁকেছেন কৃষিক্লাব, জাতীয় সংগীতের প্রথম দুই লাইন, কৃষি নিয়ে একটি স্লোগান আর মহান বিজয় দিবস কথাটি।
এর আগে শহীদ ও স্বাধীনতা দিবসে পালং আর লাল শাক রোপণের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানচিত্র, প্রতীক নৌকা, শহীদ মিনার ফুটিয়ে তুলেছিলেন এই কৃষক। তার এই অনবদ্য শিল্পকর্ম দেখে মুগ্ধ দর্শনার্থীরা।
Advertisement
উপজেলার বাজরা এলাকার ব্যবসায়ী মো. দেলোয়ার হোসেন লিটন বলেন, কৃষক রোমান আলীর এই দেশাত্মবোধক শিল্পকর্ম দেখে আমি অভিভূত। তার মতো এমন দেশপ্রেমিক কৃষকদের খোঁজে বের করে আর্থিক সহায়তাসহ বিশেষ সম্মাননায় ভূষিত করা উচিত বলে মনে করছি। তাহলে দেশকে নিয়ে সাধারণ পর্যায়ে আরও ভিন্ন ভিন্ন ভাবনার লোকজন তৈরি হবে।
কৃষক রোমান আলী শাহ জাগো নিউজকে বলেন, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে বিভিন্ন দিবসগুলোতে তিনি এসব শিল্পকর্ম তৈরি করেন। আগের অন্যান্য দিবসগুলোতে শাকসবজি দিয়ে এসব শিল্পকর্ম তৈরি করলেও এবার ঘাস দিয়ে তৈরি করেছেন। শাকসবজির তৈরি করা শিল্পকর্মগুলো বৃষ্টি হলে নষ্ট হয়ে যায় বলে এবার ঘাসকে বেছে নিয়েছেন।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে এবারের তৈরি করা উপকরণগুলো তৈরিতে কৃষক রোমান আলীর সময় লেগেছে আট মাস। আর নতুন প্রজন্মের মাঝে দেশপ্রেম জাগিয়ে তোলাই ছিল তার উদ্দেশ্য। শ্রমের মূল্যায়ন হিসেবে সরকারিভাবে স্বীকৃতিসহ পুরস্কার দাবি করেন এই কৃষক।
কুলিয়ারচর উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আক্রাম হোসেন বলেন, অন্যান্য কৃষক আর রোমান আলী শাহর মধ্যে পার্থক্য হলো সাধারণ কৃষকরা শুধু অর্থনৈতিক লাভ চান আর রোমান আলী শাহ লাভের পাশাপাশি দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে বিভিন্ন শিল্পকর্ম তৈরি করেন। যা মানুষকে বিনোদনসহ দেশের প্রতি মমত্ববোধ তৈরি করে।
Advertisement
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবাইয়াত ফেরদৌসী বলেন, রোমান আলী শাহ একজন সফল ও প্রকৃত দেশপ্রেমিক কৃষক। কৃষক ফসল ফলাবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু রোমান আলী শাহ প্রতি বছর প্রতিটি জাতীয় দিবসে নিজস্ব উৎপাদন দিয়ে যেভাবে বিভিন্ন জিনিস তৈরি করেন, এতে তার দেশপ্রেম ও দেশের প্রতিটি মমত্ববোধই ফুটে ওঠে। এসআর/এএসএম