কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী শেরপুরে আওয়ামী লীগের ঐক্যবদ্ধ রাজনীতিকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করছেন বলে অভিযোগ করেছে জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। শুক্রবার সকালে শহরের নিপুন কমিউনিটি সেন্টারে নৌকা প্রতিকের প্রার্থীর বিজয় উপলক্ষে আয়োজিত নির্বোচনোত্তর সংবাদ সম্মেলনে তারা এমন অভিযোগ করেন। তারা বলেন, দলীয় নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন এবং নানাভাবে হেনস্থা করাসহ দলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে শেরপুরে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করে চলেছেন তিনি। সদ্য সমাপ্ত পৌর নির্বাচনে শেরপুর পৌরসভায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী যাতে পরাজিত হয় সেজন্য নানা ধরনের কলকাঠি নেড়েছেন। তিনি প্রশাসনকে ব্যবহার করে এখানকার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রকাশ্যে হেনন্থা করিয়েছেন। এ সময় তারা বলেন, এসব বিষয়ে দলীয়ভাবে মতিয়া চৌধুরীর বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব নেয়া হয়েছে এবং দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট লিখিতভাবে বিষয়টি জানানো হবে। সংবাদ সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি হুইপ আতিউর রহমান আতিক, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট চন্দন কুমার পাল, বিজয়ী মেয়র প্রার্থী গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া লিটন বক্তব্য রাখেন। এ সময় দলের জেলা, উপজেলা ও শহর আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।সংবাদ সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি হুইপ আতিক বলেন, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী শেরপুর-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য। কিন্তু তিনি শেরপুর জেলা সদরে আসেন না। শুধু তাই নয়, তিনি নানাভাবে শেরপুরকে উন্নয়ন বঞ্চিত করছেন। তার কারণে পদে পদে আমাদের নানাভাবে বাঁধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, শেরপুর সদরকে বাদ দিয়ে নকলা-নালিতাবাড়ীতে অনেক কৃষি প্রকল্প মতিয়া চৌধুরী কেটে নিয়েছেন। তার কারণে শেরপুরে মেডিকেল কলেজ করা যায়নি। শেরপুর শহরের অষ্টমীতলা বাইপাস সড়ক কেটে নিয়ে শেরপুর বাইপাস সড়ক নামে ৫ কোটি টাকার রাস্তার কাজ তারাকান্দি থেকে গৌড়দ্বার হয়ে নির্মাণ করিয়েছেন। যেখানে মানুষ কেবল ধান শুকায়, গরুর গাড়িও চলেনা। তিনি বলেন, বিদেশে কর্মী পাঠানোর জন্য কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র শেরপুর সদরে নির্মাণের কথা থাকলেও সেটি তিনি নকলার গণপদ্দির বিলে করেছেন। জেলার কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল কেটে নিয়ে নকলায় করেছেন। এভাবে তিনি শেরপুর সদরকে নানাভাবে উন্নয়ন বঞ্চিত করে বৈষম্যমূলক আচরণ করছেন। দলের নেতাকর্মীদের নানাভাবে অবমূল্যায়ন করে চলেছেন। হুইপ আতিক অভিযোগ করে বলেন, এবারের পৌর নির্বাচনে শেরপুর সদরে যাতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিজয়ী হতে না পারে সেজন্য তিনি নানাভাবে চেষ্টা করেছেন। বিভিন্নভাবে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে প্রশাসনের লোক দ্বারা প্রকাশ্যে হয়রানি করা হয়েছে। জেলা আওযামী লীগের সাধারণ সম্পাদক যিনি জজকোর্টের একজন পিপি তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট। অথচ তার গাড়ি থেকে আওয়ামী লীগের স্টিকার খুলে ফেলতে বাধ্য করা হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নাজিমুল হককে নবারুন পাবলিক স্কুল কেন্দ্রে এক পুলিশ কর্মকর্তা বুকে পিস্তল ঠেকিয়ে বলেছেন, তোকে মেরে ফেলবো, তোর কোনো বাবায় ফেরাবে। বিভিন্ন কেন্দ্রে দায়িত্বরত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নানাভাবে হুমকি-ধামকি, নির্যাতন করেছে। এসবই করা হয়েছে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে ফেল করানোর জন্য। কিন্ত আল্লাহর রহমতে সব ষড়যন্ত্রকে ধুলিস্যাৎ করে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্ঠায় নৌকা প্রতীকের বিজয় হয়েছে। আমরা প্রশাসনকে এসব বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তারা বলেছেন, ওপরে নির্দেশে আমরা এটা করেছি। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না ওপরের ওই নির্দেশদাতা হলেন মতিয়া চৌধুরী। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট চন্দন কুমার পাল তার বক্তব্যে বলেন, ব্যক্তি জীবনে সৎ এবং সারাদেশের মানুষ কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীকে ভালো মানুষ জানলেও শেরপুরে আওয়ামী রাজনীতিকে তিনি নানাভাবে কলুষিত করে চলেছেন। তার অসদাচরণ ও বৈষম্যমূলক আচরণের কারণে বাধ্য হয়ে এবার আমরা স্টিয়ারিং কমিটি বসিয়ে তার বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব নিয়েছি। তিনি নকলায় আসলে তার কাছে দেখা করতে গেলে জেলা আওযামী লীগের একজন নেতা হিসেবে চেয়ারে বসতে পর্যন্ত বলেন না। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, আমরাতো উড়ে এসে জুড়ে বসিনি। কিংবা বানের জলে ভেসে আসাম থেকে ব্রহ্মপুত্র নদের ঘাটে এসে পৌঁছিনি। ছাত্র রাজনীতি থেকে শুরু করে সংগঠক হিসেবে আজ এই পর্যায়ে এসেছি। তিনি বারবার আমাদের বিব্রত করছেন। এবারের পৌর নির্বাচনে প্রশাসনকে ব্যবহার করে আমাদের প্রতি অন্যায় আচরণ করেছেন। এজন্য তার বিরুদ্ধে জেলা আওয়ামী লীগ একাট্টা হয়ে নিন্দা প্রস্তাব নিয়ে দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি বলেন, মতিয়া চৌধুরীর কোনো কথা থাকলে তাকে দলীয় ফোরামে এসে কথা বলতে হবে। তিনি প্রেসিডিয়াম সদস্য। তার নির্দেশ আমাদের শিরোধার্য। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রতি কোনো অন্যায় আচরণ এখন থেকে আর সহ্য করা হবেনা। এরপর থেকে সব ষড়যন্ত্রের বিষদাঁত ভাঙা জবাব দেয়া হবে। সংবাদ সম্মেলনে নৌকা প্রতিকের বিজয়ী মেয়র প্রার্থী গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া লিটন বলেন, আমি নির্বাচনের আগে নকলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর বাসায় দোয়া নেয়ার জন্য গিয়েছিলাম। তিনি আমার সঙ্গে প্রচণ্ড খারাপ আচরণ করেছেন। যার কারণে আমি কাঁদতে বাধ্য হয়েছি। তিনি বলেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। আমাকে এভাবে অপমান-অপদস্ত করে তিনি কী লাভ করতে চেয়েছেন জানি না। তবে এ ঘটনা আমি কখনও ভুলবো না। এটা কোনো রাজনীতিকর চরিত্র হতে পারে না।শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ দত্তের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ সাংবাদিকদের মাধ্যমে শেরপুরবাসীকে ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে বিজয়ী করায় তাদের অভিনন্দন জানান। হাকিম বাবুল/এসএস/এমএস
Advertisement