দেশজুড়ে

সবচেয়ে বেশি বীর মুক্তিযোদ্ধার বাস যে ইউনিয়নে

ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নে ৬ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় প্রায় ১০ হাজার ২০৪ জন লোকের বাস। মোট ৯টি গ্রাম নিয়ে ডুমাইন ইউনিয়নটি গঠিত। আরও এই ইউনিয়নেই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বসবাস।

Advertisement

ইউনিয়নটিতে ১২১ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। যা দেশের সর্বোচ্চ। আর কোনো ইউনিয়নে একত্রে এত সংখ্যক বীর মুক্তিযোদ্ধা নেই। তাই দেশের বিভিন্ন স্থানে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ইউনিয়ন হিসেবে রয়েছে সুখ্যাতি, রয়েছে আলাদা পরিচিতি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৭১ সালে যখন পাক-হানাদার বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বাংলার আনাচে-কানাচে। নির্বিচারে নিরীহ বাঙালির বুকে চালাচ্ছিল গুলি, ঠিক তখনই বাংলার অন্য সকল বীর সন্তানদের মতো এই ডুমাইন ইউনিয়নের যুবসমাজও সেদিন জেগে উঠেছিল দেশ স্বাধীনের স্বপ্নে।

ডুমাইন গ্রামের ২২ বছরের যুবক মহসিন আলম বাচ্চুর নেতৃত্বে ১৫ জন যুবক ভারতে গিয়ে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেন। এরপর ফিরে এসে গ্রামের প্রায় ৪০-৪৫ জন যুবককে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দেন। তারপর একত্রে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধে। তারা ৮ নম্বর সেক্টরে অংশগ্রহণ করেন। এ সময় তাদের মধ্যে ৮ জন বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধে অংশ নিয়ে শহীদ হন।

Advertisement

ইউনিয়নে বীর মুক্তিযোদ্ধা থেকে শুরু করে সুনামধন্য ডাক্তার, মেরিন ইঞ্জিনিয়ার, বিসিএস ক্যডার, উকিল, জজ, সাংবাদিক, রিপোর্টারসহ প্রায় সব ধরনের পেশাজীবী ও রাজনৈতিক নেতা রয়েছেন। এছাড়া রাজাকারমুক্ত ইউনিয়নটিতে আছেন একজন বীর প্রতীক শেখ আজিজুর রহমান, দুইজন যুদ্ধকালীন কমান্ডার মহসিন আলম বাচ্চু ও মৃত নজরুল ইসলাম।

শিধলাজুড়ী, কৃষ্ণনগর, জিনিষনগর, তারাপুর, জাননগর, ডুমাইন, নিশ্চিন্তপুর, লক্ষ্মীপুর, ভেল্লাকান্দী নামের নয়টি গ্রামের ১২১ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে শুধু ডুমাইন গ্রামেই ৮৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার বসবাস।

এ ব্যাপারে ডুমাইন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. খুরশীদ আলম মাসুম জাগো নিউজকে বলেন, ইউনিয়নটি সারাদেশের মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ইউনিয়ন হিসেবে পরিচিতি। আমার পরিবারেও কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। এই ইউনিয়নের একজন চেয়ারম্যান হিসেবে নিজেকে গর্বিত মনে হয়।

মুক্তিযুদ্ধকালীন সহকারী কমান্ডার ও মধুখালী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের বর্তমান কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. খুরশিদ আলম জাগো নিউজকে বলেন, আমার জনামতে দেশের অন্য কোনো গ্রাম ও ইউনিয়নে এত সংখ্যক বীর মুক্তিযোদ্ধা নেই। এ কারণে ফরিদপুর জেলা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে ইউনিয়নটির আলাদা সুখ্যাতি আছে।

Advertisement

তৎকালীন যুদ্ধকালীন কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মহসিন আলম বাচ্চু জাগো নিউজকে বলেন, ডুমাইন ইউনিয়নে ১২১ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। একটি ইউনিয়নে এতো সংখ্যক বীর মুক্তিযোদ্ধা দেশের কোনো ইউনিয়নে আছে বলে জানা নেই। আর এর থেকে বড় অর্জন একটি ইউনিয়নের জন্য কী হতে পারে। আমরা সত্যিই ধন্য এই রকম একটা ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করে।

ফরিদপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সদ্য সাবেক কমান্ডার আবুল ফয়েজ শাহনেওয়াজ বলেন, জেলার মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধার ইউনিয়ন হিসেবে ডুমাইন উল্লেখযোগ্য। ডুমাইন ইউনিয়ন অথবা গ্রামের নাম শুনলেই যে কেউ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ইউনিয়ন বা গ্রাম হিসেবে চিনে থাকেন।

এফএ/জেআইএম