একান্ত আপনজন থেকে কোনো ঘটনায় চরম দুঃখ-কষ্ট পেলে কী করবেন? নবি ইয়াকুব আলাইহিস সালাম তাঁর ছেলে ইউসুফকে বাঘে খেয়ে ফেলার (মিথ্যা) ঘটনা শুনে চরম কষ্টে কী করেছিলেন? নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার ওপর অপবাদের ঘটনা শুনে মনের গভীর বেদনায় কী করেছিলেন?
Advertisement
আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমের ছোট্ট দুইটি শব্দ ব্যবহার করেছেন। যা গভীর দুঃখ-কষ্ট হজমে করণীয়। তাহলো-
فَصَبۡرٌ جَمِیۡلٌ
‘সুতরাং (করণীয় হলো) সুন্দর ধৈর্য।’
Advertisement
আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে এ প্রসঙ্গে আয়াত নাজিল করেছেন এভাবে-
وَ جَآءُوۡ عَلٰی قَمِیۡصِهٖ بِدَمٍ کَذِبٍ ؕ قَالَ بَلۡ سَوَّلَتۡ لَکُمۡ اَنۡفُسُکُمۡ اَمۡرًا ؕ فَصَبۡرٌ جَمِیۡلٌ ؕ وَ اللّٰهُ الۡمُسۡتَعَانُ عَلٰی مَا تَصِفُوۡنَ
আর তারা তার জামায় মিথ্যা রক্ত লাগিয়ে নিয়ে এসেছিল। সে বলল, ‘বরং তোমাদের নফস তোমাদের জন্য একটি গল্প সাজিয়েছে। সুতরাং (আমার করণীয় হচ্ছে) সুন্দর ধৈর্য। আর তোমরা যা বর্ণনা করছ সে বিষয়ে আল্লাহই সাহায্যস্থল।’ (সুরা ইউসুফ : আয়াত ১৮)
আর তারা তার জামায় মিছেমিছি রক্ত মাখিয়ে নিয়ে এসেছিল। পিতা বলল, ‘না’, বরং তোমাদের প্রবৃত্তি তোমাদেরকে একটা কাহিনী বানাতে উদ্বুদ্ধ করেছে। ঠিক আছে, আমি পুরোপুরি ধৈর্য ধারণ করব, তোমরা যা বানিয়ে বর্ণনা করেছো সে ব্যাপারে আল্লাহই আমার আশ্রয়স্থল।’
Advertisement
ঘটনাটি ছিল এমন
হজরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের ভাইয়েরা তার জামায় কৃত্রিম (বকরির) রক্ত লাগিয়ে এনেছিল, যাতে বাবা (ইয়াকুব আলাইহিস সালামের) মনে বিশ্বাস জন্মাতে পারে যে, বাঘই তাকে খেয়ে ফেলেছে। কিন্তু ইয়াকুব আলাইহিস সালাম ঠিকই বুঝলেন যে, ইউসুফকে বাঘে খায়নি; বরং তোমাদেরই মন একটি বিষয় দাঁড় করেছে। এখন সীমাহীন এ কষ্টের সময় আমার জন্য উত্তম এই যে, ধৈর্য্যধারণ করি এবং তোমরা যা বল, তাতে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করি।’ (তাফসিরে জাকারিয়া)
হজরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম আল্লাহর একজন পয়গাম্বর। ছেলেদের বানানো ঘটনা তিনি বুঝতে পারেন যে, তাঁরা একটি ছাগল ছানা যবেহ করে ইউসুফের জামায় রক্ত লেপন করে নেয় আর এ কথা তাঁরা ভুলে যায় যে-
‘ইউসুফকে যদি বাঘে খেয়ে ফেলতো, তবে অবশ্যই তাঁর জামাও ছিঁড়ে যেত। কিন্তু জামা অক্ষত অবস্থায় ছিল। যা দেখে এবং তার উপর ইউসুফ আলাইহিস সালামের স্বপ্ন এবং নিজ নবুয়তের জ্ঞান দ্বারা অনুমান করে ইয়াকুব আলাইহিস সালাম বললেন, ঘটনা ঐরূপ ঘটেনি, যেরূপ তোমরা বর্ণনা করছ; বরং তোমরা নিজের মন থেকে সাজিয়ে এ কথা বলছ। সুতরাং যা হওয়ার ছিল তা হয়ে গেছে। কিন্তু ইয়াকুব আলাইহিস সালাম ঘটনার আসল রহস্য জানতেন না, ফলে ধৈর্য ছাড়া কোনো অবলম্বন এবং আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কোন উপায় তাঁর ছিল না। (তাফসিরে আহসানুল বয়ান)
ঠিক এমনিভাবেই প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তম ধৈর্যধারন করেছিলেন। মদিনার মুনাফেকরা যখন হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার উপর মিথ্যা অপবাদ আরোপ করে; তখন নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর ব্যাপারে যা বুঝেছিলেন ও বলেছিলেন তার উত্তরে তিনিও বলেছিলেন- ‘আল্লাহর কসম! আমি আমার ও আপনাদের জন্য ইউসুফের আব্বার ঐ উদাহরণই দেখতে পাচ্ছি। সুতরাং ‘আমার পক্ষে পূর্ণ ধৈর্যই শ্রেয়। তোমরা যা বর্ণনা করছ, সে বিষয়ে একমাত্র আল্লাহই আমার সাহায্যস্থল।’’ অর্থাৎ আমারও ধৈর্য ধারণ করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। (তাফসিরে আহসানুল বয়ান)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের করণীয় দুঃখ-কষ্ট যত বড়ই হোক না কেন, আল্লাহর সাহায্য কামনা ও ধৈর্যধারণ করাই সর্বোত্তম কাজ।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে চরম দুঃখ-কষ্ট ও বিপদের সময় আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার জন্য চেষ্টা করা এবং ধৈর্যধারণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এএসএম